(বাঁ দিক থেকে) ফৈজ হামিদ, ইমরান খান এবং আসিম মুনির। —ফাইল চিত্র।
গ্রেফতার করা হয়েছিল ১৬ মাস আগে। এ বার ক্ষমতার অপব্যবহারের করে রাজনৈতিক কাজে জড়িত থাকা এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের প্রাক্তন প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফৈজ হামিদের ১৪ বছরের জেলের সাজা হল।
প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত হামিদের বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল প্রক্রিয়া চলছিল দেড় বছর আগে থেকে। বৃহস্পতিবার সামরিক আদালত তাঁর সাজা ঘোষণা করেছে। আর সেই সঙ্গেই নতুন করে জল্পনায় চলে এসেছে পাক সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের ‘নেপথ্য ভূমিকা’। পাক সেনাবাহিনীর ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর)–এর তরফে সোমবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) হামিদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যে তদন্ত হয়েছে তারই রিপোর্টের ভিত্তিতে এই সাজা ঘোষণা করেছে সামরিক আদালত।
যদিও পাক সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, ইমরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই রাজনৈতিক প্রতিশোধের শিকার হলেন হামিদ। ইমরান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১৯ সালে আইএসআই-এর ডিজি পদে নিযুক্ত করেছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ হামিদকে। ২০২১-এর নভেম্বর পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন তিনি। তাঁর জমানায় আফগানিস্তানের তালিবানের ক্ষমতা পুনর্দখলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল আইএসআই। আফগানিস্তানের তালিবান নেতাদের সঙ্গে তাঁর সখ্য ছিল সুবিদিত।
কিন্তু ২০২২-এপ্রিলে ইমরানের পতনের কিছুদিন পরেই হামিদের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ ওঠে পাকিস্তানে। সে সময় পাক সেনার একটি সূত্রে দাবি করা হয়, তেহরিক-ই-তালিবান জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশের সরকারকে ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিলেন হামিদ। সেনা অভ্যুত্থানে উস্কানি দেওয়া, তোলাবাজি এবং ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআইউ)-এর নেতা-কর্মীদের সাহায্যে দেশের রাজনীতিতে ডামাডোল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে মদত দেওয়ার অভিযোগ সেনা আদালতে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যেই পাকিস্তানে জল্পনা তৈরি হয়েছে ‘প্রতিশোধের তত্ত্ব’ নিয়ে।
পাক সেনার অন্দরে বরাবরই ফিল্ড মার্শাল মুনির এবং সেনাপ্রধান পদে তাঁর পূর্বসূরি কামার জাভেদ বাজওয়ার বিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন হামিদ। পাশাপাশি, ইমরানের আস্থাভাজন হিসেবেও পরিচিতি গড়ে উঠেছিল তাঁর। ঘটনাচক্রে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ইমরানকে ১৪ বছর জেলের সাজা দিয়েছিল আদালত। এ বার সেই একই মেয়াদের সাজা দেওয়া হল লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদকেও। আগামী দিনে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দখল করতে মুনির একে একে ‘বিরোধী কাঁটা’ উপড়ে ফেলছেন বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে পাকিস্তানে। আর তাঁর ‘সম্ভাব্য পরবর্তী নিশানা’? আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে কট্টরপন্থী দল জমিয়তে উলেমা-ই-ইসলাম ফাজ়ি (জেইউআইএফ)-র প্রধান মৌলানা ফজলুর রেহমানের নাম।