বলছে উপগ্রহ-চিত্র

রুশ বিমানে ধাক্কা মারে আগুনের গোলা

মাঝ আকাশে টানাহ্যাঁচড়া চলেছে বেশ খানিকক্ষণ। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এক ধাক্কায় তিন হাজার ফুট নেমে আসে বিমানটি। পর মুহূর্তেই আবার উঠে যায় উপরে। শেষে হ্যাঁচকা টানে সোজা ৩১ হাজার ফুট নেমে আসে বিমান। আর তার পরেই ঘটে অঘটন!

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কায়রো শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:০৭
Share:

মাঝ আকাশে টানাহ্যাঁচড়া চলেছে বেশ খানিকক্ষণ। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এক ধাক্কায় তিন হাজার ফুট নেমে আসে বিমানটি। পর মুহূর্তেই আবার উঠে যায় উপরে। শেষে হ্যাঁচকা টানে সোজা ৩১ হাজার ফুট নেমে আসে বিমান। আর তার পরেই ঘটে অঘটন!

Advertisement

মার্কিন উপগ্রহের ছবি বলছে, বাইরে থেকে আসা একটি ‘আগুনের গোলার’ ধাক্কায় মিশরের সিনাইয়ে ভেঙে পড়ে রুশ বিমানসংস্থা কোগালিমাভিয়ার মেট্রোজেট বিমান এয়ারবাস এ-৩২১। শনিবারের এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ২২৪ জন যাত্রীর। পরে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মিশরীয় শাখা সংগঠন দাবি করে, তারা গুলি করে নামিয়েছে বিমানটি। সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে রুশ সেনার লাগাতার বিমান হামলার জবাব দিতেই এই হামলা চালানো হয় বলেও জানায় ওই জঙ্গিরা।

যদিও মিশর প্রশাসন জঙ্গি হানার দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। মিশরের দাবি, রেডার থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় বিমানটি ৩১ হাজার ফুট উপরে ছিল। অত উঁচু থেকে বিমান নামানোর মতো অস্ত্র ওই জঙ্গিদের নেই। তবে সোমবারই তদন্তকারী দল জানায়, বিমানটিতে কোনও যান্ত্রিক গোলমাল ছিল না। তার পরে স্বাভাবিক ভাবেই গুরুত্ব পেতে শুরু করে জঙ্গি হানার তত্ত্ব। তার উপর আজ উপগ্রহচিত্র নিয়ে আমেরিকা মুখ খোলার পরে ক্রমশই পাল্লা ভারী হচ্ছে হামলা-তত্ত্বের। কার্যত কোনও সন্দেহের অবকাশ না রেখে ইতিমধ্যেই মিশরের ওই এলাকায় মার্কিন কূটনীতিক আর শীর্ষকর্তাদের যাতায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা।

Advertisement

উপগ্রহচিত্র, ব্ল্যাকবক্স এবং তদন্তকারীদের পাওয়া তথ্যে জানা গিয়েছে, ওই ‘আগুনের গোলা’র ধাক্কায় ভেঙে যায় বিমানের পিছনের একটা অংশ। মাঝ আকাশে ওই ভাঙা অংশ দিয়ে হাওয়া ঢুকে তছনছ করে দেয় গোটা বিমানকে। হাওয়ার ধাক্কা সামলাতে পারেননি যাত্রীরাও। আর এই গোটা ঘটনাটি ঘটে মিশর ছাড়ার তেইশ মিনিটের মধ্যেই!

সূত্রের খবর, আমেরিকার ওই ইনফ্রা-রেড উপগ্রহচিত্র দেখে অনুমান করা হচ্ছে মাটি থেকেই বিমানটিকে তাক করে গুলি বা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়ে থাকতে পারে। কারণ, ভেঙে পড়ার কয়েক মুহূর্ত আগেই বিমানটির সঙ্গে ধাক্কা লাগে আগুনের গোলাটির। ভেঙে পড়ার ঠিক আগেই বিমানটিতে বিস্ফোরণের ছবিও ধরা পড়ে বলে দাবি গোয়েন্দাদের। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্যই উপগ্রহচিত্রে দেখা গিয়েছে আগুনের ছবি। গোয়েন্দাদের ধারণা, মাটি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ছোড়া হয়েছে বলেই সম্ভবত খুব অল্প সময়ের জন্য ধরা পড়েছে আগুনের ছবি। বোঝা যায়নি ওই আগুনের উৎসস্থল বা গতিপথ। তবে এর পরেও জঙ্গি হামলার সত্যতা নিয়ে নিশ্চিত নন গোয়েন্দারা। বিমানে আগে থেকে রাখা বোমা বিস্ফোরণে বা ইঞ্জিন কিংবা জ্বালানি ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ হলেও উপগ্রহচিত্রে এমন ছবিই ধরা পড়ত বলে মনে করছেন তাঁরা। তবে প্রাথমিক ভাবে ওই ছবি দেখে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সম্ভাবনাই ক্রমশ প্রকট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এক মার্কিন আধিকারিক।

মিশর প্রশাসন অবশ্য আজও জঙ্গি হামলার কথা সরাসরি অস্বীকার করেছে। বিবিসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফতেহ আল-সিসি জানিয়েছেন ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের উপস্থিতি সত্ত্বেও সিনাই প্রদেশ পর্যটকদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।

যান্ত্রিক ত্রুটি না থাকা সত্ত্বেও বিমান ভেঙে পড়া এবং জঙ্গিগোষ্ঠীর দায় স্বীকারে জনমানসে যে ক্রমশ ভয় বাড়ছে তা স্পষ্ট হয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের ঘোষণায়। গত কালই তিনি জানান, সিনাই প্রদেশ এবং লোহিত সাগর সংলগ্ন এলাকা ব্রিটিশ পর্যটকদের জন্য আদৌ সুরক্ষিত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জঙ্গি হামলার তত্ত্বে সায় দিয়েই ওই বিমানসংস্থার উপ-অধিকর্তা আলেকজান্ডার স্মিরনভ বলেন, ‘‘বিমানটির উপর বাইরে থেকে কোনও ভাবে আঘাত হানা হয়েছিল। দুর্ঘটনার এই একটাই সম্ভাব্য উত্তর পাওয়া যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন