চড়া বাজার কড়া মেজাজ। এ ভাবে চলে। সারা মাসের পরিশ্রমে খাওয়া-পরাই যদি না জুটল চাকরি করে লাভ কী? এই বেতন কাঠামোয় সোজা হয়ে দাঁড়ানো যায় কখনও? তিলে তিলে তলাতে হয়। কথায় কথায় ক্ষোভ উগড়েছেন বাংলাদেশের সরকারি কর্মচারীরা। অভিযোগে উঠে এসেছে ওরা-আমরার তুলনাও। আসবেই না বা কেন! একই সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারতের রেল কর্মীরা কাজ করছে মৈত্রী এক্সপ্রেসে। ঢাকা-কলকাতার মধ্যে ছোটাছুটিতে দায়িত্বের হেরফের নেই। দু’দেশের কর্মীরাই নিষ্ঠার সঙ্গে কর্তব্য পালনে ব্যস্ত। তফাৎ বেতনে। ভারতীয়রা পাচ্ছেন বাংলাদেশের কর্মীদের থেকে অনেক বেশি। ক্ষোভ তো হবেই। বিষয়টা বাংলাদেশ সরকারের বিবেচনাতেও এসেছে। পে-কমিশন বেতন কাঠামোর পুনর্বিন্যাস করছে ধাপে ধাপে।সরকার বলছে জলপ্রপাতের মতো টাকা ঢালার ক্ষমতা নেই। সব কিছুই করতে হবে রয়েসয়ে।
মাস মাইনেতে আর কতটুকুই বা হয়। অন্য দিকেও নজর দেওয়া দরকার। মাথা গোঁজার স্থায়ী আস্তানা, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, চিকিৎসার খরচ— এ সব নিয়েই বেশি ভাবছে বাংলাদেশ সরকার। সস্তায় জমি, নামমাত্র সুদে বাড়ি তৈরির ঋণ, সন্তানদের শিক্ষার সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি, পেনশন কাঠামোতে পরিবর্তন।যাতে অবসরের পর আর্থিক দুর্ভোগ পোয়াতে না হয়। এতে সরকারি কর্মচারীরা অনেকটাই স্বস্তিতে। আমোদে ভাসা না গেলেও বিপদে পড়তে হবে না, ফেলে-ছড়িয়ে না চললেও নিশ্চিত জীবনযাপন সম্ভব।
সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে সব থেকে সুবিধাভোগী শ্রেণী সেনাবাহিনীর কর্মীরা। তারা সব কিছুই পায় বেশি বেশি। অভাবের ভাবনা নেই, মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। তবু সুখে থাকতে ভূতে কিলোয় আর কি! রাজনৈতিক ক্ষমতার দিকে হাত বাড়ায়। নেতা-নেত্রীরা শঙ্কার প্রহর গোনে। শেষে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ১৯৭৫’ এর ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর হাতেই নিহত হন কিংবদন্তি নেতা শেখ মুজিবর রহমান। সরকারের রাশ ধরে তারাই। ১৯৮৯ পর্যন্ত চলে সামরিক শাসন। দীর্ঘ আন্দোলনের চাপে সেনারা ব্যারাকে ফেরে। ১৯৯১’তে নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হন বেগম খালেদা জিয়া। ছিয়ানব্বইতে ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। পাঁচ বছর অন্তর প্রধানমন্ত্রিত্ব হস্তান্তর হতে থাকে খালেদা-হাসিনার মধ্যে। গণতান্ত্রিক সক্রিয়তা বাড়ে। ঘাড়ের ওপর সেনাবাহিনীর নিঃশ্বাস ফেলা কিন্তু বন্ধ হয়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করছেন সেনাবাহিনীকে। ছাউনি ছেড়ে যাতে রাজনৈতিক অঙ্গন ছেয়ে ফেলতে না পারে সে দিকে কড়া নজর। সেনা কর্তারা আপাতত হাসিনার নির্দেশ অমান্য করার সাহস দেখাচ্ছেন না। তাঁদের মধ্যে শান্তিবাহিনীতে যোগ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বিশ্বের যে কোনও দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করাই মানে অতিরিক্ত উপার্জন। ডলারে বিষয় বৈভব বৃদ্ধি। রাজনৈতিক ঝামেলায় না জড়িয়ে এ ভাবে জীবনযাত্রার মান বাড়ানোটা অনেকেরই পছ্ন্দ।
সাধারণ সরকারি কর্মচারীদের সে সুযোগ কোথায়। তাদের ভরসা পদোন্নতি কিংবা ইনক্রিমেন্ট। নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশে উন্নতি অনেকটাই। গোলমাল ছিল এক জায়গায়। ইনক্রিমেন্টের তারতম্যে সিনিয়র হয়ে যাচ্ছিল জুনিয়র। আগে নিয়ম ছিল, যে যেদিন কাজে যোগ দেবে প্রতি বছর সেদিনেই তার ইনক্রিমেন্ট হবে, দিনের হিসেবে অনেক জুনিয়র সিনিয়রদের থেকে বেশি লাভবান। এ বার নিয়মের পরিবর্তন।ঠিক হয়েছে প্রত্যেক বছর ১ জুলাই কর্মী নির্বিশেষে ইনক্রিমেন্ট পাবে। এতে কাজে যোগ দেওয়ার দিন তারিখ হিসেবের দরকার নেই। নতুন নিয়মে কেউ কেউ এ বছর দুটো ইনক্রিমেন্ট পেয়ে যাবেন। সরকারের খরচ হবে বাড়তি ৯০০ কোটি টাকা। সামনে বছর থেকে চিন্তা নেই। সমতা ফিরবে ইনক্রিমেন্টে। নতুন বেতন কাঠামোয় কৃতি ছাত্রদেরও লোভ বাড়ছে। যারা সরকারি চাকরির দিকে না তাকিয়ে বহুজাতিক সংস্থায় কাজ খুঁজতেন, তারা সরকারি কর্মসংস্থানে আগ্রহী। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বি সি এস পরীক্ষায় বসছেন বেশি পরীক্ষার্থী। মেধাবীদের নাগালে পেয়ে খুশী সরকার। প্রশাসন আরও মজবুত হওয়ার আশার দিকে তাকিয়ে।