গরমে পুড়ছে ফ্রান্সের প্যারিস। ছবি: এএফপি।
গরমে পুড়ছে ইউরোপ। কোনও কোনও জায়গায় দিনের বেলা তাপমাত্রার পারদ ছাড়াচ্ছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গণ্ডি। গরমে এখন পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে এক শিশু-সহ আট জনের। জুনের শেষ ভাগ থেকে সাধারণত ইউরোপে গরম পড়ে। সেই গরমের চরিত্র কি এ বার ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে? গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে, ইউরোপের কিছু জায়গায় এই গরম স্থায়ী হচ্ছে পাঁচ মাস। এ বার এটাই কি তবে ‘স্বাভাবিক’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ইউরোপে? উঠছে প্রশ্ন।
স্পেনের হুয়েলভা অঞ্চলে জুন মাসে তাপমাত্রা হয়েছিল ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফ্রান্সের কিছু জায়গায় দিনের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। ইটালিতে রোম, মিলান-সহ ২০ শহরে গরমের সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। সেখানে ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে পারদ। ৩০ জুন থেকে ৩ জুলাই জার্মানিতে তাপপ্রবাহের জন্য ২০০টি সতর্কতা জারি করতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। প্রতিনিয়ত সেখানে মানুষকে আবহাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করার রীতি রয়েছে। মধ্য ইউরোপের অস্ট্রিয়া, বসনিয়া, হারজ়েগোভিনা, সার্বিয়া, স্লোভানিয়াতেও জারি হয়েছে সতর্কতা।
যদিও আবহবিদেরা মনে করছেন, এই অবস্থা এক দিনে আসেনি ইউরোপে। গত কয়েক বছর ধরেই তাঁরা প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছেন। এখন বিশেষজ্ঞেরা কড়া পদক্ষেপ করার ডাক দিয়েছেন। ‘ক্লাইমেট রেজ়িলিয়েন্স ফর অল ক্লেমস’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সমীক্ষা বলছে, গত পাঁচ বছরে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে দীর্ঘতর হচ্ছে গ্রীষ্ম। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পৃথিবীর ৮৫টি দেশের তাপমাত্রার পরিসংখ্যান সংগ্রহ করেছে তারা। সেখানেই দেখা গিয়েছে, ইউরোপের কিছু শহরে গ্রীষ্ম ক্রমে দীর্ঘতর হচ্ছে।
সমীক্ষা বলছে, গ্রিসের এথেন্সে গত কয়েক বছর ধরে সবচেয়ে বেশি সময় থাকছে গ্রীষ্মকাল। মে-র মাঝামাঝি সময় থেকে অক্টোবরের শুরুর দিক পর্যন্ত সেখানে গরম। গত কয়েক বছর ধরে গড়ে প্রায় ১৪৫ দিন সেখানে গ্রীষ্মকাল। এর পরেই রয়েছে আলবানিয়ার রাজধানী তিরানা। সমীক্ষা অনুযায়ী, সেখানে গত কয়েক বছরে গড়ে প্রায় ১৪৩ দিন ধরে গ্রীষ্মকাল চলছে। পর্তুগালের লিসবনে গত কয়েক বছরে গড়ে ১৩৬ দিন গ্রীষ্মকাল। স্পেনের মাদ্রিদে সেই সংখ্যাটা প্রায় ১১৯ দিন। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জুনের মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত গড়ে তাপমাত্রা থাকছে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। জার্মানির মিউনিখেও গ্রীষ্ম স্থায়ী হচ্ছে প্রায় দু’মাস। রেড ক্রস ক্লাইমেট সেন্টারের সমীক্ষা বলছে, পৃথিবীরে ২৪৭টি দেশের মধ্যে ১৯৫টি দেশেই বছরে ‘প্রবল গরম’-এর দিনের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ইউরোপও রয়েছে সেই তালিকায়।
কিন্তু কেন এত গরম হচ্ছে ইউরোপের শহরগুলি? আবহবিদেরা বলছেন, শহরে ইট, কাঠ, পাথরের ইমারত বাড়ছে। সবুজ কমছে। এটাই গরম বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। সেই সঙ্গে, ভৌগোলিক ভাবে উত্তর মেরুর খুব কাছে রয়েছে ইউরোপ। দুই মেরু পৃথিবীর অন্য অংশের তুলনায় দ্রুত উত্তপ্ত হয়। তার কাছাকাছি অবস্থানের কারণে ইউরোপেও বাড়ছে গরম। সারা বিশ্বে প্রতি দশকে যেখানে গড় তাপমাত্রা ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে ইউরোপে প্রতি দশকে গড় তাপমাত্রা ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে বিশ্ব উষ্ণায়নের সমস্যাও। এই সবের ফলে ইউরোপে গ্রীষ্ম ক্রমেই দুঃসহ হয়ে উঠেছে। সমস্যা বাড়িয়েছে তাদের পরিকাঠামো। যেহেতু ইউরোপে এত কাল গরম পড়ত না, সে কারণে সেখানে বেশির ভাগ বাড়ি, হোটেল, দফতর, রেস্তরাঁয় এসি, এমনকি পাখার ব্যবস্থাও নেই। তাই মানুষ সমস্যায় পড়ছেন অনেক বেশি।