ট্রেনে উঠতে বাধা, বুদাপেস্ট উত্তাল শরণার্থী-বিক্ষোভে

উদ্বাস্তু-বিক্ষোভে ফের উত্তাল ইউরোপ। অস্ট্রিয়ায় শরণার্থীদের মৃতদেহ ভর্তি ট্রাক উদ্ধারের পর এ বার বিক্ষোভ শুরু হল হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে। মঙ্গলবার সকালে বুদাপেস্ট রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে জার্মানি যাওয়ার পথে এক দল শরণার্থীকে আটকায় পুলিশ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বুদাপেস্ট শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৩০
Share:

স্টেশনের বাইরে শরনার্থী বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স।

উদ্বাস্তু-বিক্ষোভে ফের উত্তাল ইউরোপ। অস্ট্রিয়ায় শরণার্থীদের মৃতদেহ ভর্তি ট্রাক উদ্ধারের পর এ বার বিক্ষোভ শুরু হল হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে বুদাপেস্ট রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে জার্মানি যাওয়ার পথে এক দল শরণার্থীকে আটকায় পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই স্টেশনটি। আর তাতেই শুরু হয় বিক্ষোভ। টিকিট কেটেও ট্রেনে উঠতে না পারায় ক্ষুব্ধ শরণার্থীরা স্টেশনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। ‘জার্মানি-জার্মানি’ স্লোগানে উত্তাল হয় স্টেশন চত্বর। বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকা ঘিরে ফেলে। ব্যারিকেড তৈরি করে ঠেকানো হয় বিক্ষোভকারীদের। তার পরে স্টেশন সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হলেও জানিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে শরণার্থীদের প্রবেশ নিষেধ। বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেডের সামনেই বসে পড়েন। কড়া নিরাপত্তায় শুরু হয় স্টেশনের কাজ। স্টেশনের মধ্যে থেকে শরণার্থীদের টেনে হিঁচড়ে বাইরে বের করে দেয় পুলিশ।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শরণার্থীদের নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এমন শরণার্থী-সমস্যা যে সাম্প্রতিক কালে আর দেখা যায়নি, তা জানিয়ে দিন কয়েক আগেই একটি রিপোর্ট পেশ করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। তথ্য বলছে, আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়া থেকে ইউরোপে আশ্রয়ের খোঁজে আসা মানুষদের বেশিরভাগই হাঙ্গেরি দিয়ে ইউরোপে ঢোকেন। প্রসঙ্গত, ইউরোপের ২৬টি দেশে কোনও সীমান্ত-বিধি ছাড়াই ট্রেনে ভ্রমণ করা যায়। তবে শরণার্থীদের ক্ষেত্রে নিয়ম আলাদা। তাঁরা ইউরোপের যে দেশে প্রথম আসেন, সেখান থেকে ছাড়পত্র মেলার পরেই অন্য কোনও দেশে যেতে পারেন। যদিও গত কাল পর্যন্ত হাঙ্গেরি এবং অস্ট্রিয়ার প্রশাসন অনুমতিপত্র ছাড়াই শরণার্থীদের জার্মানি যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। সেই মতো আজও বুদাপেস্ট থেকে বার্লিনের ট্রেন ধরতে আসেন প্রচুর মানুষ।

Advertisement

তবে আজ শরণার্থীদের ঠেকানো হল কেন?

বুদাপেস্টের এক সরকারি মুখপাত্র জোল্টান কোভাক্স জানিয়েছেন, ইউরোপে শরণার্থী-সঙ্কট ক্রমশ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে হাঙ্গেরি জুড়ে ক্রমশ বাড়ছে উদ্বাস্তু সংখ্যা। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়ম কার্যকর করতে পথে নেমেছে পুলিশ। শেঙ্গেন ভিসা এবং পাসপোর্ট ছাড়া কাউকে হাঙ্গেরি হয়ে জার্মানি যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জোল্টান।

শরণার্থী সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান। তাঁর কথায় অবশ্য উঠে এসেছে পশ্চিম এশিয়া থেকে আসা শরণার্থীদের কথাই। সেখানে জঙ্গি-দৌরাত্ম্যের প্রসঙ্গ টেনে ভিক্টর আজ দাবি করেন, ‘‘খ্রিস্টান ইউরোপের অস্তিত্ব বিপন্ন!’’ বুদাপেস্টের একটি সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শরণার্থীদের প্রতি প্রশাসনের কঠোর মনোভাবের এক রকম ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। তামাম ইউরোপবাসীর কাছে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমাদের নাতি-নাতনিরা ইউরোপের সংযুক্ত খলিফায় (ধর্মীয় সাম্রাজ্য) বড় হোক, এমনটা কী আমরা চাই? আমার উত্তর না।’’ তিনি এক হাত নিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশন প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদকেও। অস্ট্রিয়ায় উদ্ধার হওয়া ট্রাকে মৃত শরণার্থীদের প্রসঙ্গ টেনে ভিক্টরের প্রশ্ন, ‘‘ওঁদের শেষকৃত্যে কি ক্লদ থাকবেন?’’ বুদাপেস্টের সরকারি সূত্রে খবর, সরকারের তরফে পার্লামেন্টেও শরণার্থীদের কড়া হাতে দমন করার প্রস্তাব দিয়েছে সরকার।

প্রশাসনিক জটিলতা বুঝতে না পারলেও জীবন যে বিপন্ন তা বেশ বুঝতে পারছেন ভিটেমাটি ছেড়ে আসা মানুষগুলো। দিনভর টিকিট হাতে বুদাপেস্টের স্টেশনের সামনে বসেছিলেন বছর কুড়ির মারা। এসেছেন সিরিয়া থেকে। ভাষা বুঝছেন না। তবে সমস্যাটা বুঝছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও একটা রাস্তা তো ওঁদের বের করতে হবে। আমরা সংখ্যায় কয়েক হাজার! কোথায় যাব?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন