সংসদে বিরোধীদের চাপে পড়ে ভারতকে হুঁশিয়ারি ইমরানের, ‘পাকিস্তান তৈরি’

চাপের মুখে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকে দেশের সশস্ত্র বাহিনী ও জনতাকে সম্ভাব্য যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ইসলামাবাদ শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৫
Share:

ইমরান খান। ফাইল চিত্র।

অধিবেশন শুরু হতেই স্লোগান উঠল পাক পার্লামেন্টে— ‘‘শরম করো, শরম করো / ইমরান খান শরম করো!’’ পাক মাটিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর অভিযানের কয়েক ঘণ্টা পেরিয়েছে তখন। কোনও কোনও সংবাদমাধ্যমের দাবি, ভারতকে ‘জবাব’ দেওয়ার দাবিতেই আজ পাক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দল পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে ‘লজ্জা হোক’ বলে এই স্লোগান তোলেন বিরোধীদের একাংশ।

Advertisement

চাপের মুখে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকে দেশের সশস্ত্র বাহিনী ও জনতাকে সম্ভাব্য যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকের পরে বিবৃতি দিয়ে ভারত সরকারের দিকে আঙুল তুলে সেই কমিটি বলেছে, ‘‘নির্বাচনের আবহে ঘরোয়া রাজনৈতিক স্বার্থে গোটা অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হল। ভারত অকারণ আগ্রাসন দেখিয়েছে। কখন এবং কোথায় এর জবাব দেওয়া হবে, তা পাকিস্তানই বেছে নেবে।’’ সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে পাক সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আসিফ গফুরও বলেছেন, ‘‘এ বার আমাদের জবাবের অপেক্ষা করুক ভারত। কোথায়, কখন তা হবে, সেটা আমাদের অসামরিক নেতৃত্ব ঠিক করবেন। বলা ভাল, ঠিক করে ফেলেছেন।’’ আগামিকাল ন্যাশনাল কম্যান্ড অথরিটি-র বৈঠক ডেকেছেন ইমরান। পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারের চাবিকাঠি রয়েছে এই গোষ্ঠীর হাতেই।

আজ ভোরে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোটে জইশ-ই-মহম্মদের ঘাঁটিতে ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযান এবং তাতে বহু হতাহতের খবর মানতে চায়নি পাক জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি। তাদের দাবি, ‘‘আত্মতুষ্টির জন্য আরও এক বার বেপরোয়া ও মনগড়া দাবি করছে ভারত সরকার।’’ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে পাক সরকারের আহ্বান, কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, ঘটনাস্থলে এসে যাচাই করে যাক তারা। ভারতের কার্যনির্বাহী হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠিয়ে ‘সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের’ প্রতিবাদও জানিয়েছে পাকিস্তান।

Advertisement

আরও পড়ুন: ভোররাতে পাকিস্তানের মাটিতে ধ্বংস জঙ্গি ঘাঁটি

অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেছেন, ‘‘এটি নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘনের ঘটনা। আত্মরক্ষার্থে জবাব দেওয়ার অধিকার পাকিস্তানের আছে।’’

আরও পড়ুন: এর আগে কতবার ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জানেন?

কুরেশির দাবি, ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢোকার ‘বহুমুখী চেষ্টা’ চালিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু পাক যুদ্ধবিমানের তাড়া খেয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফিরে যেতে বাধ্য হয়। সকালে টুইটারে কিছু ছবি-সহ একই দাবি করেছিলেন সেনা মুখপাত্র গফুর। লিখেছিলেন, ‘তাড়াহুড়ো করে বোমা ফেলে গিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। তাতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’ সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ‘‘২১ মিনিটের অভিযানের দাবি করছে ভারত। ২১ মিনিট কেউ পাকিস্তানের আকাশে থাকার চেষ্টা করে দেখাক।’’

সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে এ তথ্য জানতেন?

গফুরের দাবি, গত রাতে সিয়ালকোট এবং লাহৌর সীমান্তের কাছে প্রথম ভারতীয় বিমানের উপস্থিতি টের পেয়েই তাদের চ্যালেঞ্জ করেছিল পাক বায়ুসেনার কমব্যাট এয়ার পেট্রল (সিএপি) টিম। ভারতের ওই বিমানগুলি তখন আর সীমান্ত পেরোয়নি। সেনা মুখপাত্রের কথায়, ‘‘এর পরেই সিএপি-র দ্বিতীয় দলটি আকাশে ওড়ে। তারা বাহাওয়ালপুর সেক্টরের কাছে আরও কয়েকটি ভারতীয় বিমানকে বাধা দেয়। তার পর দেখা যায়, কেরান উপত্যকা হয়ে মুজফ্ফরাবাদ সেক্টরের দিকে এগোচ্ছে ভারতীয় বিমানের একটি বড় ঝাঁক। সিএপি-র তৃতীয় দলটি চ্যালেঞ্জ করলেও বিমানগুলি নিয়ন্ত্রণরেখা পেরোয়। কিন্তু বাধা পেয়ে ফিরে যায় চার মিনিটের মধ্যেই।’’ গফুরের অভিযোগ, জঙ্গি বলে সাধারণ নাগরিকদের মারতেই এসেছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের সময়ে সাধারণ মানুষকেই মোদী সরকার নিশানা করে বলে
তাঁর দাবি।

পাক বিদেশমন্ত্রী কুরেশি জানান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির যুবরাজ শেখ মহম্মদ বিন জ়ায়েদ আল নাহয়ান এবং সৌদি যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমনকে
টেলিফোনে গোটা বিষয়টি জানিয়েছেন ইমরান। পাশাপাশি রাষ্ট্রপুঞ্জ, আইওসি-র মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ভারতের ‘নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘনের’ কথা তুলবেন তাঁরা। পার্লামেন্টে অবশ্য ইমরানকে কিছুটা ভরসা দিয়েছেন পিএমএল (এন) আমলের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী খাজা আসিফ। কাশ্মীর প্রশ্নে পাকিস্তানের সব
দলকে একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন