Iran-Israel Conflict

এ বার কাতারে ইরানের হানা! হরমুজ প্রণালী এড়াচ্ছে তেলের জাহাজ, তেহরানে ক্ষমতা বদলই কি ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর লক্ষ্য?

রবিবার ভোরে (ভারতীয় সময়) ইরানের নাতান্‌জ়, ইসফাহান, ফোরডো পরমাণুকেন্দ্রে বিমান ও ক্ষেপাণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল পেন্টাগন। সোমবার ইজ়রায়েল নতুন করে হানা দেয় ইরানে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫ ২২:৪৯
Share:

গ্রাফিক আনন্দবাজার ডট কম।

রবিবার ভোরেই ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতিতে জড়িয়ে গিয়েছিল আমেরিকা। সোমবার এক ধাপ এগিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির পাশাপাশি তেহরানে ক্ষমতা বদলও তাঁর অন্যতম উদ্দেশ্য। যুদ্ধের এই আবহেই সোমবার রাতে ইরান পশ্চিম এশিয়ায় দেশ কাতারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। এখনও পর্যন্ত ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান নেওয়া কাতারের রাজধানী দোহায় দারাবাহিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে।

Advertisement

গত বৃহস্পতিবার কাতারের মার্কিন দূতাবাস বৃহস্পতিবার একটি সতর্কবার্তা জারি করে পশ্চিম এশিয়ায় সবচেয়ে বড় মার্কিন সেনাঘাঁটি আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে (যা কাতারের রাজধানী দোহার অদূরে অবস্থিত) সাময়িক ভাবে অসামরিক কর্মীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সোমবার ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্য ছিল ওই মার্কিন বিমানঘাঁটি। ঘটনাচক্রে, হামলার কিছুক্ষণ আগেই কাতার তাদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা করেছিল।

মার্কিন হামলার রেশ কাটার আগেই সোমবার সকাল থেকে ইরানের বিভিন্ন শহর ও পরমাণুকেন্দ্রে নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েলি ফৌজ। অবিলম্বে ইরানের রাজধানী তেহরান খালি করার জন্য সে দেশের নাগরিকদের সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার। ‘জবাব’ এসেছে ইরানের তরফেও। তারা বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইজ়রায়েলে।

Advertisement

সঙ্ঘাতের এই আবহেই হরমুজ় প্রণালী দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান। এর পরেই তেলবাহী দুই ‘সুপার ট্যাঙ্কার’ রবিবার রাতে আচমকা গতিপথ বদলে পারস্য এবং ওমান উপসাগরের সংযোগরক্ষাকারী ওই প্রণালী ছেড়ে সরে গিয়েছে। ‘আন্তর্জাতিক তেল করিডর’ হিসেবে চিহ্নিত হরমুজ প্রণালী দিয়ে অশোধিত তেলবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যার প্রভাব পড়তে পারে ভারতীয় অর্থনীতিতেও।

তেহরানে শাসক বদল চান ট্রাম্প

সোমবার দুপুরে (ভারতীয় সময় মঙ্গলবার গভীর রাত) জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা ট্রাম্পের। তার আগে তেহরানে শাসকবদলের সম্ভাবনা নিয়ে সমাজমাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। যদিও ইরানের তিন পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালানোর পরে হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছিল, সে দেশের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা কোনও ভাবেই আমেরিকার লক্ষ্য নয়।

রবিবার ভোরে (ভারতীয় সময়) ইরানের নাতান্‌জ়, ইসফাহান, ফোরডো পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালায় আমেরিকার সেনা। বি-২ বোমারু বিমানে ব্যবহৃত ‘জিবিইউ-৫৭’ বোমা (বাঙ্কার ব্লাস্টার সিরিজ়ের আধুনিকতম ও সবচেয়ে শক্তিশালী বোমা) এবং ডুবোজাহাজ থেকে নিক্ষেপকারী টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে এই হামলা হয়। ট্রাম্প এই অভিযানকে ‘সফল’ বলে বর্ণনা করেন। আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স অভিযানের পরে বলেন, ‘‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুব স্পষ্ট, আমরা শাসকবদল চাই না। ওদের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে চাই। তার পরে ইরানিদের সঙ্গে দীর্ঘকালীন সমঝোতা নিয়ে কথা বলতে চাই।’’ তিনি এ-ও জানান যে, কূটনৈতিক ভাবেই বিষয়টি নিয়ে ইরানের সঙ্গে সমঝোতা করতে চান তাঁরা।

কিন্তু ভান্সের এই বক্তব্যের পরে এক দিন কাটতে না কাটতেই ট্রাম্প ইরানে শাসকবদলের সম্ভাবনা নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। ট্রাম্প রবিবার সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘‘কেন সেখানে শাসকবদল হবে না?’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘শাসকবদল শব্দটা ব্যবহার করা রাজনৈতিক ভাবে ঠিক হবে না। কিন্তু যদি ইরানের বর্তমান শাসক সে দেশকে শ্রেষ্ঠত্বের পর্যায়ে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়, তা হলে কেন শাসকবদল হবে না?’’ তার পরেই জল্পনা শুরু হয়েছে, তবে কি এ বার ইরানের আয়াতোল্লা আলি খামেইনি সরকারের পতন ঘটাতে চাইছে আমেরিকা!

আবার ইজ়রায়েলি হামলা ইরানে

গত ১৩ জুন ইরানে নতুন করে হামলা চালায় ইজ়রায়েল। তার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে চলছে সামরিক উত্তেজনা। ইজ়রায়েলি হামলার পাল্টা জবাব দিচ্ছে ইরানও। সোমবার দুই দেশের সংঘাত ১১তম দিনে পড়ল। সোমবার সকাল থেকেই ইরানের বিভিন্ন প্রান্তে হামলা চালাচ্ছে ইজ়রায়েলি সেনা। তেহরানের গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। শুধু তা-ই নয়, ইরানের সশস্ত্র বাহিনী রেভলিউশনারি গার্ডের হেডকোয়ার্টারেও হামলা চালানো হয়েছে।

ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইজ়রায়েল কাৎজ় সোমবার জানিয়েছেন, মূলত বিভিন্ন সরকারি কার্যালয় এবং সামরিক দফতরই ইজ়রায়েলি বাহিনীর লক্ষ্য। তেহরানে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলির মধ্যে রয়েছে ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডের বাসিজ বাহিনীর সদর দফতর, নিরাপত্তা বিষয়ক সদর দফতর, এভিন জেল ইত্যাদি। সোমবার দুপুরে এভিনের প্রবেশপথের অদূরেও ইজ়রায়েল হামলা চালিয়েছে। সোমবার ইজ়রায়েলের অন্যতম লক্ষ্যই ছিল ফোরডো।

রবিবার ভোরে (ভারতীয় সময়) ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছিল আমেরিকা। তার মধ্যে একটি ছিল ফোরডো। ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি পাহাড়ের নীচে রয়েছে এই গবেষণাকেন্দ্রটি। এটিই ইরানের সবচেয়ে গভীর, সুরক্ষিত এবং গোপনীয় পরমাণুকেন্দ্র। পাহাড়ের নীচে মাটি থেকে প্রায় ৩০০ ফুট গভীরে এই কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে বাইরের কোনও শত্রু আক্রমণ করলে এই কেন্দ্রের গায়ে তার আঁচ না লাগে। ফোরডো থেকে ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপন্ন হয় বলে রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা’ (আইএইএ) রিপোর্টে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। ওই গোত্রের ৪২ কিলোগ্রাম ইউরেনিয়ামের সাহায্যে কম ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু বোমা বানানো সম্ভব।

হামলার শঙ্কা হরমুজ় প্রণালীতে

রবিবার রাতে মার্কিন বাহিনীর ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এর পরেই তেহরান হরমুজ় প্রণালী দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। এর পর তেলবাহী দুই ‘সুপার ট্যাঙ্কার’ রবিবার রাতে আচমকা গতিপথ বদলে ওই প্রণালী ছেড়ে সরে গিয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ জানাচ্ছে, ‘কোসউইজ়ডম লেক’ এবং ‘সাউথ লয়্যালটি’ নামে ওই দুই সুপার ট্যাঙ্কারদু’টি ২০ লক্ষ ব্যারেল করে অশোধিত তেল পরিবহণে সক্ষম। যদিও রবিবার তারা খালি অবস্থাতেই পারস্য উপসাগরের দিকে পাড়ি দিচ্ছিল।

সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও ওমান এবং ইরানের মধ্যবর্তী পারস্য এবং ওমান উপসাগরের সংযোগরক্ষাকারী হরমুজ় প্রণালী কিছু অংশে ৩৫ কিলোমিটারেরও কম চওড়া। সারা পৃথিবীর মোট জ্বালানি তেলের ২০ শতাংশ এই জলপথের মাধ্যমে পশ্চিম এশিয়া থেকে বহির্বিশ্বে রফতানি করা হয়। ইতিমধ্যেই বিশ্বের অন্যতম তেল পরিবহণকারী দেশ গ্রিস এবং জাপান তাদের ট্যাঙ্কার সংস্থাগুলিকে হরমুজ় প্রণালী পরিহার করার ‘পরামর্শ দিয়েছে’। ইরানের হুমকির জেরে আগামী দিনে বিশ্ব জুড়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও ‘সকলকে’ তেলের দাম নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন! নিজের ট্রুথ সোশ্যালে তেলের দাম নিয়ে পর পর দু’টি পোস্ট করেন ট্রাম্প। প্রথম পোস্টে তিনি লেখেন, ‘‘সকলে তেলের দাম কম রাখুন। আমি কিন্তু নজর রাখছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement