মৌলানা মাসুদ আজহার। —ফাইল ছবি।
পুলওয়ামা হামলার পর সংগঠনের সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছিলেন মৌলানা মাসুদ আজহার। সেই অডিয়ো টেপ জইশ-ই-মহম্মদের বিরুদ্ধে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ-সহ ডসিয়ের-এর সঙ্গে ইতিমধ্যেই পাক সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।
তার পর মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাক বিদেশমন্ত্রীর স্বীকারোক্তি, মাসুদ আজহার পাকিস্তানেই রয়েছেন।ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি, এই দুই ‘প্রমাণ’ ভারতের ‘আত্মরক্ষার্থে প্রত্যাঘাত’-এর দাবিকেই বৈধতা দিল। এর পরেও যদি পাকিস্তান ব্যবস্থা না নেয় তা হলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে আরও কোনঠাসা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পাকিস্তানের মাটিতে বসেই পুলওয়ামা হামলার ছক কষা হয়েছিল। ছক কষেছিলেন মাসুদ আজহার এবং তাঁর সঙ্গীরা। এমন অভিযোগ পুলওয়ামা হামলার দিনই করেছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। সেই অভিযোগের সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ দিয়ে ডসিয়ের বুধবারই পাক উপ রাষ্ট্রদূতের হাতে তুলে দিয়েছিল ভারতেীয় বিদেশ মন্ত্রক।
আরও পড়ুন: ইসলামি সম্মেলনেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরব সুষমা স্বরাজ
জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা(এনআইএ), সেনা গোয়েন্দা এবং দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সম্মিলিত ভাবে সংগ্রহ করা তথ্য রয়েছে ওই ডসিয়ের-এ। সূত্রের খবর, হামলার আগে মাসুদ আজহারের অডিয়ো বার্তা শোনানো হয়েছিলপুলওয়ামার ফিদায়েঁ জঙ্গি আদিল দার-কে। ওই অডিয়ো বার্তাও উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। হামলার আগে এবং পরের ওই দুই অডিয়ো বার্তাই শুধু নয়, পাক জঙ্গি কামরানের সঙ্গে সরাসরি পাকিস্তানে বসে থাকা তার হ্যান্ডলারদের যোগাযোগের তথ্যও তুলে দেওয়া হয়েছে ডসিয়ারে।
একই সঙ্গে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে সাম্প্রতিক ন’টি নির্দিষ্ট ঘটনা, যেখানে জইশ পাকিস্তানে প্রকাশ্যে জমায়েত করেছে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ওই ডসিয়ারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮-র ২০ ফেব্রুয়ারিলাহৌরে জইশ ছ’দিনব্যাপী জমায়েত করে,যেখানে প্রায় ৭০০ জন উপস্থিত ছিল। মূলত জেহাদি ভাবধারাতে দীক্ষিত করার জন্যই ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল বলে দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের। ডসিয়ের-এ জানানো হয়েছে ওই অনুষ্ঠানের পর সেখান থেকে ৩৫ জন জইশ সদস্য পরবর্তী প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হয়েছিল। ওই বছরেরই মার্চে ঠিক একই রকম জমায়েত হয়েছিল পাকিস্তানের শিয়ালকোটে। সেখানে যোগ দিয়েছিল প্রায় দেড় হাজার জন।
আরও পড়ুন: মাসুদ পাকিস্তানেই, তবে অসুস্থ, মানল ইসলামাবাদ
ভারতীয় গোয়েন্দারা ওই ডসিয়ের-এ আরও কয়েকটি তথ্য উল্লেখ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে জইশ প্রকাশ্যেই ভারতে বিভিন্ন হামলার দায় স্বীকার করেছে। হামলাকারীদের অভিনন্দন জানিয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, পুলওয়ামার ঘটনায় জইশ এবং মাসুদ আজহারের প্রত্যক্ষ যোগের অকাট্য প্রমাণ তুলে দেওয়া হয়েছে। ২০০২ পর্যন্ত পাকিস্তানে জইশ নিষিদ্ধ সংগঠনের তালিকায় ছিল। এর পর অন্য নামে ফের প্রকাশ্যে আসে জইশ। সূত্রের খবর, ডসিয়ের-এ সেই সমস্ত তথ্যপ্রমাণও তুলে দেওয়া হয়েছে যেখানে, প্রমাণিত যে পাকিস্তান সরকারের সামনেই জইশ তাদের জেহাদি কার্যকলাপ চালাচ্ছে।
এর আগেও ভারতের সংসদ ভবন, উরি, পঠানকোট হামলার পরেও পাকিস্তানকে ডসিয়ের তুলে দিয়েছে ভারত। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই সে দেশের মাটিতে বেড়ে ওঠা জঙ্গি কার্যকলাপ বন্ধ করতে পাকিস্তানের দিক থেকে আন্তরিকতা দেখা যায়নি। তাই এবারেও ভারতীয় গোয়েন্দারা খুব একটা আশাবাদী নন। তবে তাঁরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে পাকিস্তানকেএই তথ্য প্রমাণের সাহায্যেসন্ত্রাস পোষণের প্রশ্নে আরও কোণঠাসা করা সম্ভব হবে।