রাফাল চুক্তির পরই ‘তোফা’ অনিল অম্বানীকে, ১১০০ কোটি টাকার কর মকুব!

২০১৫-র এপ্রিলে মনমোহন সিংহ সরকারের ১২৬টি রাফাল কেনার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়ে দাসো-র থেকে ৩৬টি যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:০২
Share:

অনিল অম্বানী।

রাফাল-কাণ্ড যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না নরেন্দ্র মোদী সরকারের!

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফা ভোটগ্রহণের ঠিক আগে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, আদালত রাফাল-চুক্তির ‘চুরি যাওয়া’ নথি খতিয়ে দেখবে। যে নথিতে ছিল, রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দর কষাকষিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর নাক গলিয়েছিল।

এ বার দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণের পাঁচ দিন আগে ফরাসি সংবাদপত্র ‘ল্য মোঁদ’-এর রিপোর্ট জানাল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফ্রান্সের দাসো সংস্থার থেকে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত ঘোষণার কয়েক মাস পরেই ফ্রান্স সরকার অনিল অম্বানীর একটি সংস্থাকে ১৪৩.৭ মিলিয়ন ইউরোর পাওনা কর মকুব করে দিয়েছিল। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ অন্তত ১১০০ কোটি টাকা।

Advertisement

২০১৫-র এপ্রিলে মনমোহন সিংহ সরকারের ১২৬টি রাফাল কেনার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়ে দাসো-র থেকে ৩৬টি যুদ্ধবিমান কেনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন মোদী। ল্য মোঁদ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, তার ছয় মাসের মধ্যেই, অক্টোবরে অনিল অম্বানীর ফরাসি টেলিযোগাযোগ সংস্থা ‘রিলায়্যান্স আটলান্টিক ফ্ল্যাগ ফ্রান্স’ সংস্থাকে ১৪৩.৭ মিলিয়ন ইউরো মকুব করে দেয় ফ্রান্স। সংবাদপত্রটির দাবি, অথচ ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতেই অনিলের সংস্থার বিরুদ্ধে দু’দফায় তদন্ত চালিয়ে থেকে ফ্রান্স সরকার ১৫১ মিলিয়ন ইউরো বকেয়া কর দাবি করেছিল। প্রথমে অনিলের সংস্থা মাত্র ৭.৬ মিলিয়ন ইউরো দিতে চাইলেও তাতে ফ্রান্স সরকার রাজি হয়নি। অথচ পরে তার থেকেও কম অঙ্ক, ৭.৩ মিলিয়ন ইউরোতেই রাজি হয় তারা।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এই তথ্য আজ রাহুল গাঁধীর কংগ্রেসের হাতে ফের নতুন অস্ত্র দিয়েছে। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কি অনিল অম্বানীর ‘মিডল ম্যান’ হিসেবে কাজ করছিলেন? ফ্রান্সের থেকে যুদ্ধবিমান কেনার বিনিময়ে কি অনিল অম্বানীর জন্য এই কর ছাড় আদায় করা হয়েছিল?’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এ বার তো স্পষ্ট যে, এক জন চৌকিদারই চোর। এ হল মোদী-কৃপা! এই জন্যই বলা হচ্ছে, মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়!’’ সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির অভিযোগ, ‘‘মানুষের টাকায় মাত্রাছাড়া দামে রাফাল কেনা হয়েছে। যাতে সেই টাকায় এক জন ব্যবসায়ীর সুবিধা হয়, ফ্রান্স সরকার তাঁর কর মকুব করে দিতে পারে।’’ বিরোধীরা বলছেন, রাফালের সঙ্গে ১১০০ কোটি করছাড়ের ‘পুরস্কার’ পেয়েছেন অনিল! ইয়েচুরির অভিযোগ, ‘‘বায়ুসেনাকে টপকে রাফাল দুর্নীতিতে সরাসরি যুক্ত ছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বেআইনি ভাবে প্যারিসে বসে দর কষাকষি করেছিলেন।’’ সুরজেওয়ালা ও ইয়েচুরি মনে করিয়ে দিয়েছেন, প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ আগেই বলেছেন যে, মোদীই দাবি তুলেছিলেন, রাফাল-চুক্তির বরাত অনিল অম্বানীর সংস্থাকে দিতে হবে।

কর ছাড়ের কথা স্বীকার করেও অনিল অম্বানীর রিলায়্যান্স কমিউনিকেশনস-এর মুখপাত্র জানান, এতে তাঁরা কোনও বাড়তি সুবিধা পাননি। রিলায়্যান্স আটলান্টিক ফ্ল্যাগ ফ্রান্সের ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২০ কোটি টাকা। ফ্রান্সের কর দফতর ১০ বছরের জন্য প্রায় ১১০০ কোটি টাকা দাবি করে। তা বেআইনি। পরে ফ্রান্সের আইন মেনেই ৫৬ কোটিতে রফা হয় বলে দাবি তাঁর।

ফরাসি দূতাবাস রাতে সংবাদ সংস্থাকে জানায়, অনিলের সংস্থাকে করছাড় দেওয়ার ব্যাপারে কোনও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কাজ করেনি। নয়া অভিযোগ নিয়ে বিজেপি মুখ না খুললেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ওই কর মকুবের সঙ্গে রাফাল কেনার সম্পর্ক নেই। কংগ্রেস নেতা সুরজেওয়ালার মন্তব্য, ‘‘এ তো ঠাকুর ঘরে কে, আমি তো কলা খাইনি! প্রতিরক্ষা মন্ত্রক কেন বেসরকারি সংস্থার মুখপাত্র হিসেবে কথা বলছে!’’ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের কটাক্ষ, ‘‘চৌকিদারের বন্ধু সত্যিই ভাগ্যবান!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন