International News

জোগান, দরদাম নিয়ে চিন্তা নেই, ভারতকে তেল জুগিয়ে যাবে ইরান, আশ্বাস রাষ্ট্রদূতের

ভারত-সহ যে দেশগুলি তাদের প্রয়োজনের অপরিশোধিত তেলের একটি বড় অংশ আমদানি করে তেহরান থেকে, আমেরিকা চাইছে, এ বার সেই দেশগুলি তা বন্ধ করুক, অবিলম্বে। কারণ, ওয়াশিংটনের দাবি, ওই তেল বেচা অর্থে সন্ত্রাসবাদীদের মদত জুগিয়ে যাচ্ছে ইরান।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ১৩:০২
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

জোর চাপ দিচ্ছে আমেরিকা। বলছে, তেহরান থেকে তেল আমদানি বন্ধ করতেই হবে। ভারত দ্বিধাগ্রস্ত। এই পরিস্থিতিতে ইরান জানাল, ভারতকে আগের মতোই তেল দিয়ে যেতে তারা তৈরি রয়েছে। সেই তেল পাওয়ার জন্য খুব ঘাম ঝরাতে হবে না। চটজলদি মিলবে। যতটা প্রয়োজন, ততটাই। দরদাম নিয়েও ভাবতে হবে না।

Advertisement

ভারতে ইরানের রাষ্ট্রদূত আলি চেগানি মঙ্গলবার দিল্লিতে বলেন, ‘‘ভারত আমাদের বরাবরের বন্ধু দেশ। ভারতের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কটা ইতিহাসের নিরিখেই অনেক পুরনো। তাই আমাদের বিশ্বাস, অন্য দেশের (পড়ুন, আমেরিকা) সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার ফলে তাতে চিড় ধরবে না। আর তার জন্য ইরানও ভারতকে চটজলদি তেল জুগিয়ে যেতে তৈরি রয়েছে, স্বাভাবিক দর-দামে। যতটা প্রয়োজন, ততটাই। সেই তেল জোগানোর জন্য দিল্লির সঙ্গে কোনও বিনিময় প্রথাতেও যাবে না তেহরান।’’

ভারত-সহ যে দেশগুলি তাদের প্রয়োজনের অপরিশোধিত তেলের একটি বড় অংশ আমদানি করে তেহরান থেকে, আমেরিকা চাইছে, এ বার সেই দেশগুলি তা বন্ধ করুক, অবিলম্বে। কারণ, ওয়াশিংটনের দাবি, ওই তেল বেচা অর্থে সন্ত্রাসবাদীদের মদত জুগিয়ে যাচ্ছে ইরান।

Advertisement

তেহরান থেকে তেল আমদানি বন্ধের জন্য একটা সময়সীমা ভারতকে আগেই দিয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু দিল্লি জানিয়েছিল, তেহরানের উপর ভারতের যে পরিমাণে তেল-নির্ভরতা, তাতে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে যেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। ওয়াশিংটন সময় দিয়েছিল আরও ৬ মাস। যা গত মে মাসে শেষ হয়েছে।

আরও পড়ুন- ভারতের জন্য তেল আমদানির বিকল্প পথ খুঁজছে আমেরিকা​

আরও পড়ুন- জাতীয় স্বার্থের কথা পম্পেয়োকে জানাল ভারত​

তার পরেই জুনের শেষাশেষি দিল্লিতে আসেন মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেয়ো। ভারতের বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করকে তিনি আশ্বাস দিয়ে যান, তেহরান থেকে তেল আমদানি বন্ধ করলে কোনও অসুবিধায় পড়তে হবে না ভারতকে। আমেরিকা তেল জোগাবে। সৌদি আরবও যাতে তেল জুগিয়ে যায়, সেটাও দেখবে ওয়াশিংটন।

ভারত যে বেশ চাপে, বিলক্ষণ বুঝেছেন ইরানি রাষ্ট্রদূত। তাই বলেছেন, ‘‘বন্ধু দেশ ভারত মনে হচ্ছে, বেশ চাপে রয়েছে। কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা ইতিহাস জানে। তাই অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার জন্য ভারত ও ইরানের সম্পর্কে চিড় ধরবে না। ভারতের সঙ্গে ইরানের বাণিজ্যিক সম্পর্কও আগের চেয়ে বেড়েছে অনেকটাই। আর এও জানি, আমেরিকা মুখে যা বলে, তা কাজে করে না।’’

তেহরানের তেল বন্ধ করানোর জন্য ভারতকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতারও লোভনীয় টোপ দিয়েছে আমেরিকা। যে সুবিধা ‘ন্যাটো’ জোটের সদস্য দেশগুলি পায়, যে সুবিধা পায় ইজরায়েল ও দক্ষিণ কোরিয়া, ভারতকেও তা দেওয়ার জন্য গত সপ্তাহেই একটি বিল পাশ হয়েছে মার্কিন সেনেটে।

তবে ভারত এখনও দ্বিধাগ্রস্ত। গত সপ্তাহে দিল্লিতে পম্পেয়োর সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশসচিব জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘ভারত এ ব্যাপারে তার জাতীয় স্বার্থটাকেই সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেবে।’’

সেই ‘স্বার্থ’-এর দু’টি দিক থাকতে পারে। জাতীয় নিরাপত্তা হলে মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা যতটা প্রয়োজন দিল্লির, তেলের জোগান ও দর-দামের দাঁড়িপাল্লায় তেহরানের প্রাসঙ্গিকতা ততটাই ভারতের কাছে।

গত কাল ভারতকে সম্ভবত সেটাই মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন ইরানি রাষ্ট্রদূত। চেগানির কথায়, ‘‘জয়শঙ্কর যা বলেছেন, তাতে ইঙ্গিত, তেলের জোগান, দর-দামের কথাই ভাবছে ভারত। সে ক্ষেত্রে ইরানের তরফে বলব, জোগানে ঘাটতি থাকবে না। দর-দাম নিয়েও ভাবতে হবে না। তা মিলবেও চটজলদি। যখন যতটা প্রয়োজন। ভারত ও ইরান একে অন্যের বন্ধু। একে অন্যের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে চলি।’’

চেগানির আরও আশঙ্কা, সরাসরি না হলেও ছাবাহার বন্দর নির্মাণের কাজও আগামী দিনে থমকে যেতে পারে আমেরিকার অঙ্গুলিহেলনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন