চেনা শৈশবের খোঁজে আবার স্কুলমুখী গাজা

ফের পিঠে উঠল স্কুলব্যাগ। প্রায় মাস দেড়েক পর ফের স্কুলের পোশাকে গাজার রাস্তায় কচিকাঁচারা। আপাতত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। মানুষকে ঢাল বানিয়ে যুদ্ধ করা যে উচিত হয়নি, মেনে নিয়েছে হামাসও। রবিবার গাজার রাস্তায় তাই সেই চেনা ছবি। বছর এগারোর স্কুলপড়ুয়া তামার তৌথা-র চোখমুখে তবু যেন সেই স্বাভাবিক উচ্ছ্বাস নজরে এল না।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

গাজ়া শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৩
Share:

ক্ষতবিক্ষত স্কুলে ফিরল প্রাণ। রবিবার খান ইউনিসে। ছবি: এএফপি

ফের পিঠে উঠল স্কুলব্যাগ। প্রায় মাস দেড়েক পর ফের স্কুলের পোশাকে গাজার রাস্তায় কচিকাঁচারা। আপাতত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। মানুষকে ঢাল বানিয়ে যুদ্ধ করা যে উচিত হয়নি, মেনে নিয়েছে হামাসও। রবিবার গাজার রাস্তায় তাই সেই চেনা ছবি।

Advertisement

বছর এগারোর স্কুলপড়ুয়া তামার তৌথা-র চোখমুখে তবু যেন সেই স্বাভাবিক উচ্ছ্বাস নজরে এল না। কারণ জানতে চাইলে, তৌথার আনমনা জবাব “সেই মজাটাই তো আর নেই। ভালই লাগছে না স্কুলে যেতে। আগে রোজ যাদের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে স্কুলে যেতাম, শুনলাম যুদ্ধে আহত হয়ে ঘরে পড়ে আছে। দু’-এক জন তো মরেই গিয়েছে!” যুদ্ধ এসে ছিনিয়ে নিয়েছে শৈশব। তবু প্রাণপণে ছন্দে ফিরতে চাইছে গাজার আট থেকে আশি প্রত্যেকেই।

স্বাভাবিক জনজীবন ফিরিয়ে আনতে তৎপরত প্রশাসনও। প্যালেস্তাইনের শিক্ষামন্ত্রী জিয়াদ থাবেত আজ সংবাদমাধ্যমকে জানান, “৫০ দিন ধরে যুদ্ধ চলার পর আজই খুলেছে স্কুল। সরকারি, বেসরকারি এবং রাষ্ট্রপুঞ্জ চালিত স্কুল মিলিয়ে গাজায় স্কুলপড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। স্কুলের স্বাভাবিক পঠনপাঠন শুরু করে ফের বাচ্চাদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে চাইছি আমরা।”

Advertisement

বস্তুত সপ্তাহ দুয়েক আগেই সব স্কুল খুলে যাওয়ার কথা ছিল এখানে। যুদ্ধ শেষ হয়েছে গত ২৬ অগস্ট। কিন্তু যুদ্ধের রেশ থেকে গিয়েছে বলেই যে স্কুল খোলা সম্ভব হয়নি, মেনে নিয়েছে প্রশাসনও। যুদ্ধে প্রাণ গিয়েছে ২১০০ প্যালেস্তাইনির। ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার বেশ কয়েকটি স্কুল। ২৬টি স্কুল আজ পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপের চেহারা নিয়েছে। দেওয়াল-ছাদ ভাঙলেও কাঠামোটুকু টিকিয়ে রেখেছে, এমন স্কুলের সংখ্যা ২৩২টি। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাবাসীদের জন্যই ত্রাণশিবির খোলা হয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের বেশ কিছু স্কুলে। যুদ্ধ থামলেও সব ত্রাণশিবির খালি হয়নি এখনও। তবু বাচ্চাদের স্কুলমুখী করতে অনড় প্রশাসন। থাবেত জানালেন, “যুদ্ধের আতঙ্ক কাটিয়ে ওঠা মোটেই সহজ কথা নয়। তাই আমরা যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতিতে কী ভাবে বাচ্চাদের পড়াতে হয়, তা নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছি প্রায় ১১ হাজার শিক্ষক ও ৩ হাজার প্রিন্সিপালকে।”

তাই এখনই সিলেবাসের পড়া নয়, যুদ্ধের রেশ মন থেকে মুছে ফেলতে পড়ুয়াদের মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ দেবেন শিক্ষকরা। চলবে কাউন্সেলিং। যুদ্ধের কারণে যে হেতু দেশের শিক্ষা পরিকাঠামোর একটা বড় অংশ ধসে গিয়েছে, তাই আজ শিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ নিয়ে ফের একবার উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী। একই মত ইউনিসেফের শিক্ষা বিষয়ক আধিকারিক জুন কুনুগি-রও। তাঁর কথায়, “শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আসলে ভবিষ্যতের জন্যই। সরকার যদি না পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ায়, তাদের যথাযথ শিক্ষার প্রতি দায়বদ্ধ হয়, গাজার এই প্রজন্মটাই আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাবে।”

প্যালেস্তাইনে রাষ্ট্রপুঞ্জের ত্রাণ বিষয়ক একটি সংস্থার দাবি, সরকারি স্কুলে সাহায্য হিসেবে ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ ৩০ হাজার স্কুলব্যাগ এবং অন্যান্য অনুদান দেওয়া হয়েছে। তাঁদের তরফেও স্কুলে মনস্তাত্ত্বিক ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এতে লাভবান হবেন প্রায় ১২ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী।

যুদ্ধের স্মৃতি তবু মন থেকে মুছতে পারছেন না শিক্ষকদেরও একাংশ। বছর পঁয়তাল্লিশের স্কুল শিক্ষক আক্রম-আল-ফারেস জানান, “ভয়াবহ দিন কাটিয়ে এসেছি আমরাও। তবু জীবন যে থেমে থাকে না, এটা আমাদের শেখাতেই হবে। ওদের শেখাতে গিয়ে এই সত্যিটা শিখব আমরা নিজেরাও।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন