Abhinandan Barthaman

দু’-তিন সেকেন্ড সময় পেলেই অভিনন্দন ঢুকে যেতেন ভারতীয় আকাশ সীমায়, বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা

কামরান বলেন, ‘‘হঠাৎই একটিতে আগুন ধরে গেল। যেই সেটা নীচের দিকে আগুনের গোলার মতো নেমে আসছিল, তখনই তার ভিতর থেকে একজন বেরিয়ে গেল। তারপর প্যারাসুট নিয়ে পাখির মতো নেমে এল মাটিতে।’’

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৯ ১৭:৩৫
Share:

ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। —ফাইল চিত্র

প্যারাসুটে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নামার পর ঠিক কী হয়েছিল অভিনন্দন বর্তমানের সঙ্গে? কারা তাঁকে মারধর করেছিল? পাক সেনাই বা কখন তাঁকে উদ্ধার করল? কী ভাবেই বা জনতার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার? বিভিন্ন সূ্ত্রে এ সব প্রশ্নের কিছু কিছু উত্তর মিলেছে বটে, কিন্তু নিজে চোখে দেখেছেন অর্থাৎ প্রত্যক্ষদর্শীর কোনও বয়ান এখনও পাওয়া যায়নি। এ বার সেটাই উঠে এল একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের সূত্রে। আর তার পরই আরও পরিষ্কার হল, কী ভাবে উপস্থিত বুদ্ধিই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জনতার গণপ্রহারের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে অভিনন্দনকে।

Advertisement

মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমান ধ্বংস হওয়ার পর পাক অধিকৃত কাশ্মীরের হোরান গ্রামে নেমেছিলেন অভিনন্দন বর্তমান। এই হোরান গ্রাম নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে। সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’র দাবি, তাদের প্রতিনিধি হোরান গ্রামে গিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। খোঁজ পেয়েছেন এমন এক জনের, যিনি আকাশে ‘ডগফাইট’ থেকে শুরু করে অভিনন্দনের প্যারাসুটে নেমে আসা এবং পাক সেনার হাতে ধরা পড়া পর্যন্ত পুরো ঘটনা দেখেছেন। মহম্মদ কামরান নামে এক যুবক গোটা ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।

কামরানই জানান, ঘটনার দিন ২৭ ফেব্রুয়ারি নিয়ন্ত্রণরেখার আকাশে অন্তত ছ’টি যুদ্ধবিমান দেখেছিলেন তিনি। কামরান বলেন, ‘‘আকাশে ছ’টি যুদ্ধবিমানের যুদ্ধ দেখেছি। তার মধ্যে একটি এসেছিল ভারতের দিকের পাহাড়ের আড়াল থেকে। সেটাকে তাড়া করছিল অন্য একটি যুদ্ধবিমান, সম্ভবত সেটি পাকিস্তানের বায়ু সেনার। দু’টোই আকাশে চক্কর কাটছিল। তার পর হঠাৎই একটিতে আগুন ধরে গেল। যেই সেটা নীচের দিকে আগুনের গোলার মতো নেমে আসছিল, তখনই তার ভিতর থেকে একজন বেরিয়ে গেল। তারপর প্যারাসুট নিয়ে পাখির মতো নেমে এল মাটিতে।’’

Advertisement

অভিনন্দন বর্তমান সম্পর্কে কতটা জানেন?

আরও পড়ুন: ফের প্রকাশ্যে পাকিস্তানের দ্বিচারিতা, জঙ্গি শীর্ষনেতাই এ বার ইমরানের দলে

কামরান বলে চলেন, ‘‘আমি দেখলাম প্যারাসুটে ভারতীয় পতাকা ছিল। কিন্তু ওই পাইলট যেখানে নেমেছিলেন, বুঝতে পারছিলেন এই জায়গাটা কোথায়। ততক্ষণে আমাদের এলাকার লোকজন তাঁকে প্রায় ঘিরে ধরেছে। তখনই সে জানতে চায়, ‘এটা ভারত না কি পাকিস্তান’।

পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নামার পর কী ভাবে নিজের উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগ করেছিলেন, তার কিছু নমুনা আগেও মিলেছিল। কামরানের কথায় সেটা আরও স্পষ্ট হল। স্থানীয়রা যখন তাঁর প্রশ্নের উত্তরে জানায় ওই জায়গা ভারতের মধ্যে। কামরান জানান, ‘‘এটা জানার পরও অভিনন্দনের সন্দেহ কাটেনি। তাই তিনি কৌশলে জল এবং মোবাইল চান। কিন্তু সেটা না দেওয়ায় তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম কি’? উত্তরে স্থানীয়রা বলেন ‘মোদী’। তখন অভিনন্দনের মুখে শোনা যায়, ‘‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান। কিন্তু তার প্রত্যুত্তরে জনতা কিছু না বলাতেই অভিনন্দন বুঝে যান, জায়গাটা পাকিস্তান।’’

আরও পড়ুন: জম্মু বাসস্ট্যান্ডে গ্রেনেড বিস্ফোরণ, গুরুতর জখম ২৮

কিন্তু ওই জনতার হাত থেকে বাঁচলেন কী ভাবে? এই প্রশ্নের উত্তরে যা বলেছেন কামরান এবং স্থানীয়রা, তাতেও প্রতি পদক্ষেপে অভিনন্দনের বুদ্ধিমত্তার ছাপ মিলেছে। ‘‘শত্রুর মাটিতে নেমে পড়েছেন এটা বুঝতে পেরেই সঙ্গে সঙ্গে অভিনন্দন কিছু নথিপত্র বের করেন, টুকরো করে ছিঁড়ে সেগুলি মুখে পুরে দেন এবং চিবিয়ে খেয়ে নেন’’, বলছিলেন কামরান। আরও যোগ করেন, ‘‘এর পর তিনি পাহাড়ের গা বেয়ে নামতে শুরু করেন। জনতাও তাঁকে ধাওয়া করে। শূন্যে মোট ছ’টি গুলি ছোড়েন অভিনন্দন। তারপর একটি জলাশয়ে নেমে পড়েন। যদিও অন্য দিক দিয়ে জনতা তাঁর কাছাকাছি পৌঁছে যায়। তাঁকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে। ইতিমধ্যেই চলে আসেন পাক সেনা অফিসাররাও। তাঁরা তখন অভিনন্দকে বন্দুক রেখে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। কিন্তু বন্দুক রাখতেই তাঁর উপর শুরু হয় মারধর। তার মধ্যেই সেনা অফিসাররা কোনও রকমে তাঁকে উদ্ধার করেন।’’

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং নতুন তথ্য দিয়েছেন হোরান গ্রামের বাসিন্দারা। কামরানের মতোই আরও কয়েক জন এই পুরো ঘটনার সাক্ষী। তাঁদের বক্তব্য, আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড পরে অভিনন্দনের মিগ-২১ ধ্বংস হলেই তিনি ভারতের মাটিতেই নামতে পারতেন। কেন? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পাক যুদ্ধবিমান তাড়া করে ভারতের দিকে ফেরার সময় তাঁর যুদ্ধবিমানটি ধ্বংস হয়ে যায়। বিমানের গতিমুখও ছিল ভারতের দিকে। আর মিগের ধ্বংসাবশেষ যেখানে মিলেছে, সেই জায়গাটি নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে। আর তার ২০০ মিটার এলাকার মধ্যেই ধরা পড়েন অভিনন্দন।

স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘আর দু’-তিন সেকেন্ড সময় পেলেই ভারতীয় আকাশসীমায় ঢুকে যেতে পারতেন অভিনন্দন।’’ কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয়নি। ফলে পাক সেনার হাতে ধরা পড়েন অভিনন্দন। এর পর থেকে অভিনন্দনের ঘরে ফেরা পর্যন্ত গোটা পর্ব দেশবাসীর সবারই জানা।

(আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক চুক্তি, আন্তর্জাতিক বিরোধ, আন্তর্জাতিক সংঘর্ষ- সব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন