—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
গত এক বছরের ধারাবাহিক অভিযানের জেরে ছত্তীসগঢ়ের ‘রেড করিডরে’ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে মাওবাদীরা। নিহত হয়েছেন ১৪ জন পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য-সহ কয়েকশো নেতা-কর্মী। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত বস্তার ডিভিশন জুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সক্রিয় হয়েছে কেন্দ্র। সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনেও। কেন্দ্রীয় টেলি যোগাযোগ মন্ত্রকের তরফে একদা মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় ৫১৩টি মোবাইল টাওয়ার বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
‘ডিজিটাল ভারত নিধি’ কর্মসূচির অন্তর্গত এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা মঞ্জুরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিষ্ণুদেও সাই। তিনি বলেন, ‘‘এই উদ্যোগ শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, কর্মসংস্থান, প্রশাসনিক পরিষেবা এবং জরুরি যোগাযোগের সুযোগকে শক্তিশালী করবে।’’ বিজেপি নেতা বিষ্ণুদেওর দাবি, ডিজিটাল সংযোগের সম্প্রসারণ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। উন্নত মোবাইল নেটওয়ার্ক নাগরিকদের জন্য ব্যাঙ্কিং পরিষেবা, সরকারি প্রকল্পের সরাসরি সুবিধা স্থানান্তর (ডিবিটি), ইউপিআই, বীমা, পেনশন এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিরবচ্ছিন্ন অ্যাক্সেস সহজতর করবে।
ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই উদ্যোগ ডিজিটাল ইন্ডিয়াট কর্মসূচির মূল লক্ষ্যেরই অনুসারী।’’ প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে মাওবাদীদের নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চলতি সপ্তাহে সংসদে জানিয়েছেন, গোটা দেশের মধ্যে এখন শুধুমাত্র ছত্তীসগঢ়ের বস্তার ডিভিশনের তিনটি জেলা— সুকমা, বিজাপুর এবং নারায়ণপুর ‘মাওবাদী উপদ্রুত’। চলতি বছরে মাওবাদী সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজু ওরফে গগন্না, পলিটব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র রেড্ডি ওরফে চলপতি, তাঁর স্ত্রী রবি ভেঙ্কাটা লক্ষ্মী চৈতন্য ওরফে অরুণা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নরসিংহচলম ওরফে সুধাকর, টেক শঙ্কর, মাওবাদী গেরিলা বাহিনী পিএলজিএ-র প্রধান মাধবী হিডমার মতো শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা বস্তারের জঙ্গলে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে গত এক বছরের ধারাবাহিক অভিযানের জেরে ‘রেড করিডরে’ সক্রিয় মাওবাদীর সংখ্যা শ’দুয়েকে নেমে এসেছে। প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মুপ্পালা লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতি ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির যে সদস্যরা রয়ে গিয়েছেন, তাঁরা হলেন, পি হনুমানথু ওরফে গণেশ, পি নরহরি ওরফে বিশ্বনাথ, এম দেব ওরফে রামদার, মিসির বেসরা, অনল দা, মাজ্জিদেব। বর্তমান মাওবাদী সাধারণ সম্পাদক থিপরি তিরুপতি বা দেবজি এবং পিএলজিএ প্রধান বি দেবাও রয়েছেন এই তালিকায়। ২০২৪ সালের পর থেকে মাওবাদী হামলার ঘটনা ৮১ শতাংশ কমেছে দাবি করে গত মঙ্গলবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘২০০৪ থেকে ২০১৪ (সেই বছরের মে পর্যন্ত) মাওবাদী হামলায় ৬৫০৮ জন নিহত হয়েছিলেন। যাঁদের মধ্যে ৪৬৮৪ জন অসামরিক নাগরিক এবং ১৮২৪ জন নিরাপত্তা কর্মী। পরবর্তী দশকে, ২০১৫ থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৭১ শতাংশ কমে ১৮৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে। যার মধ্যে ১৪০৪ জন সাধারণ নাগরিক এবং ৪৬৪ জন নিরাপত্তা কর্মী। এই বছরের মে থেকে নভেম্বরের মধ্যে ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।’’