প্রতীকী ছবি।
মাঝরাতে বেজে উঠছে কলিং বেল। দরজা খুললে দেখা যাচ্ছে কেউ নেই। কারণ বেল বাজিয়েই এলাকা ছেড়ে সরে পড়েছে কেউ।
অচেনা নম্বর থেকে ফোন কল, অশ্লীল-অশ্রাব্য কথাবার্তা। হাড় হিম করে দেওয়া শাসানি। অভিযোগ জমা পড়ছে প্রশাসনে। কিন্তু কখনওই খোঁজ মিলছে না, কে বা কারা ফোন করেছিল।
কখনও বাড়ির জলের লাইন কেটে দেওয়া হচ্ছে। কখনও আচমকা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরলে আচমকা পিছু নিচ্ছে অন্য কোনও গাড়ি। হঠাৎ আগ্রাসী হয়ে উঠছে। গাড়ি থামিয়ে চলছে প্রবল চোখরাঙানি। সঙ্গে থাকা শিশুরা কুঁকড়ে যাচ্ছে আতঙ্কে।
ইসলামাবাদে বা পাকিস্তানের অন্য কোনও শহরে যে ভারতীয় কূটনীতিকরা কর্মরত, এ সব ঘটনা নিয়মিত ঘটে চলেছে তাঁদের সঙ্গে। খবর ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের।
আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে ঘাঁটি চায় চিন, চিন্তা ভারতের
নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানি কূটনীতিকরা প্রবল হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করে সম্প্রতি হইচই শুরু করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনারকে তলব করে পাক বিদেশ মন্ত্রক প্রতিবাদ জানিয়েছে। হেনস্থার প্রতিবাদে দিল্লিতে নিযুক্ত পাক হাইকমিশনার সোহেল মাহমুদকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও ইসলমাবাদ জানিয়েছে।
ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক অবশ্য বৃহস্পতিবারই জানায় যে, ভারতে কর্মরত পাক কূটনীতিকদের হেনস্থার প্রতিবাদ জানাতে সোহেল মাহমুদকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে যে কথা ছড়ানো হচ্ছে, তা ঠিক নয়। সোহেল মাহমুদের ইসলামাবাদ ফেরা পাকিস্তানের রুটিন প্রক্রিয়ার অঙ্গ।
শুধু এটুকু বলেই অবশ্য থামেনি ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। জানানো হয়েছে যে, পাকিস্তানে কর্মরত ভারতীয় কূটনীতিকরা দীর্ঘ দিন ধরে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। পাক প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না। কিন্তু ভারত তা নিয়ে মিডিয়ায় হইচই না করে শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক পথে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে বলে দিল্লির দাবি।
আরও পড়ুন: ‘ডার্টি বম্ব’ নিয়ে খোঁচা, নির্মলার নিশানায় পাকিস্তান
ভারতীয় কূটনীতিকরা পাকিস্তানে কী ধরনের হেনস্থা সহ্য করেন, তা নিয়ে এত দিন ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক মুখ খোলেনি। কিন্তু হেনস্থার অভিযোগ ইসলামাবাদের তরফ থেকে আসার পরে, দিল্লিও আর নীরব থাকতে নারাজ। বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা সংবাদমাধ্যমে এবং বিভিন্ন মহলে মুখ খুলেছেন। পাকিস্তান দীর্ঘ দিন ধরে কী রকম চাপে রেখেছে সে দেশে কর্মরত ভারতীয় কূটনীতিকদের, তা তাঁরা বিশদে জানাতে শুরু করেছেন।
বিষ্ণু প্রকাশ দীর্ঘ দিন ইসলামাবাদের ভারতীয় দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন। তিনি ভারতীয় হাইকমিশনারের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ছিলেন। টিওআই-কে বিষ্ণু প্রকাশ জানিয়েছেন, মাঝ রাতে তাঁর ডোরবেল বেজে ওঠা প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা ছিল। তিনি রাস্তায় বেরলেই পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর এজেন্টরা গাড়ি নিয়ে তাঁকে ধাওয়া করত বলে তিনি জানিয়েছেন। এমনকী তিনি চিকিৎসকের কাছে গেলে, চেম্বারের বাইরে দাঁড়িয়ে আইএসআই চররা ভিতরের কথোপকথন শুনত বলে বিষ্ণু প্রকাশের অভিযোগ।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদদের একাংশ বলছেন, পাকিস্তানে ভারতীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে যা চলছে, তার জবাব দেওয়া জরুরি ছিল। দিল্লিতে যদি পাক কূটনীতিকদের সঙ্গে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকে, তা হলে সেটা ভারতের ‘ঢিলের বদলে পাটকেল’ নীতির অঙ্গ, দাবি বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু নীতি যা-ই হোক। কূটনীতিকদের হেনস্থা করার অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ঘিরে যে দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর সম্পর্ক ফের প্রবল টানাপড়েনের মুখে পড়েছে, তা নিয়ে সংশয় নেই।