Donald Trump

কী ভাবে জিততে পারতেন ট্রাম্প, মহুয়া, সুজন, শিশিরের নিদান

তাঁরা কী করতেন? এই কঠিন ভোট জেতার জন্য কী পরামর্শ দিতেন আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২০ ২৩:১০
Share:

ডোনাল্ড ট্রাম্প, শিশির বাজোরিয়া, মহুয়া মৈত্র ও সুজন চক্রবর্তী।

মহুয়া মৈত্র বলছেন, তিনি হলে পুরো প্রচারটাকেই অনেক নিচুগ্রামে বাঁধতেন।

Advertisement

সুজন চক্রবর্তী বলছেন, তিনি হলে পরামর্শ দিতেন শান্ত থাকার।

শিশির বাজোরিয়া বলছেন, তিনি থাকলে অন্তত তিন মাস আগে প্রচারের সুরটাই পাল্টে দিতেন।

Advertisement

তাহলেই ডোনাল্ড ট্রাম্প হারিয়ে দিতে পারতেন জো বাইডেনকে!তার পর আরও একবার মেলানিয়া ট্রাম্পের হাত ধরে গিয়ে ঢুকতে পারতেন হোয়াইট হাউসে। বঙ্গের তিন রাজনৈতিক দলের তিন ভোট বিশারদ অন্তত তেমনই মনে করছেন। আমেরিকার নির্বাচনে যখন সরু সুতোয় ঝুলছে দুই বিবদমান ট্রাম্প এবং বাইডেনের ভোটভাগ্য, তখন খানিক কৌতূহলেই আনন্দবাজার ডিজিটাল যোগাযোগ করেছিল তৃণমূলের মহুয়া, সিপিএমের সুজন এবং বিজেপি-র শিশিরের সঙ্গে। তাঁরা যদি ট্রাম্পের ভোট ম্যানেজার হতেন বা তাঁর প্রচার অভিযান পরিচালনা করতেন, তা হলে কী করতেন? এই কঠিন ভোট জেতার জন্য কী পরামর্শ দিতেন আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে?

কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া আপাতত নিজের কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় সকাল-বিকাল কর্মিসভা করছেন। তারইমধ্যে খানিকটা ফাঁক-ফোকর বার করে তিনি আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে মাথা ঘামালেন। এবং বললেন, ‘‘আমি হলে পুরো প্রচারটাকে টোন ডাউন করে দিতাম। আই উড হ্যাভ মেড ইট আ লিট্ল মোর ইনক্লুসিভ। ট্রাম্পের সমস্যা হল, উনি শুধু নিজের কোর ভোটারদের কাছে পৌঁছন। অনেকটা বিজেপি-র মতো। তার বাইরের ভোটারদের টানার চেষ্টা করেন না। গত চার বছর উনি ভোটারদের পুরোপুরি পোলারাইজ (মেরুকরণ) করেছেন। ফলে তার বাইরের লোকজন আর ওঁকে ভোট দিতে আসেননি। আমি হলে সেই জায়গাটায় এবার বেশি জোর দিতাম।’’

মাউন্ট হলিওকের প্রাক্তন ছাত্রী মহুয়ার আরও বক্তব্য, তাঁর আমেরিকার বন্ধুরাও এ বার ট্রাম্প সমর্থক-ট্রাম্প বিরোধীতে আড়াআড়ি বিভক্ত। ভোটের ফলাফল হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছিল, তখন ভারতবর্ষের সাংসদের দুই শিবিরের বিভক্ত বন্ধুরা তাঁকে ঘনঘন ফোন করেছেন। মহুয়ার কথায়, ‘‘গতবার সকলে ভেবেছিল, হিলারি এমনিই জিতে যাবেন। তাই অনেকে কষ্ট করে বেরিয়ে ভোটও দিতে যাননি। এ বার কিন্তু সেটা হয়নি। কারণ, এ বার লোকে ভেবেছে, আমরা যদি কষ্ট করে ভোটটা না দিতে যাই, তা হলে আরও চারটে বছর ট্রাম্পের সঙ্গে কাটাতে হবে! তাই তারা ভোট দিয়েছে। হয় নিজেরা গিয়ে। নয়ত ইমেলে।’’ তিনি থাকলে সেই বিষয়টা আগে থেকে আন্দাজ করে ভোটারদের ওই অংশের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেন বলেও অভিমত মহুয়ার। তবে পাশাপাশিই তাঁর নিরীক্ষণ— ‘‘এখন সারা পৃথিবীতে একটা দক্ষিণপন্থার হাওয়া চলছে। কিন্তু সেটারও পতন হবে। ভারতেও হবে। হতে পারে তার জন্য ৪-৫ বছর সময় লাগবে। কিন্তু হবে।’’

