পরমাণুকেন্দ্র মূলত অক্ষতই রয়েছে! ইজ়রায়েলি হামলার পরে দাবি ইরানের। ছবি: রয়টার্স।
ইজ়রায়েলি হানার পরে পরমাণুকেন্দ্র মোটের উপর অক্ষতই রয়েছে বলে দাবি ইরানের। শুক্রবার ইরানের বৃহত্তম পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে বিমানহানা চালায় ইজ়রায়েল। তার পর থেকেই ওই পরমাণুকেন্দ্রের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ দানা বাঁধতে শুরু করে। যদিও ইরানি পরমাণু সংস্থার দাবি, ফোরডোয় ওই পরমাণুকেন্দ্রে সামান্যই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইরানি সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ-কে এমনটাই জানিয়েছেন সে দেশের পরমাণু সংস্থার এক মুখপাত্র।
ইজ়রায়েলি সেনার ‘অপারেশন রাইজ়িং লায়ন’-এর পাল্টা ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস ৩’ চালাচ্ছে ইরানের সামরিকবাহিনী। শনিবার সকালেই দু’পক্ষ একে অন্যের উপর হামলা চালিয়েছে। ইরানি সেনার ‘ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কর্পস’ (আইআরজিসি)-এর নতুন কমান্ডার জেনারেল আহমেদ ভাহিদি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যত ক্ষণ প্রয়োজন তত ক্ষণ ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস ৩’ জারি থাকবে।
ইরানি সংবাদ সংস্থা ‘ফার্স’ও সেনা আধিকারিক সূত্রে একই দাবি করেছে। ইরানি সামরিক বাহিনীর সূত্রে তারা জানিয়েছে, শুক্রবার রাতের ‘সীমিত জবাবে’র মধ্যে এই সংঘর্ষ থেমে থাকবে না। ইরানের হামলা অব্যাহত থাকবে এবং ইরানি বাহিনীর এই জবাব হামলাকারীদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক হবে।
ইরানের সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম ‘তেহরান টাইম্স’ অনুসারে, আইআরজিসি জানিয়েছে, ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস ৩’ শুরুর পর থেকে ইজ়রায়েলের ১৫০টি নিশানায় আঘাত হেনেছে ইরানের সামরিকবাহিনী। ইজ়রায়েল অধিকৃত ভূখণ্ডের বেশ কিছু নিশানায় আত্মঘাতী ড্রোন সফল ভাবে আঘাত করেছে বলে দাবি ইরানি সেনার। শুক্রবার বেশি রাতের দিকে ইরানের রাজধানী তেহরানের মেহরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগুন ধরে গিয়েছিল। আগুন ধরার কারণ প্রাথমিক ভাবে স্পষ্ট না হলেও, পরে ইরানি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, ইজ়রায়েল হামলা চালিয়েছিল তেহরানের ওই বিমানবন্দরে। যদিও বিমানবন্দরের রানওয়ে, টার্মিনাল ভবন এবং অন্য জায়গাগুলি অক্ষতই রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
ইজ়রায়েলের তেল আভিভের অদূরে রিশন লেজ়িয়ঁ শহরে ইরান হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে ‘তেহরান টাইম্স’-এ। ইরানের সরকার নিয়ন্ত্রিত ওই সংবাদমাধ্যমের সমাজমাধ্যমের পাতায় বেশ কিছু ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, সেগুলি রিশন লেজ়িয়ঁ শহরে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরের দৃশ্য। যদিও তার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিধ্বস্ত অবস্থা ওই শহরের। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে একের পর এক বাড়ি। রাস্তায় দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গা়ড়িগুলি একটির উপর অন্যটি উঠে পড়েছে।
শুক্রবার ইজ়রায়েলের হামলায় মৃত্যু হয়েছে ইরানের সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল মহম্মদ বাগেরি, ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডের প্রধান কমান্ডার জেনারেল হোসেন সালামি এবং ডেপুটি কমান্ডার জেনারেল ঘোলামালি রশিদের। ইরানের পরমাণুকেন্দ্র লক্ষ্য করে শুক্রবারের ওই হামলার পরে সেখানে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বের পরমাণু সংক্রান্ত নজরদার সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)। শুক্রবার সংস্থাটির ডিরেক্টর জেনারেল রাফায়েল গ্রসি রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, “ইরানের নাতান্জ পরমাণু কেন্দ্রের ভিতরে তেজস্ক্রিয় এবং রাসায়নিক দূষণ ছড়িয়েছে।” তবে কেন্দ্রটির বাইরে এই বিকিরণের কোনও প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন তিনি।