‘সোনার হাত’ নিয়ে জন্ম জেমস হ্যারিসনের। কেন সোনার হাত? এই হাত থেকে রক্তদান করেই ২৪ লক্ষের বেশি শিশুর জীবন বাঁচিয়েছেন তিনি। তাই তিনি অস্ট্রেলিয়ার ‘ম্যান অফ গোল্ডেন আর্ম’।
১৯৫১ অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম হ্যারিসনের। মাত্র ১৪ বছর বয়সে খুব কঠিন অসুখে পড়েছিলেন তিনি। সার্জারি করে তাঁর একটা ফুসফুস বাদ দিতে হয়। তিন মাস হাসপাতালে ছিলেন তিনি। পরে হ্যারিসন জানতে পেরেছিলেন, প্রচুর লোক তাঁকে রক্তদান করেছিলেন। তা না হলে সার্জারির সময় যে বিপুল পরিমাণ রক্তপাত হয়েছিল, তাতে তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হত না।
তিনিও রক্তদান করে অন্যের প্রাণ বাঁচাবেন, সিদ্ধান্ত নেন হ্যারিসন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার আইন অনুসারে ১৮ বছর না হলে রক্তদানের অনুমতি মেলে না। হ্যারিসনের বয়স তখন ১৪। আরও ৪ বছর অপেক্ষা করতে হয় তাঁকে। ১৮ বছর বয়স হলেই হ্যারিসন রক্তদান করতে শুরু করেন।
চিকিৎসকেরা জানতে পারেন, হ্যারিসনের রক্তে এমন এক উপাদান রয়েছে যা রিস্যাস রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। রিস্যাস এমন এক রোগ সেখানে মায়ের রক্তই গর্ভাবস্থায় শিশুর রক্তকোষগুলোকে নষ্ট করে দেয়। এর জন্য দায়ী রক্তের আরএইচ ফ্যাক্টর।
মায়ের রক্তে এই ফ্যাক্টর না থাকলে এবং শিশুর রক্তে এই আরএইচ ফ্যাক্টর ডেভেলপ হলে এই ঘটনা ঘটে। তখন মায়ের শরীরে এই ফ্যাক্টরকে প্রতিরোধ করতে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। যাতে গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যায়।
রিস্যাস রোগকে প্রতিরোধ করতে পারে এক ধরনের বিরল অ্যান্টিবডি অ্যান্টি-ডি। আরএইচডি অ্যান্টিবডি তৈরি করতে দেয় না অ্যান্টি-ডি। ফলে আরএইচ ফ্যাক্টর যুক্ত মায়ের গর্ভস্থ সন্তান আরএইচ নেগেটিভ হলেও অ্যান্টি-ডির জন্য মায়ের রক্তে কোনও অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না। ফলে গর্ভাবস্থায় শিশু সুরক্ষিত থাকে।
হ্যারিসনের রক্ত থেকে অ্যান্টি-ডি ইঞ্জেকশন তৈরি করেন চিকিৎসকেরা। রিস্যাস রোগে যা কাজে লাগানো হয়। এই ভাবে প্রায় ২৪ লক্ষ শিশুর প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি।