দর কষাকষি চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। অবশেষে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানের সঙ্গে ছ’টি দেশের চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করলেন কূটনীতিকদের একাংশ। এমনকী, সব ঠিক থাকলে কাল, সোমবার ওই চুক্তি আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা হতে পারে বলেও তাঁরা মনে করছেন। যদিও মার্কিন কূটনীতিকদের একাংশের বক্তব্য, এখনও অনেক বিষয়ের নিষ্পত্তি হওয়া বাকি।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ও তার জেরে এই দেশের উপর চাপতে থাকা আর্থিক নিষেধাজ্ঞাই এই চুক্তির কেন্দ্রবিন্দু। মূলত আমেরিকার অভিযোগ, অসামরিক পরমাণু কর্মসূচির আড়ালে আসলে পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছে ইরান। তবে ইরানের প্রেসিডেন্ট পদে হাসান রুহানি আসার পর দু’দেশের সম্পর্কে কিছুটা বদল আসে। যে ছ’টি দেশের সঙ্গে ইরানের এই চুক্তির সলতে পাকানো চলছে তারা হল— আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চিন ও রাশিয়া।
চুক্তি হলে কী হবে? প্রথম কথা, ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কমাতে হবে। ফলে চাইলেও ইউরেনিয়ামের অভাবে এখনই পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারবে না ইরান। অন্তত এক দশক তারা এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। বিনিময়ে ইরানের উপর বলবৎ থাকা যাবতীয় আর্থিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে গত ১৬ দিন ধরে চলছে সাম্প্রতিক পর্যায়ের ম্যারাথন বৈঠক। এর আগে বারবার স্থির হয়েছে চুক্তি চূড়ান্ত করার সময়সীমা। বারবার তা পিছিয়েও গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত শোনা যায়, নতুন সময়সীমা স্থির হয়েছে সোমবার। আজও ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রী লরাঁ ফেবিয়াস বলেছেন, ‘‘আমি আশাবাদী, আমরা আলোচনার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছি।’’
আজ ইরানের বিদেশমন্ত্রী মহম্মদ জাভেদ জারিফের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। তিনি বলেন, ‘‘ইতিবাচক বৈঠক হয়েছে। কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া বাকি। আমি আশাবাদী।’’ যদিও মার্কিন বিদেশ দফতরের এক কর্তা আজ বলেন, ‘‘আমরা সময়সীমা নিয়ে কোনও আভাস দিইনি। প্রধান বিষয়গুলির এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।’’ ইরানের প্রতিনিধিদলের মুখপাত্র আলিরেজা মিরইউসেফি আজ টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমরা খুব চেষ্টা করছি। তবে রবিবার রাতের মধ্যে চুক্তি চূড়ান্ত হওয়াটা সত্যিই অসম্ভব। যতই হোক, এটা একটা একশো পাতার লেখা।’’
কোন কোন বিষয় নিয়ে এখনও নিষ্পত্তি বাকি? কূটনীতিকদের দাবি, প্রস্তাবিত চুক্তিতে ইরানের সামরিক ঘাঁটিগুলিতে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের যেতে দেওয়া, আগের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সরকারি জবাবদিহি— ইত্যাদি প্রসঙ্গ রয়েছে। তাতে ইরানের আপত্তি। উপরন্তু ইরান চায়, চুক্তি হলে তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রকল্পের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। ২০০৬-এ ওই নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। এই দাবিতে অবশ্য রাশিয়ার সমর্থন পেয়েছে তেহরান। এর একটা কারণ, মস্কোর অস্ত্রের বিরাট বাজার হল ইরান।
ফলে সোমবারে পুরোপুরি বাজি ধরা যাচ্ছে না। ইরানের ধর্মীয় প্রধান আলি খামেনেই সপ্তাহ দুয়েক আগেই পশ্চিমী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখার কথা বলেছিলেন। তিনি কি মেনে নেবেন এই চুক্তি? তার চেয়েও বড় কথা, এই চুক্তির ব্যাপারে খোদ বারাক ওবামা কি পাশে পাবেন মার্কিন কংগ্রেসকে? শেষ পর্যন্ত কী হয়, সেটাই দেখার।