আজ ভোট, পাল্লা ভারী মের্কেলেরই

নির্বাচনের আগে ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ইমানুয়েল মাকরঁর পাশে দাঁড়িয়ে সে দেশে অতি দক্ষিণদের ক্ষমতায় না আনার জন্য সওয়াল করেছিলেন মের্কেল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বের কথাও সুবিদিত।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বার্লিন শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:১৮
Share:

হাসিমুখে: ভোটের আগে লওটারবাখে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল। শনিবার। রয়টার্স

ভোট দোড়গোড়ায়। জার্মানি এ বার কোন পথে হাঁটবে, শেষ লগ্নে প্রশ্ন এটাই। এ বছর ভোটের ময়দানে নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স আর ব্রিটেন— লড়েছে অনেক দেশই। প্রথম দু’টি দেশ অতি দক্ষিণদের হাতে যাবে ভেবে আশঙ্কা তৈরি হলেও শেষমেশ তা হয়নি। ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার দিকে মন দেওয়ায় তৈরি হয়েছে অন্য আর এক সঙ্কট। সব মিলিয়ে ইউরোপে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জার্মানির নির্বাচন।

Advertisement

২০০৫ সাল থেকে জার্মানির চ্যান্সেলর পদে রয়েছেন আঙ্গেলা মের্কেল। আগামী কাল ভোটে জিতলে চতুর্থ বারের জন্য নির্বাচিত হবেন তিনি। ক্রিশ্চান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টির এই নেত্রী জার্মানিতে অতি দক্ষিণপন্থীদের রুখে দিতে পারবেন কি? নির্বাচনের আগে ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ইমানুয়েল মাকরঁর পাশে দাঁড়িয়ে সে দেশে অতি দক্ষিণদের ক্ষমতায় না আনার জন্য সওয়াল করেছিলেন মের্কেল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বের কথাও সুবিদিত।

এ হেন নেত্রী নিজের দেশে শরণার্থী-সঙ্কট নিয়ে যে ভূমিকা পালন করেছেন, তাতে তিনি যথেচ্ছ সমালোচিত হয়েছেন। জার্মানির মতো খুব কম দেশই শরণার্থীদের ক্ষেত্রে এতটা উদারহস্ত হয়েছে। দলে দলে শরণার্থী প্রবেশের পরে জার্মানি সন্ত্রাসের শিকারও হয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, মের্কেল কিছুটা চাপে ছিলেন, সন্দেহ নেই। শুক্রবার মের্কেল-সহ বেশ কয়েক জন জার্মান নেতার বাড়িতে আবার নামহীন হুমকি চিঠি পৌঁছয়। তাতে আরবি শব্দে ভুল বানানে লেখা, খামের ভিতরে ‘ভয়ঙ্কর’ কিছু রয়েছে। যদিও পরীক্ষা করে জানা যায়, তাতে সোডাগুঁড়ো ছাড়া আর কিছু নেই। কিন্তু এটা কাদের কাজ, তা নিয়ে পুলিশ ধন্দে।

Advertisement

আরও পড়ুন:বুট পায়ে ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ছে ফ্রিডা

মের্কেল অবশ্য এ সব নিয়ে ভাবিত নন। শরণার্থী প্রসঙ্গে সমালোচনা গায়েই মাখছেন না তিনি। সম্প্রতি তাঁর এক প্রচার সভার কাছে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল অতি-দক্ষিণদের দলবল। সভায় ঢুকে সমর্থকদের ভিড় মেপে মের্কেল বলেন, ‘‘কেউ কেউ শুনতে চায় আর বাকিরা কেবল চেঁচায়।’’ তার পরেই তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ সংযোজন, ‘‘এটাই আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে। কেউ কেউ চায়, কাজটা হোক। কেউ শুধু চেঁচায়।’’

তবে মাস ছয়েক আগেও পরিস্থিতি এতটা অনুকূল ছিল না। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ১১ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে চ্যান্সেলর জনপ্রিয়তার দিক থেকে কিছুটা বিপজ্জনক জায়গায় ছিলেন। মূলত শরণার্থী নীতি নিয়েই। এ বছর ইউরোপ জুড়ে অতি দক্ষিণদের বাড়বাড়ন্তে হাওয়া আরও গরম হয়েছে। দেশ থেকে অভিবাসী হটানোর পক্ষে জোর সওয়াল করে ক্ষমতায় এসে গিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রেক্সিটের ধাক্কায় ব্রিটেনও অভিবাসী প্রশ্নে সতর্ক পদক্ষেপ করছে। বস্তুত এই রকম অবস্থায় তাঁর দল কতটা এগোতে পারবে, তা নিয়ে কিছুটা ধন্দে ছিলেন আঙ্গেলা মার্কেল নিজেও।

তবে এখন আর নয়। জনমত সমীক্ষায় মের্কেলের মধ্য-দক্ষিণ দল ক্রিশ্চান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন ৪০ শতাংশ সমর্থন পেয়ে এগিয়ে এসেছে। নয়া জোট গড়তে এই অঙ্কটা যথেষ্ট, বলছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা। জার্মানিতে কে ভোটে জিতবে, সেটা এখন বড় প্রশ্ন নয়। সরকার গড়তে মের্কেল কোন কোন দলকে ডাকবেন— সেটাই এখন আগ্রহের বিষয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে। মের্কেলের ক্ষমতায় আসা নিয়ে তাঁরা এতটাই আত্মবিশ্বাসী!

সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মার্টিন শুলৎস ছিলেন ৬৩ বছর বয়সি মের্কেলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। শরণার্থী নীতি নিয়ে বিতর্কের মাঠে নেমেছেন তাঁর সঙ্গে। কিন্তু সেখানেও আলো কেড়েছেন প্রবীণ নেত্রী। কূটনীতিকরা বলছেন, ফ্যাসিবাদ যে দেশের কাছে ভয়ঙ্কর অতীত, সে দেশের বাসিন্দাদের ‘চরমপন্থা’ সম্পর্কে আপত্তিটাই স্বাভাবিক। মাঝে অতি-দক্ষিণরা সক্রিয় হয়ে ওঠায় সে সমীকরণ একটু নাড়া খেয়েছিল। তার বেশি কিছু নয়। মের্কেলের জন্য কী অপেক্ষা করে আছে, বলবে রবিবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন