ইতিহাসের হাতছানি। সমর্থকদের মাঝে হিলারি। ক্যালিফোর্নিয়ায় মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি।
দেশের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে আরও এক ধাপ এগোলেন হিলারি ক্লিন্টন। সংবাদ সংস্থা সূত্রের খবর, দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী ভেরমন্টের সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্সকে হারিয়ে ডেমোক্র্যাট পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়া প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছেন প্রাক্তন বিদেশসচিব। স্যান্ডার্স যদিও দলের চূড়ান্ত বৈঠকের আগে হিলারিকে ‘ডেমোক্র্যাট মনোনীত’ প্রার্থী মানতে নারাজ। কারণ সুপার ডেলিগেটদের একটা বড় অংশ এখনও তাঁদের সমর্থন জানাননি বলে দাবি তাঁর।
দলের তরফে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার জন্য দরকার ছিল ২,৩৮৩ ডেলিগেটের সমর্থন। আর সূত্রের খবর, সেই হিসেব কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নিয়েছেন হিলারি। রবিবার পুয়ের্তো রিকোতে বড় জয় এবং প্রায় শেষ মুহূর্তে এক ঝাঁক সুপার ডেলিগেটের সমর্থন পেয়েই হিলারি এখন শীর্ষে বলে দাবি সেই সূত্রটির।
যার অর্থ— মার্কিন মুলুকের ২৪০ বছরের ইতিহাসে হিলারিই হতে চলেছেন প্রথম মহিলা, যাঁকে দেশের কোনও প্রধান রাজনৈতিক দল প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করতে চলেছে। হিলারির ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, এখন দলের তরফে ঘোষণাটাই যা বাকি।
তবু আগাম জমি ছাড়তে নারাজ স্যান্ডার্স। হিলারির ম্যাজিক সংখ্যা পাওয়ার খবরটিকেও বিশেষ পাত্তা দিচ্ছেন না তিনি। তাঁর দাবি, জুলাইয়ে ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় কনভেনশনের আগে কোনও অঙ্ক কষাই ঠিক হচ্ছে না। ওই সম্মেলনের আগে দলের সব সুপার ডেলিগেটরা সমর্থন জানাতে পারবেন না। এ দিকে, আজই ভোট রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ জার্সির মতো দেশের ছ’টি গুরুত্বপূর্ণ স্টেটে। এই পর্যায়ে ডেমোক্র্যাট শিবিরে ভোটাভুটির সর্বশেষ ‘সুপার টিউসডে’। যার দিকে বিশেষ নজর রাখছেন স্যান্ডার্স সমর্থকরা। ক্যালিফোর্নিয়ার ভোটে জিতে হিলারিকে জোর ধাক্কা দেওয়ার কথা গত কালই ঘোষণা করেছেন স্যান্ডার্স। তাঁর সমর্থক শিবিরের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, “সম্মেলনের আগে পর্যন্ত আমাদের একটাই কাজ। তা হল— সুপার ডেলিগেটদের বোঝানো যে, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে স্যান্ডার্সই হবেন আমাদের সব চেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী।’’
হিলারি নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকেই পাখির চোখ করছেন। কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, গত কাল ম্যাজিক সংখ্যা প্রাপ্তির খবর পেয়েই উত্তেজনায় ফুটছেন আমেরিকার ‘প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি’। ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচে এক নির্বাচনী জনসভায় তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘বিস্তর লড়াই বাকি। তবু যা খবর পাচ্ছি, তাতে আমরা এখন এক ঐতিহাসিক এবং নজিরবিহীন মুহূর্তের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি।’’
ইতিহাসই বটে। মার্কিন মুলুকের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হয়ে সাত বছর আগেই ইতিহাস গড়েছিলেন ওবামা। এ বার প্রাইমারি-ককাসের শুরু থেকে নিজেকে তাঁরই ‘উত্তরসূরি’ বলে প্রচার করছেন হিলারি ক্লিন্টন। দেখতে দেখতে তিনিও ইতিহাসের মুখোমুখি। ১৭৮৯ সালে নতুন স্বাধীন দেশ আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জর্জ ওয়াশিংটন। তাঁকে ধরে এখনও পর্যন্ত দেশে ৪৪ জন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। সবাই পুরুষ। এ বার কি সেই ছবিটা বদলাতে চলেছে? রিপাবলিকান ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপরীতে হিলারিকেই ‘ট্রাম্প কার্ড’ ধরছেন ডেমোক্র্যাটদের একটা বড় অংশ।