পৌঁছলেন ইমরানও

কাশ্মীর তাস রুখতে দিল্লির জোর উন্নয়নেই

পাক প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ উদ্দেশ্য, নানা ভাবে চূড়ান্ত কোণঠাসা নিজের দেশকে রাষ্ট্রপুঞ্জের সামনে ঘুরে দাঁড় করানো। এফএটিএফ-এর কোপ এড়ানো।

Advertisement

অগ্নি রায়

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৫২
Share:

নরেন্দ্র মোদী।

অতীতে কোনও ম্যাচের ফাইনাল খেলতে যাওয়ার আগে এ রকমই টানটান পরিস্থিতি থাকত স্টেডিয়ামে। গত দেড় মাস ধরে কাশ্মীর প্রসঙ্গে ‘বোলিংয়ের’ পরে, ইমরান খানের নিউ ইয়র্কে নামাটাও অতীত টেনশনকে মনে করিয়ে দিচ্ছে।

Advertisement

পাক প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ উদ্দেশ্য, নানা ভাবে চূড়ান্ত কোণঠাসা নিজের দেশকে রাষ্ট্রপুঞ্জের সামনে ঘুরে দাঁড় করানো। এফএটিএফ-এর কোপ এড়ানো। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের ঋণ যাতে না-আটকায়, তা দেখা। সর্বোপরি, আগামিকাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আফগানিস্তান প্রশ্নে পাকিস্তানকে আবার প্রাসঙ্গিক করে তোলা। কিন্তু এহ বাহ্য, নিউ ইয়র্কের ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইমরানের আগামী এক সপ্তাহব্যাপী ইনিংসের লক্ষ্য হবে, কাশ্মীরকে ফের রাষ্ট্রপুঞ্জের আলোচনায় নিয়ে আসা।

আজ টেক্সাসের হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’ অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে কাশ্মীর ও সন্ত্রাস প্রসঙ্গে মার্কিন সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন মোদী। কিন্তু কাশ্মীর নিয়ে বিরোধী সুরও শুনতে হয়েছে ভারতকে। এ দিন টেক্সাসের সংবাদপত্রেই এক নিবন্ধে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স লিখেছেন, ‘‘ট্রাম্প-মোদীর সমাবেশে ভারত-মার্কিন মৈত্রীর অনেক কথা শোনা যাবে। কিন্তু কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে কিছুই শোনা যাবে না। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’’ ‘হাউডি মোদী’ সম্মেলনের পরে টেক্সাসের এনআরজি স্টেডিয়ামের বাইরে বিক্ষোভ দেখান বিভিন্ন মোদী-বিরোধী সংগঠনের সদস্যেরা।

Advertisement

আজ সৌদি যুবরাজের বিশেষ বিমানে আমেরিকা পৌঁছন ইমরান। মুসলিম বিশ্ব যে পাকিস্তানের পাশে রয়েছে, সৌদি যুবরাজের বাহনে সওয়ার হয়ে ইমরান সেই বার্তাই দিতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু কূটনীতিকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদের পরে মুসলিম দেশগুলির সংগঠন (ওআইসি)-এর থেকেও খুব একটা সুবিধে আদায় করতে পারেননি পাক প্রধানমন্ত্রী। বস্তুত, আজ আমেরিকায় পৌঁছে মোদী যা অভ্যর্থনা পেয়েছেন, তার পাশে ফিকে দেখিয়েছে ইমরানের আগমন। যা নিয়ে পাকিস্তানের নেটিজ়েনরাই কটাক্ষ করেছেন তাঁদের প্রধানমন্ত্রীকে। মোদীকে অভ্যর্থনা জানাতে আজ বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক দফতরের অধিকর্তা ক্রিস্টোফার অলসন, ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ জাস্টার, আমেরিকায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। সেখানে ইমরানকে স্বাগত জানাতে এসেছিলেন একমাত্র রাষ্ট্রপুঞ্জের পাক দূত মালিহা লোদী।

ট্রাম্প-ইমরানের আগের বৈঠকটি হয়েছিল জুলাই মাসে। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের এক সূত্রের মতে, ‘‘সেই সময়ে আমেরিকা ও পাকিস্তানের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার যে প্রকাশ্য প্রদর্শনী দেখা গিয়েছিল, এ বার তা না-ও দেখা যেতে পারে। কারণ তালিবানের সঙ্গে আমেরিকার শান্তি-আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পরে ওয়াশিংটনের কাছে ইসলামাবাদ আপাতত অনেকটাই গুরুত্ব হারিয়েছে।’’

মোদীর বাড়তি সুবিধে, ইমরানের সঙ্গে বৈঠকের পরের দিন তাঁর সঙ্গে বসছেন ট্রাম্প। ফলে ইমরান মার্কিন প্রেসিডেন্টকে যে সমস্ত যুক্তি দেবেন, তার পাল্টা যুক্তি তুলে ধরা সহজ হবে মোদীর পক্ষে। যদিও দিল্লি বলছে, রাষ্ট্রপুঞ্জে উন্নয়নকে সামনে রেখেই চলতে চাইছে তারা। তবে আজ অন্তত ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক-বিতর্ক নিয়ে কোনও কথা হয়নি মোদীর। সেটা মঙ্গলবার হয় কি না দেখার। আপাতত কূটনীতিকদের মতে, সন্ত্রাসবাদকে দিল্লি যদি নিজে থেকে প্রথম সারিতে না রাখে, তা হলে কাশ্মীর প্রসঙ্গ প্রশমিত রাখা সম্ভব হবে। কারণ কাশ্মীর ও সন্ত্রাস একই মুদ্রার দু’পিঠ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন