জম্মু-কাশ্মীর আবার উত্তপ্ত। এই আবহেই আগামী শনিবার নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে পরপর বক্তৃতা দেবেন ভারত এবং পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী। সেখানে ইসলামাবাদ যে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে ভারতকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত সাউথ ব্লক। আর সেই কারণেই আগাম আক্রমণে যেতে শুরু করেছে মোদী সরকার।
নয়াদিল্লিতে আজ সার্জিকাল স্ট্রাইকের প্রসঙ্গটি উস্কে দিয়েছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত। আবার আজই রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের দূত তথা বিদেশ মন্ত্রকের প্রাক্তন মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন বলেছেন, ‘‘কেউ যদি একবগ্গা ঘোড়ার মতো একই কথা বারবার আউড়ে যেতে থাকে, তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো বহুপাক্ষিক মঞ্চে তা কোনও অর্থই বহন করে না।’’ এখানেই না থেমে তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্দেশ্য তখনই সিদ্ধ হয়, যখন দেশগুলি একে অন্যের সঙ্গে অংশীদার হয়ে কাজ করে। এখানে একাঙ্ক নাটকের জায়গা নেই।’’
সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরানের খানের শান্তি আলোচনার প্রস্তাব প্রথমে গ্রহণ করে পরে প্রত্যাখ্যান করে কেন্দ্র। তাই নিয়ে এক দিকে চলছে সমালোচনার ঝড়। অন্য দিকে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে পুলিশ কর্মী হত্যা এবং লাগাতার হুমকির পর কাশ্মীর-নীতি নিয়েও প্রশ্নচিহ্নের সামনে মোদী সরকার। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই নিউ ইয়র্কের মঞ্চে ভারত এমন বার্তা দিতে চাইছে,
যাতে ঘরোয়া রাজনীতিতেও কিছুটা ক্ষত মেরামতি করা যায়। সার্ক দেশভুক্ত বিদেশমন্ত্রীদের (যেখানে পাকিস্তানও সদস্য দেশ) একটি মধ্যাহ্নভোজের কথাও রয়েছে নিউ ইয়র্কে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে যোগ দেবেন না বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে ঘরোয়া
ভাবে জানানো হচ্ছে, ইমরানের তরফে ভারতের প্রতি ইতিবাচক
বার্তা দেওয়া, সন্ত্রাস-সহ সমস্ত দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করাটা পাক সেনার কূট কৌশলমাত্র। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ইমরান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কিছু আগে থেকেই প্রায় নিঃশব্দে ভারতীয় নেতৃত্বের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা শুরু করেছিলেন পাক সেনাপ্রধান কমর বাজওয়া। কারণ সামরিক খাতে মার্কিন অনুদান বন্ধ হওয়া এবং এফএটিএফ (ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স)-এর খাঁড়ার নীচে থাকা পাকিস্তানের দায় তৈরি হয়েছে, পশ্চিম বিশ্বের সামনে নিজেদের উন্নত ভাবমূর্তি তৈরি করার। নতুন প্রধানমন্ত্রীকে তাই দায়িত্বশীল রাষ্ট্রনেতার মতো আচরণ করার নির্দেশই দেওয়া হয়েছে। যাতে এই বার্তা যায় যে, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক প্রয়াসের কসুর করা হচ্ছে না।
এখন নিউ ইয়র্কে বিশ্বের শীর্ষ প্রতিনিধিদের সামনে সুষমা স্বরাজ পাকিস্তানকে কতটা কোণঠাসা করতে পারেন, সেটাই দেখার অপেক্ষায় ভারতের কূটনৈতিক মহল।