হিউস্টনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্রোঞ্জ মূর্তি।
আমরা যারা বহু বছর দেশ ছাড়া, আসার সময় সুটকেসে করে পোস্ত আর পাটালি গুড়ের সঙ্গেই নিয়ে এসেছি দু’-একটি সঞ্চয়িতা,গীতবিতান। মাছ, মিষ্টির মতোই প্রবাসীরা ছাড়তে পারেননি রবীন্দ্রনাথকে। প্রবাসে প্রায় সব বাঙালিই রবীন্দ্রচর্চা করেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে শুধু নিজেদের মধ্যে না রেখে দশের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা মনের মধ্যে থাকলেও তাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া ভারতবর্ষের বাইরে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ততটা সহজ কাজ নয়। কিন্তু সেই অসাধ্য সাধনে সক্ষম হয়েছিল টেগোর সোসাইটি অফ হিউস্টন।
নোবেল জয়ের শতবর্ষ উপলক্ষ্যে এই সংগঠনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও প্রধান উদ্যোক্তা রুমা আচার্য দে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ও নেতৃত্বে আমেরিকায় প্রথম রবীন্দ্রনাথের পূর্ণদৈর্ঘ্যের ব্রোঞ্জের মূর্তি স্থাপিত হয় হিউস্টনের ‘রে মিলার’ পার্কে, ২০১৩ সালে। সেই মূর্তিপ্রতিষ্ঠার এ বার পাঁচ বছর পূর্ণ হল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম রবীন্দ্রনাথের এত বড় মূর্তি শহরের একটি জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করতে পারা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এই বিশাল কর্মকাণ্ডে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন হিউস্টন ও কলকাতার কয়েকটি সংস্থা এবং স্থানীয় মার্কিনী ও ভারতীয়েরা। ৬ ফুট ৪ ইঞ্চির এই ব্রোঞ্জের মূর্তিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম রবীন্দ্রনাথের পূর্ণদৈর্ঘ্যের মূর্তি।
হিউস্টনের ‘এনার্জি করিডর’ শহরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সেখানে অনেক নামী দামি অফিসে কাজ করেন বহু ভারতীয় অভিবাসী। পার্কের প্রবেশপথের ডান ধারে, উত্তর-পূর্ব কোণে রবীন্দ্র মূর্তিটিকে বসানো। মূর্তিকে ঘিরে লোহার সুন্দর বেড়া। চারদিকে নানা গাছগাছালিতে ঘেরা। মূর্তির সামনে তিনটি ফলকে যথাক্রমে লেখা রয়েছে কবির সংক্ষিপ্ত জীবনী, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য’ কবিতাটি এবং পৃষ্ঠপোষকদের নাম। শিল্পী গোপীনাথ রায়ের তত্ত্বাবধানে কলকাতা আর্ট কলেজের দক্ষ ভাস্কর কমল মণ্ডল এই মুর্তিটি তৈরি করেন। বিশ্ববন্দিত এই ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য পার্কের এই বিশেষ অংশটি সারা বছর খোলা। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে পার্ক ও রিক্রিয়েশন দফতর।
প্রতি বছর হিউস্টন সিটি মেয়র রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন উপলক্ষ্যে সরকারি ভাবে ‘রবীন্দ্র সপ্তাহ’ পালনের নির্দেশ দেন। প্রতি বছরই কবির জন্মদিন উপলক্ষ্যে এখানে প্রাতঃকালীন অনুষ্ঠান হয়। এ বারেও সারা সপ্তাহ জুড়েই বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলবে।