ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে আমেরিকার হামলা প্রসঙ্গে বিবৃতি দিল আইএইএ। —ফাইল চিত্র।
ইরানের ফোরডোয় পরমাণুকেন্দ্রে বড়সড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল! সোমবার এমনটাই জানিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জ নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি। তবে ফোরডোয় মাটির নীচে কতটা খারাপ অবস্থা রয়েছে, তা এই মুহূর্তে কারও পক্ষেই বলা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন তিনি। পরমাণু গবেষণায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য ঘূর্ণনযন্ত্র সেন্ট্রিফিউজ়ের প্রয়োজন হয়। গ্রোসি জানান, এই সেন্ট্রিফিউজ়গুলি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং কম্পনের ফলে এর উপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে। সেই থেকেই অনুমান করা হচ্ছে, ফোরডোয় বড়সড় ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে।
ইরানের তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে রবিবার ভোরে আকাশপথে হামলা চালিয়েছে আমেরিকার সামরিক বাহিনী। ফোরডো, নাতান্জ় এবং ইসফাহান— তিনটি জায়গার পরমাণুকেন্দ্রই মার্কিন হামলা চলেছে। আমেরিকার হানার পরে কোন পরমাণুকেন্দ্রে কী অবস্থা, তা নিয়ে ইতিমধ্যে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)।
ফোরডোয় ইরানের যে পরমাণুকেন্দ্রটি রয়েছে, সেটি পাহাড় খনন করে তৈরি করা। মাটি থেকে কতটা গভীরে সেটি রয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। ইজ়রায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের অনুমান, মাটি থেকে খুব বেশি হলে ৩০০ ফুট (৯০ মিটার) গভীরে থাকতে পারে ওই পরমাণুকেন্দ্রটি। আইএইএ জানিয়েছে, ফোর়ডোয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণকেন্দ্রে সরাসরি আঘাত হেনেছে আমেরিকা।
গত ১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর থেকে ইসফাহানের পরমাণুকেন্দ্রে একাধিক বার হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। রবিবার ভোরের মার্কিন হানায় ইসফাহানের পরমাণুকেন্দ্র আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে ইসফাহানে নতুন করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই পরমাণুকেন্দ্রে বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ভূগর্ভস্থ বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গের প্রবেশপথেও ক্ষতি হয়েছে। আইএইএ বিবৃতিতে জানিয়েছে, যে ভবনগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটিতে পারমাণবিক সামগ্রী থাকলেও থাকতে পারে।
রবিবার ভোরে ইরানের নাতান্জ় পরমাণুকেন্দ্রেও হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এই পরমাণুকেন্দ্রটিতে আগেই হামলা চালিয়েছিল ইজ়রায়েলি বাহিনী। আগে থেকেই আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ওই পরমাণুকেন্দ্রে রবিবার ফের হামলা চালায় আমেরিকা। তবে ওই পরমাণুকেন্দ্রের বাইরে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বৃদ্ধির কোনও তথ্য আইএইএ-র কাছে নেই। গ্রোসি জানান, ইরানি কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানিয়েছেন, আমেরিকার হামলার পরে ওই কেন্দ্রের বাইরে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রায় কোনও বৃদ্ধি ঘটেনি।
আমেরিকার হামলার পরে ইরানের নাতান্জ় পরমাণুকেন্দ্রের একটি উপগ্রহচিত্র প্রকাশ করেছে ‘ম্যাক্সার’। সেই চিত্র বিশ্লেষণ করে সংবাদসংস্থা এপি দাবি করেছে, আমেরিকার রবিবারের হামলার পরে অন্তত একটি গহ্বর দেখা গিয়েছে নাতান্জ় পরমাণুকেন্দ্রে। প্রকাশ্যে আসা উপগ্রহচিত্রে দেখা গিয়েছে, সেখানে প্রায় ১৬ ফুট (পাঁচ মিটার) গভীর গর্ত তৈরি হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে সংবাদসংস্থা এপি। তারা আরও জানিয়েছে, পরমাণুকেন্দ্রের ভূগর্ভস্থ অংশে এই গহ্বর দেখা দিয়েছে।