ফতোয়ার দেশে আইসক্রিম বেচছে ছোট্ট ফতিমা

প্রত্যেকেই সমবয়সি। আট থেকে বড় জোর দশ। সাদা-কালো স্কুলের পোশাকে সবাই সমান উচ্ছল। হাসি-ঠাট্টা, গল্প-গুজবে সকলেই বাঁধনছাড়া। এক জন শুধু দলছুট। নাম ফতিমা। মিল নেই পোশাকে, হাসি নেই মুখে। ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই বাকিদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার। গাড়িতে যে পড়ে রয়েছে অনেক আইসক্রিম। সব ক’টা বিক্রি না হলে বাড়ির লোক খাবে কী? বোরখা থেকে শুরু করে খেলাধুলো মেয়েদের উপর হাজারো ফতোয়ার দেশ আফগানিস্তান।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

হেরাট শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১৫
Share:

হেরাটে এক স্কুলের বাইরে আইসক্রিম বেচছে ফতিমা। ছবি: এএফপি

প্রত্যেকেই সমবয়সি। আট থেকে বড় জোর দশ। সাদা-কালো স্কুলের পোশাকে সবাই সমান উচ্ছল। হাসি-ঠাট্টা, গল্প-গুজবে সকলেই বাঁধনছাড়া। এক জন শুধু দলছুট। নাম ফতিমা। মিল নেই পোশাকে, হাসি নেই মুখে। ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই বাকিদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার। গাড়িতে যে পড়ে রয়েছে অনেক আইসক্রিম। সব ক’টা বিক্রি না হলে বাড়ির লোক খাবে কী? বোরখা থেকে শুরু করে খেলাধুলো মেয়েদের উপর হাজারো ফতোয়ার দেশ আফগানিস্তান। সেখানেই হেরাট শহরে পেটের জ্বালায় আইসক্রিম বেচে দিন কাটছে ছোট্ট ফতিমার।

Advertisement

বিক্রিবাটা হয় স্কুল ছুটির পরই। কিন্তু ফতিমাকে বিছানা ছাড়তে হয় সূর্য ওঠারও আগে। ঘরের টুকিটাকি কাজ সেরেই ছুটতে হয় আইসক্রিমের পাইকারি বাজারে। সেখান থেকে মাল তুলে শহরের এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঠেলে স্কুলের কাছাকাছি আসতেই বেলা গড়িয়ে যায়। তার পরই শুরু হয় আসল ব্যস্ততা।

বাড়িতে পাঁচ দিদি-বোন, অসুস্থ বাবা। বাবার আবার দু’টো বিয়ে। দু’কামরার ভাড়াবাড়িতেই গাদাগাদি করে থাকতে হয়। তবু স্বপ্ন দেখে ফতিমা। বলে, “শুধু একটাই আশা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরও কিছু টাকা জমিয়ে ফেলা। সংসারটা একটু দাঁড়িয়ে গেলেই স্কুলে ভর্তি হবো। বাকি মেয়েদের মতো স্কুলে গিয়ে আমারও পড়াশোনা করার ইচ্ছে। ইচ্ছে করে আমিও ওদের মতো হুল্লোড় করি।”

Advertisement

ফতিমা একা নয়। শিশুশ্রমিক নিয়ে ইউনিসেফের সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী আফগানিস্তানের ৭ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে ১৭ শতাংশ মেয়েই কোনও না কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত। সারা দিনের খাটনির পর ঘরে ঢোকে বড় জোর কয়েক ডলার। তাতেই খাওয়া-পরা সারে ফতিমার সংসার। ফতিমা জানায়, তার বাবা আব জাহির আগে ইরানে দিনমজুরের কাজ করতেন। ৪ বছর আগে দুর্ঘটনায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে হুইলচেয়ারেই। তবুও মাঝেমধ্যে মোবাইলের কার্ড বিক্রি করে মেয়েকে সাহায্য করেন তিনি। দিনের শেষে আইসক্রিম ফেরি করে সেই মেয়েই বাবার সেবা করে। মাত্র আট বছরে জীবনের সারসত্য বুঝেছে ছোট্ট মেয়েটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন