ম্যাগাজিন হাতে শরবত।ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের সৌজন্যে।
লাল ছেঁড়া ওড়নার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে সবুজ জামা। নীল কটা চোখ দু’টো থেকে যেন ঠিকরে বেরোচ্ছে আফগান যুদ্ধের ভয়াবহতা। এ ভাবেই ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের প্রথম পাতায় ‘আফগান কন্যা’-র ওই ছবি সারা ফেলে দিল বিশ্ব জুড়ে।
বুধবার জালিয়াতির অভিযোগে পেশোয়ার থেকে শরবত গুলা নামে ওই কন্যাকেই গ্রেফতার করল পাক তদন্তকারী সংস্থা এফআইএ।
প্রায় ৩৪ বছর আগের কথা। তখন কন্যার বয়স ছিল মাত্র ১২। নাম ছিল শরবত বিবি। ১৯৮৪ সালে পেশোয়ারের নাসির বাগ শরণার্থী শিবিরে ওই মুখ নজর কাড়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের চিত্রসাংবাদিক ম্যাককারির। সঙ্গে সঙ্গে ওই নীল কটা চোখ দু’টো ক্যামেরাবন্দি করে ফেলেন তিনি। পরের বছর জুন মাসে ওই ম্যাগাজিনের প্রথম পাতায় ‘আফগান কন্যা’-র ওই ছবি প্রকাশ পায়। পরে তাঁর জীবন নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও তৈরি করা হয়। নাম দেওয়া হয় ‘আফগান যুদ্ধের মোনালিসা।’
এর পর দীর্ঘদিন তাঁর আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে ২০০২ সালে ম্যাককারির সঙ্গে নিজেই এসে দেখা করেন তরুণী শরবত। ম্যাককারি তখন বলেছিলেন, ‘‘ওই ভয়াবহ চোখ দু’টো কখনও ভুলতে পারিনি। তাই আঠারো বছর পরে সে সামনে এসে দাঁড়াতেই চিনতে পেরেছি।’’
সেই চোখ আজ পাকিস্তান জেলে বন্দি। এফআইএ-র এক অফিসার সংবাদমাধ্যমে জানান, ওই মহিলাকে এ দিন তাঁর পেশোয়ারের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে পরিচয়পত্র জাল করার অভিযোগ রয়েছে। এ দিন তাঁর কাছ থেকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের দু’টি পরিচয়পত্রও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানান তদন্তকারীরা।
সূত্রের খবর, শরবতের ছেলের পরিচয় দিয়ে গত বছর পাক সরকারের কাছ থেকে পরিচয়পত্র নিয়েছেন আরও দুই যুবক। অফিসারদের দাবি, পরিচয় হিসেবে দেওয়া তাঁদের তথ্যও ভুয়ো। ফলে, শরবতকে ওই দু’জনের কথাও জিজ্ঞাসা করা হবে বলে জানিয়েছে এফআইএ।
অন্য দিকে, পাক শুল্ক দফতরের যে অফিসার শরবত ও বাকিদের পরিচয়পত্র তৈরি করে দিয়েছিলেন, তিনি গ্রেফতারি এ়ড়াতে আগাম জামিন নিয়েছেন বলে জানতে পেরেছে এফআইএ। দরকারে তাঁকেও জেরা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।