আগুন থেকে বেঁচেও মৃতপ্রায়

দমকল বাহিনীর লোকজন শেষ পর্যন্ত ২৪ তলায় পৌঁছলেও অগ্নিদগ্ধ ধ্বংসস্তূপ ঠেলে সব ফ্ল্যাটে এখনও ঢুকতে পারেননি। আগুনের যে তাণ্ডব পেরিয়ে তাঁরা এগিয়েছেন, তাতে সবারই মনে হচ্ছে, এর মধ্যে কারও বেঁচে থাকা অসম্ভব।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৭ ০৩:১১
Share:

ছবি: এএফপি।

চার দিকে জীবন বইছে আগের গতিতে। পশ্চিম লন্ডনের বিপর্যয়ের সাক্ষী হয়ে মাঝখানে শুধু দাঁড়িয়ে একটা দৈত্যাকৃতি কালো কাঠামো। মঙ্গলবার রাতে পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া ২৪ তলা গ্রেনফেল টাওয়ারের দিকে তাকালে এখন এমনটাই মনে হচ্ছে।

Advertisement

দমকল বাহিনীর লোকজন শেষ পর্যন্ত ২৪ তলায় পৌঁছলেও অগ্নিদগ্ধ ধ্বংসস্তূপ ঠেলে সব ফ্ল্যাটে এখনও ঢুকতে পারেননি। আগুনের যে তাণ্ডব পেরিয়ে তাঁরা এগিয়েছেন, তাতে সবারই মনে হচ্ছে, এর মধ্যে কারও বেঁচে থাকা অসম্ভব। সরকারি ভাবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭। কিন্তু উদ্ধারকাজ যত এগোচ্ছে তত বোঝা যাচ্ছে, সংখ্যাটা একশোও ছুঁতে পারে।

যাঁরা বেঁচে রয়েছেন, তাঁদের নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগে রয়েছেন চিকিৎসকরা। ওই সব বাসিন্দার ফুসফুসে এত কালো ধোঁয়া ঢুকেছে যে তাঁরা আরও জটিল রোগের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা। ইউনিভার্সিটি কলেজ হসপিটালের সিমোন উইলিয়ামস নামে এক নার্স জানিয়েছেন, দগ্ধ হওয়ার ক্ষত তো আছেই। অনেক রোগীরই কাশির পরে থিকথিকে কালো থুতু বের হচ্ছে। কুইন ভিক্টোরিয়া হসপিটালের ভারতীয় বংশোদ্ভূত চিকিৎসক বলজিৎ ধনেসা বলছেন, গ্রেনফেল টাওয়ারে আটকে থাকা বাসিন্দাদের কারও কারও শরীরে কার্বন মনোক্সাইড বা সায়ানাইড দূষণ ঘটেছে। কারও নাক এবং মুখে থাবা বসিয়েছে আগুন। সব ক’টিতেই শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ধোঁয়ার সঙ্গে যে সব বিষ ঢুকেছে রোগীদের শরীরে, তাতে ফুসফুসে গভীর ক্ষত তৈরি হতে পারে। বিধ্বংসী আগুনের সঙ্গে লড়াই করে ফিরে এলেন যাঁরা, ভবিষ্যতটা তাঁদের জন্য বেশ কঠিন হবে বলেই ইঙ্গিত দিচ্ছেন ওই চিকিৎসক।

Advertisement

এখনও নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি, কী ভাবে লেগেছিল আগুন। বাসিন্দারা অনেকেই বলছেন, বহুতলের বিভিন্ন খামতি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও তাঁরা কোনও পদক্ষেপ করেননি। নটিং হিলের কাছে ওই বহুতলটিতে খুব অল্প ভাড়ায় বা কিছু ক্ষেত্রে বিনা ভাড়ায় থাকার ব্যবস্থা ছিল। রোজগারপাতি যাঁদের কম, মূলত তাঁদের জন্যই ১৯৭৪ সালে তৈরি করা হয়েছিল আবাসনটি। সিরিয়া থেকে আসা অনেক শরণার্থী থাকতেন এখানে়। ছিলেন সোমালিয়া ও মরক্কোর বেশ কিছু নাগরিকও।

যারা গ্রেনফেল টাওয়ারের দেখভাল করে, সেই ‘কেনসিংটন অ্যান্ড চেলসি টেন্যান্ট ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন’ (কেসিটিএমও) বাসিন্দাদের অভিযোগে কর্ণপাত করেননি বলে দাবি। স্থানীয় কাউন্সিলার জুডিথ ব্লেকম্যান কেসিটিএমও-র বোর্ডের মাথায়ও রয়েছেন। তিনি বলছেন, আবাসনের সিঁড়ির জায়গায় গ্যাস পাইপ লাগানো হয়েছিল। এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুললে জুডিথকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল, অগ্নি-প্রতিরোধক আচ্ছাদনে মুড়ে দেওয়া হবে ওই সব পাইপ। জুডিথ বলছেন, সেটা করা হয়নি। প্রত্যেক বাসিন্দার হয়ে অন্তত ১৯ বার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন জুডিথ। বোর্ড তাঁকে আশ্বাস দিলেও আদতে কিছুই হয়নি।

সম্প্রতি বাড়িটির সংস্কার হলেও শেষ দিকে দায়সারা ভাবে কাজ হয় বলে জানিয়েছেন এক বাসিন্দা। কাজের পরে টাওয়ারের নীচে প্রচুর জিনিস ফেলে রাখা হয়েছিল। তার মধ্যে দাহ্য বস্তুও থাকতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন