আফগানিস্তানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে বাণিজ্যিক ক্ষতি পাকিস্তানেরই! বলছে রিপোর্ট। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আফগানিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের আবহেই পাক সেনাকর্তা আহমেদ শরিফ চৌধরি হুঁশিয়ারির সুরে বলেছিলেন, “রক্ত এবং ব্যবসা এক সঙ্গে চলতে পারে না।” তার পর থেকে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কার্যত ছিন্ন হয়ে যায়। বন্ধ করে দেওয়া হয় পাক-আফগান আন্তর্জাতিক সীমান্ত ডুরান্ড লাইন। কিন্তু পাকিস্তান বিভিন্ন মানদণ্ডে গরিব দেশ আফগানিস্তানকে ভাতে মারার চেষ্টা করলেও আদতে কাবুলের ব্যবসা বহাল তবিয়তেই চলছে। প্রকারান্তরে মার খেয়েছে পাকিস্তানের ব্যবসা-বাণিজ্য। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা তো বটেই, পাক সংবাদপত্র ‘ডন’-ও এই একই দাবি করেছে।
৪৫ দিন ধরে ডুরান্ড লাইন দিয়ে আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেন করা বন্ধ রেখেছে পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে পাক ব্যবসায়ীদের একাংশ সে দেশের রাজনৈতিক দল জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলামের প্রধান মৌলানা ফজ়লুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। দ্রুত সীমান্ত খুলে দিয়ে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। সূত্র উদ্ধৃত করে এমনটাই জানিয়েছে কাবুলের আরিয়ানা নিউজ়।
আফগান সীমান্ত বন্ধ থাকায় পাকিস্তানে বাণিজ্যিক আমদানি এবং রফতানি, দুই-ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাস দুয়েক আগে পর্যন্ত আফগানিস্তান থেকে সস্তায় (পাকিস্তানি মুদ্রায় প্রতি এক টন ৩০ হাজার টাকা) কয়লা আমদানি করত পাকিস্তান। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, মোজাম্বিক থেকে চড়া দামে (পাকিস্তানি মুদ্রায় প্রতি এক টন ৪২ হাজার টাকা) কয়লা আমদানি করতে হচ্ছে পাকিস্তানকে। এই পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে পাক সংবাদপত্র ‘ডন’-এর প্রতিবেদনেই। পাকিস্তানে সিমেন্ট শিল্প অন্যগুলির তুলনায় বেশ উন্নত। সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য কয়লা জরুরি। কিন্তু তার দাম বাড়ায় মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ীদের।
পাকিস্তান নিয়মিত ভাবে আফগানিস্তানে শুকনো ফল, শাকসব্জি এবং ওষুধ রফতানি করত। বাণিজ্য প্রায় পুরোপুরি বন্ধ থাকায় এই পণ্যগুলির রফতানিও স্থগিত হয়ে গিয়েছে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হওয়ায় পড়ে থেকে থেকে ফল-সব্জি পচে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পাকিস্তানের আফগান সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ব্যবসায়ীরা।
পাকিস্তান বিপাকে পড়লেও বিকল্প বাণিজ্যপথ ব্যবহার করে অর্থনৈতিক ক্ষতি সামাল দিচ্ছে আফগানিস্তান। তারা পাকিস্তানকে এড়িয়ে ভারত এবং ইরানের আকাশসীমা, স্থলবন্দর কিংবা জলবন্দর ব্যবহার করে বাণিজ্যিক লেনদেন বাড়াতে চাইছে। সম্প্রতি ভারতে এসেছিলেন আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী আলহাজ নুরুদ্দিন আজ়িজ়ি। তিনি ভারতের বণিকমহলের কাছে আফগানিস্তানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও বেশি করে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। পাকিস্তানকে এড়িয়ে বাণিজ্য চালিয়ে গেলে তাদের কোনও অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে না বলে মনে করছে কাবুল। এই বিষয়ে তারা এতটাই নিশ্চিন্ত যে, কয়েক দিন আগে তালিবান সরকারের উপ প্রধানমন্ত্রী মোল্লা গনি বরাদর জানিয়েছেন, পাকিস্তানকে এড়িয়ে বিকল্প বাণিজ্যপথের সন্ধান করতে হবে। যে ব্যবসায়ীরা তার পরেও পাকিস্তানের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি চালাবেন, তাঁদের কোনও সমস্যায় তালিবান সরকার পাশে দাঁড়াবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যেই সুর নরমের ইঙ্গিত দিয়েছে পাকিস্তান। আফগানিস্তানের ‘টোলো নিউজ়’ পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দারকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে পাকিস্তান। ইতিমধ্যেই নাকি রাষ্ট্রপুঞ্জ ইসলামাবাদকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছে। তার পরেই বিষয়টি নিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ এবং সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী দার।