প্রায় একই কথা বলছেন সুজনও। ট্রাম্পের কাল্পনিক ভোট পরিচালক হওয়ার প্রস্তাব শুনে প্রথমে অবশ্য হেসেই ফেলেছিলেন বামপন্থী নেতা। বলেছিলেন, ‘‘এই প্রশ্নের কী জবাব দেব? ট্রাম্পের ভোট পরিচালনার যোগ্যতা আমার নেই। কারণ, নরেন্দ্র মোদীর মতোই ডোনাল্ড ট্রাম্পও একটা আকাট লোক! মোদী কোনওমতে ম্যানেজ করে রেখেছেন। তবে আর বেশিদিন পারবেন না। যেমন ট্রাম্পও পারলেন না।’’

তবে খানিকটা সামলে নিয়ে সিপিএমের পরিষদীয় দলনেতার বক্তব্য, ‘‘এভাবে বেশিদিন ম্যানেজ করা যায় না। আমি ট্রাম্পের ভোট ম্যানেজার হলে ওঁকে বলতাম, শান্ত থাকুন। নিজের মনোভাবে একটা যুক্তি রাখুন।’’ বস্তুত, রসায়নের কৃতী ছাত্র এবং ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রিধারী রাজনীতিক এমনও বলছেন যে, ট্রাম্পকে তিনি আরও বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা করতে বলতেন। আরও গণতান্ত্রিক হতে পরামর্শ দিতেন। সুজনের কথায়, ‘‘এটা ভোটের সময় ম্যানেজমেন্টের প্রশ্ন নয়। ওঁর মূল মনোভাবটাই গণতন্ত্র-বিরোধী, বিজ্ঞান-বিরোধী,ভারসাম্যহীন এবং অযৌক্তিক। আমি ওঁর ভোট পরিচালনা করলে ওঁকে প্রথমে মনোভাবটাই বদলাতে বলতাম।’’

বিজেপি নেতা শিশির বলছেন, তিনি থাকলে ট্রাম্পের প্রচারের সুরটাই পাল্টে দিতেন। শিশিরের কথায়, ‘‘ট্রাম্প তো মুশকিলে পড়লেন করোনা মোকাবিলা নিয়ে। আমি থাকলে প্রচারে করোনা নিয়ে সুরটাই পাল্টে দিতাম! অন্তত ৩ মাস আগে থেকে। আমেরিকায় ভোটের ১ মাস আগে থেকে বুথ খুলে যায়। ফলে যদি ৩ মাস আগে থেকে করোনা নিয়ে ট্রাম্পের ইতিবাচক কাজগুলো, যেমন করোনার সময় লোকের চাকরি বাঁচাতে পারা বা অর্থনীতিকে ততটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে না দেওয়ার মতো বিষয়গুলো অনেক বেশি জোর দিয়ে প্রচার করতাম। যাতে শেষের দিকে যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদের কনভার্ট করা যায়।’’

আরও পড়ুন: হেরে গেলেন ট্রাম্প, আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন জো বাইডেন

শিশিরের মতে, দু'জনের প্রাপ্ত ভোট বলছে, বাইডেন আর ট্রাম্পের ব্যবধান খুব অল্প। ফলে গতবারে তাঁর পক্ষে যে হাওয়াটা ছিল, সেটা পুরোপুরি আছে বলেই ধরে নেওয়া যায়। গতবারও তো কোনওক্রমে জিতেছিলেন। কিন্তু এ বার করোনার বিষয়টা ওঁর বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে। কিন্তু সেটা তো একটা তাৎক্ষণিক বিষয়। সেটা বাদ দিলে দেখবেন হরেদরে উনি কিন্তু ওঁর ভোটারদের ধরে রেখেছেন। ফলে আমি প্রচারে অনেক বেশি জোর দিতাম করোনা ম্যানেজমেন্টে।’’

সত্যিই, শিশিরে শয্যা পাতলে সমুদ্রে ভয় ছিল না ডোনাল্ড ট্রাম্পের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন