আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
৬০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল ইরানকে। সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেই ইজ়রায়েল হামলা চালিয়েছে। এই হামলার কথা তিনি আগে থেকেই জানতেন। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে এমনটাই জানালেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, ৬০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। শুক্রবারই (স্থানীয় সময়) ৬১তম দিন। সেই কারণেই ইজ়রায়েল ইরানের উপর হামলা চালিয়েছে। এই হামলা ঠেকাতে, আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দেওয়ার অনেক চেষ্টা তিনি করেছিলেন। কিন্তু ইরান তাদের অবস্থানে ছিল অনড়। সেই কারণেই তাদের এই পরিণতি।
শুক্রবার ‘চিরশত্রু’ ইরানের উপর আকাশপথে অন্যতম বৃহৎ হামলাটি চালিয়েছে ইজ়রায়েলি বাহিনী। সেই হামলায় মৃত্যু হয়েছে ইরানের চার শীর্ষ সেনাকর্তা এবং ছ’জন পরমাণু বিজ্ঞানীর। ইজ়রায়েলের ‘অপারেশন রাইজ়িং লায়ন’ অভিযানে নিহত হয়েছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল মহম্মদ বাগেরি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই হামলার পাল্টা জবাব দিয়েছে তেহরান। ইজ়রায়েলে পর পর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। যদিও নেতানিয়াহুর দাবি, ইরানের অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্রই আটকে দেওয়া হয়েছে। তবে বেশ কয়েকটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ইজ়রায়েলে ক্ষয়ক্ষতি করেছে বলেও মেনে নেওয়া হয়েছে। হতাহতের সংখ্যা স্পষ্ট করা হয়নি। এর মাঝেই সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে ট্রাম্প জানান, পশ্চিম এশিয়ায় নতুন করে এই যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে তিনি একেবারেই ভাবিত নন। যুদ্ধ নিয়ে আমেরিকা উদ্বিগ্ন নয়। তারা ইরানে ইজ়রায়েলের এই হামলা পিছোনোর চেষ্টা করেছিল। ট্রাম্পের কথায়, ‘‘ইজ়রায়েলি হামলা আমি পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কূটনীতি এবং আলোচনার জন্য ইরানকে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। তেহরানকে আমি ৬০ দিনের চূড়ান্ত সময় দিয়েছিলাম। আজ ৬১তম দিন।’’
আগামী রবিবার ওমানে ইরান এবং আমেরিকার প্রতিনিধির মধ্যে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। সেই বৈঠক কি ইজ়রায়েলের এই হামলার পরেও হবে? ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আশাবাদী। আমেরিকার প্রতিনিধি ওমানে নির্দিষ্ট সময়েই পৌঁছে যাবেন। কিন্তু ইরান ওই বৈঠকে আর যোগ দেবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ট্রাম্প সেই সংশয় গোপন করেননি। জানিয়েছেন, পরমাণু চুক্তি নিয়ে রবিবারের বৈঠকে ইরান না-ও যোগ দিতে পারে। রবিবার, ১৫ জুন ওমানে আমেরিকার তরফে বৈঠকে থাকার কথা বিশেষ রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফের।
এর আগেও ইজ়রায়েলি হামলা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন ট্রাম্প। জানিয়েছিলেন, তিনি এই হামলার কথা আগে থেকেই জানতেন। ইজ়রায়েলি হামলাকে সরাসরি সমর্থন করে ট্রাম্প এ-ও বলেছেন যে, নয়া পরমাণু চুক্তি না মানলে ইরানকে ‘আরও ভয়ঙ্কর হামলা’র মুখে পড়তে হবে। ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘‘আমেরিকার সেরা অস্ত্র ইজ়রায়েলের হাতে রয়েছে। তারা জানে, ওই অস্ত্র কী ভাবে ব্যবহার করতে হয়। ইরানের কট্টরপন্থীদের অনেকেই বড় বড় কথা বলেছিলেন। তাঁদের কেউ আর বেঁচে নেই। এ বার পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’’ তিনি ইরানের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘‘খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগে চুক্তি করে ফেলো।’’ এখনও ‘খুব দেরি’ হয়ে যায়নি, জানিয়েছেন ট্রাম্প।
রয়টার্সকে ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইজ়রায়েলের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক বরাবরই অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। আমরা এখনও পর্যন্ত তাদের এক নম্বর বন্ধু। ইরানের পাল্টা হামলা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে সংক্ষেপে তিনি বলেন, ‘‘কী হয় দেখা যাবে।’’ ইজ়রায়েলের হামলার পরেই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই ‘কঠোর শাস্তি’র হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, ইজ়রায়েল যেন খারাপ পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকে। তার পরেই তেল আভিভ লক্ষ্য করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষিত হয়। ইরান এবং ইজ়রায়েলের এই সংঘাতে পশ্চিম এশিয়ার ভূ-রাজনীতি নতুন মোড় নিয়েছে।