আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে গাজায় আপাত সংঘর্ষ বিরতিতে সায় দিল ইজরায়েল। তবে বিরতির নামে কোনও মতেই তারা ‘আত্মসমর্থনে’র পথে এগোবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে প্যালেস্তাইনি জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস। ইজরায়েলি সেনার তরফে সকালে নতুন করে হামলা না হলেও দিনভর হামলা চালিয়েছে হামাস। প্রত্যুত্তরে দুপুরের পর থেকে গাজায় ফের আক্রমণ শুরু করে ইজরায়েলি সেনা ও নৌ-বাহিনীও। ন’দিনের এই লড়াইয়ে ১৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত প্রায় ১২০০। ঘর ছেড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
আজ, মিশরের দেওয়া সংঘর্ষ বিরতি প্রস্তাব মেনে গাজার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ইজরায়েলি সেনার হামলা। তবে যুদ্ধে বিরতি টানেনি হামাস। ইজরায়েলি সেনা সূত্রের খবর, শান্তি প্রক্রিয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আজ দিনভর লাগাতার রকেট-হানা চালিয়েছে এই জঙ্গিগোষ্ঠী। হামাসের এই পাল্টা জবাব দিতে আজ দুপুরের পর থেকে গাজায় ফের হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল। হামাসের কাছে শান্তি প্রস্তাবে রাজি হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরি। তবে শত্রুপক্ষের কাছে মাথা নোয়াবে না বলে এক লিখিত বিবৃতিতে সাফ জানিয়েছে হামাস।
বিরতি প্রস্তাবে সায় দেওয়ার আগে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছিলেন, হামাসের তরফে কোনও হামলার চেষ্টা হলে ইজরায়েল তার জবাব দিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, “হামাস এই বিরতি প্রস্তাব না মানলে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই ইজরায়েলি সেনা গাজায় ফের হামলা শুরু করবে।”
আজ দুপুরের পর থেকেই পূর্ব এবং মধ্য গাজার নুসেইরাত প্রদেশে বিমান হামলা চালাতে শুরু করেছে ইজরায়েলি সেনা। হামলা চলছে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এলাকাতেও। নতুন করে শুরু হওয়া এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েক জন প্যালেস্তাইনের বাসিন্দা। বাড়ছে আহতের সংখ্যাও।
ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর টুইটার অ্যাকাউন্টে জানানো হয়েছে, “সারা দিনে হামাস ৪৭ বার রকেট-হামলা চালিয়েছে। আমরা হামাসের বিরুদ্ধে ফের হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট পিটার লেনার টুইট করেছেন, ‘ইজরায়েলের উপর টানা ছ’ঘণ্টা রকেট-হামলা চালাচ্ছে গাজা। আমরা ফের হামলা চালাতে বাধ্য হচ্ছি।’ সেনার তরফে জানানো হয়েছে, হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের মতো জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির হামলার পরে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নির্দেশেই গাজায় ফের সক্রিয় হয়েছে ইজরায়েলি সেনা।
হামাস একটি লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা শত্রুপক্ষের সঙ্গে কোনও সমঝোতায় যেতে রাজি নয়। যুদ্ধবিরতির নামে আদতে তাদের কাছে ‘আত্মসমর্পণে’র প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। হামাসের আরও অভিযোগ, তাদের সঙ্গে কথা না বলেই কীসের ভিত্তিতে বিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়া হল? হামাসের সশস্ত্র বাহিনীর এক সদস্য গাজার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের কাছে মন্তব্য করেছেন, “চুক্তিপত্র ছাড়া সংঘর্ষ বিরতির প্রশ্নই ওঠে না। যুদ্ধের সময়ে বন্দুক নিয়ে সমঝোতার রাস্তা খোঁজা যায় না।”
আফগানিস্তানে বিস্ফোরণ, হত কমপক্ষে ৮৯
সংবাদসংস্থা • কাবুল
ব্যস্ত বাজার-চত্বর। বিকিকিনি চলছিল স্বাভাবিক ছন্দে। হঠাৎই বিস্ফোরণের তীব্র শব্দ। লন্ডভন্ড হয়ে গেল দোকানপাট। আনাচেকানাচে ছিটকে পড়ল রক্তাক্ত দেহাংশ। মঙ্গলবার ভয়ঙ্কর আত্মঘাতী বিস্ফোরণটি ঘটে আফগানিস্তানের পাকটিকা প্রদেশের উরগুন শহরে। নিহত হন ৮৯ জন। আহত অন্তত ৪০। এ দিন উরগুনের জনবহুল বাজারে হঠাৎই বিস্ফোরক-ঠাসা গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়ে এক জঙ্গি। পরিস্থিতি বুঝে উঠতে না উঠতেই উড়িয়ে দেয় গাড়িটিকে। জনবহুল বাজার মুহূর্তের মধ্যে কবরস্থানের চেহারা নেয়। ধ্বংস হয়ে যায় অন্তত ২০টি দোকান। পুলিশের দাবি, সে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বহু মানুষ আটকে রয়েছেন এখনও। পাকটিকার রাজধানী সারনে আহতদের নিয়ে আসার জন্য হেলিকপ্টার ও অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়েছে প্রশাসন। ৪২ জন আহতকে সেখানে পাঠানো গিয়েছে। উদ্ধারকাজ চলছে। বিস্ফোরণের দায় এখনও কোনও জঙ্গিগোষ্ঠী নেয়নি। উল্টে সাধারণ মানুষের উপর এ হেন হামলার নিন্দা করে সংবাদমাধ্যমকে এ দিন একটি বিবৃতি পাঠিয়েছে তালিবান।