International

সরকার-সেনার বিরুদ্ধে তীব্র উষ্মা, সঙ্ঘাতের পথে পাক সংবাদ মাধ্যম

পাক সংবাদমাধ্যমের প্রবল ক্ষোভের মুখে পাকিস্তানের সরকার এবং সেনা। সন্ত্রাস ইস্যুতে সরকার এবং সেনার ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছে পাকিস্তানের একের পর এক বৃহৎ সংবাদপত্র। হাফিজ সইদ, মাসুদ আজহারদের মতো সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে সরকার এবং সেনার মধ্যে প্রবল মতানৈক্যের খবর সামনে এনেছিল ‘ডন’।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ১৪:৪৬
Share:

রাহিল শরিফদের চাপেই কি এখন মিডিয়াকে শাসন করতে তৎপর নওয়াজ? —ফাইল চিত্র।

পাক সংবাদমাধ্যমের প্রবল ক্ষোভের মুখে পাকিস্তানের সরকার এবং সেনা। সন্ত্রাস ইস্যুতে সরকার এবং সেনার ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছে পাকিস্তানের একের পর এক বৃহৎ সংবাদপত্র। হাফিজ সইদ, মাসুদ আজহারদের মতো সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে সরকার এবং সেনার মধ্যে প্রবল মতানৈক্যের খবর সামনে এনেছিল ‘ডন’। তার পর সেনার চাপে গোটা সংবাদমাধ্যমকেই বিধিনিষেধের গেরোয় বেঁধে ফেলার চেষ্টা শুরু করেছে সরকার। এর প্রতিবাদে আর এক বৃহৎ সংবাদপত্র ‘দ্য নেশন’ গর্জে উঠল সরকারের বিরুদ্ধে।

Advertisement

পাক সেনা লস্কর, জইশ, হিজবুলের মতো নিষিদ্ধ সংগঠনগুলিকে সমর্থন জোগাচ্ছে বলেই পাকিস্তান গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে, এমন বক্তব্য বেশ কিছু দিন ধরেই উঠে আসতে শুরু করেছিল পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে থেকে। গত সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে সরকার এবং সেনার মতভেদ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। ‘ডন’ সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে তেমনই দাবি করা হয়। নওয়াজ শরিফ এক গোপন বৈঠকে সেনা এবং আইএসআই কর্তাদের চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়। বৈঠকে সরকার এবং সেনার প্রতিনিধিদের মধ্যে তুমুল বিতণ্ডা হয়েছে বলেও জানানো হয়।

‘ডন’ সংবাদপত্রে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসে ইসলামাবাদ। সেনা এবং সরকারের তরফ থেকে যৌথ ভাবে সংবাদমাধ্যমকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, সাংবাদমাধ্যমকে জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে কাজ করতে বলা হয়। জাতীয় স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকর কোনও প্রতিবেদন প্রকাশ করা যাবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়। এতেই থামেনি পাক সরকার। সেনা ও সরকারের মধ্যে মতানৈক্যের বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যে সাংবাদিক লিখেছিলেন, তাঁর উপর আলাদা করে বিধিনিষেধের চাপানো হয়। সিরিল আলমেডা নামে ওই সাংবাদিক আপাতত পাকিস্তানের বাইরে কোথাও যেতে পারবেন না বলে সরকার জানিয়ে দেয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: শরিফ-সেনা দ্বন্দ্ব ফাঁস করে কোপে সাংবাদিক

সেনা ও সরকারের এই আচরণের বিরুদ্ধেই আক্রমণে নেমেছে ‘দ্য নেশন’। নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল (এন) তথা সরকারের ঘনিষ্ঠ সংবাদপত্র হিসেবেই পরিচিত ‘দ্য নেশন’। সেই সংবাদপত্রই এবং সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দেওয়ায়, পাকিস্তানের রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

‘কী করে বন্ধু হারাতে হয় এবং মানুষকে বিচ্ছিন্ন করতে হয়’ শীর্ষক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, পাকিস্তানের সেনা ও সরকার হাফিজ সইদ এবং মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে এখন সংবাদমাধ্যমকে ভাষণ শোনাতেই বেশি উৎসাহী। পাকিস্তানে লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদ, হিজবুল মুজাহিদিনের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির উপস্থিতি সরকার কেন অস্বীকার করছে এবং কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, সে প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে না বলে লেখা হয়েছে ‘দ্য নেশন’-এ।

পাক সরকার ও পাক সেনার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে ‘দ্য নেশন’ লিখেছে, ‘‘সরকার এবং সেনার শীর্ষ কর্তাদের এত সাহস হয় কী করে যে তাঁরা সংবাদমাধ্যমকে শেখাচ্ছেন, কী ভাবে সাংবাদিকতা করতে হয়। তাঁদের এত সাহস হয় কী করে যে তাঁরা এক জন সম্মানিত সাংবাদিকের সঙ্গে এক জন অপরাধীর মতো আচরণ করেন। তাঁদের এত সাহস হয় কী করে যে তাঁরা মনে করেন জাতীয় স্বার্থ কাকে বলে তা নির্ধারণ করার সক্ষমতা এবং অধিকার শুধু তাঁদেরই রয়েছে।’’

‘ডন’-এর সাংবাদিক সিরিল আলমেডার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেছে ‘দ্য নেশন’। লেখা হয়েছে, ‘‘আপনি এবং আপনার কলম আরও শক্তিশালী হোক। সাংবাদমাধ্যম আপনার পাশে রয়েছে।’’ করাচি প্রেস ক্লাবও আলমেডার হেনস্থার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাঁর উপর আরোপিত বিধিনিষেধ অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি তোলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement