শেষকৃত্য সম্পন্ন হল বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিএনপি নেত্রী খালেদা জ়িয়ার। ছবি: রয়টার্স।
বিপুল জনজোয়ারের মাঝেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হল বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা বিএনপি নেত্রী খালেদা জ়িয়ার। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় অনুযায়ী বুধবার দুপুর ৩টে ৩ মিনিটে খালেদার ‘জানাজা’ শুরু হয়। শেষ হয় ৩টে ৫ মিনিটে। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তথা খালেদার পুত্র তারেক রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রমুখ। ছিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করও। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি এসেছিলেন কাতারে কাতারে মানুষ। বেলা ৩টে পর্যন্ত তিলধারণের স্থান ছিল না ঢাকার সংসদ ভবন চত্বরে।
জানাজা শেষে কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে খালেদার মরদেহ সংসদ ভবন থেকে মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জিয়া উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হয়। সমাধির কাছাকাছি পৌঁছোনোর পর খালেদার মরদেহবাহী কফিন কাঁধে তুলে নেন সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যেরা। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ জিয়া উদ্যানে তাঁর স্বামী তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মেজর জ়িয়াউর রহমানের পাশে সমাধিস্থ করা হয় খালেদাকে।
খালেদার শেষকৃত্যে ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জয়শঙ্কর। এ জন্য বুধবার সকালেই ঢাকায় পৌঁছে যান ভারতের বিদেশমন্ত্রী। স্থানীয় সময় বুধবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ জয়শঙ্কর ভারতীয় বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে বাশারে বাংলাদেশ বায়ুসেনার ঘাঁটিতে নামেন। তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের সচিব এম ফরহদ হোসেন। এর পর ঢাকার সংসদ ভবনে খালেদা-পুত্র তারেকের সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে ভারতের শোকবার্তা তুলে দেন জয়শঙ্কর। শুধু তা-ই নয়, খালেদার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ভারতের একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শোকপ্রকাশ করেছেন।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বুধবার সকাল থেকেই মানুষের ঢল নেমেছিল বাংলাদেশের রাস্তায়। সকাল ১১টা নাগাদ জিয়ার মরদেহ গুলশানের বাড়ি থেকে বার করা হয়। এর পর বেলা ১২টা নাগাদ জাতীয় পতাকায় মোড়ানো গাড়িতে করে তাঁর মরদেহ ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো-র প্রতিবেদন সূত্রে খবর, বেলা হওয়ার আগেই বিপুল সংখ্যক মানুষ পায়ে হেঁটে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের দিকে এগোচ্ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কেউ এসেছিলেন খুলনা থেকে, কেউ আবার ঢাকা শহরতলির মহাখালি থেকে এসেছিলেন। বেলা ৩টে পর্যন্ত মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের আশপাশ, বিজয় সরণি, খামার বাড়ি, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, শাহবাগ, মোহাম্মদপুর প্রভৃতি এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ছিল। ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবন মাঠ এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের চারপাশের রাস্তায় ভিড় সামাল দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। খালেদার শেষকৃত্যের আগে ঢাকায় আরও আঁটোসাঁটো করা হয় নিরাপত্তা। খালেদার মরদেহ যে গাড়িতে থাকবে, সেটির নিরাপত্তায় ১০ হাজার পুলিশ (বাংলাদেশের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্য-সহ) মোতায়েন করে ইউনূস সরকার। নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের।
মঙ্গলবার সকাল ৬টা নাগাদ (বাংলাদেশের স্থানীয় সময় অনুসারে) ঢাকার হাসপাতালে মৃত্যু হয় খালেদার। একাধিক শারীরিক সমস্যা নিয়ে এক মাসেরও বেশি সময় ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করার কথা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবার অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হবে।