ফের কাঁপল ইতালি, ধ্বংস প্রাচীন গির্জা

রবিবার। ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাতটা চল্লিশ। ফের তীব্র কম্পনে কেঁপে উঠল মধ্য ইতালির নর্চিয়া শহর। বুধবারের ভূমিকম্পের রেশ তখনও কাটেনি। তার মধ্যে ফের জোরাল কম্পনে শহর জুড়ে আতঙ্ক ছড়ায়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

রোম শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০০
Share:

ছবি সমেত খবরটা সবার প্রথম টুইট করেছিলেন নর্চিয়া শহরের সন্ন্যাসীরাই। ইতালিতে পনেরো শতকে তৈরি প্রাচীন সান বেনেদেত্তো ব্যাসিলিকাটি গুঁড়িয়ে গিয়েছে রবিবারের ভূমিকম্পে। দাঁড়িয়ে আছে শুধু সামনের দেয়ালটা। ছবি টুইটারের সৌজন্যে।

রবিবার। ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাতটা চল্লিশ। ফের তীব্র কম্পনে কেঁপে উঠল মধ্য ইতালির নর্চিয়া শহর। বুধবারের ভূমিকম্পের রেশ তখনও কাটেনি। তার মধ্যে ফের জোরাল কম্পনে শহর জুড়ে আতঙ্ক ছড়ায়। আমেরিকার ভূতাত্ত্বিকদের মতে রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৬। কুড়ি জন আহত হলেও এখনও পর্যন্ত প্রাণহানির কোনও খবর মেলেনি। গত সাড়ে তিন দশকে এটাই ইতালির সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প বলে মনে করছেন ভূতাত্ত্বিকরা।

Advertisement

বিজ্ঞানীরা জানান, মধ্য ইতালির পেরুজা থেকে ৬৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এই কম্পনের উৎসস্থল। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরেই ছিল সেই কেন্দ্র। দক্ষিণ ইতালির বিভিন্ন এলাকাতেও এ দিন কম্পন অনুভূত হয়। তবে তীব্রতা সব চেয়ে বেশি ছিল নর্চিয়া শহরে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাস্তায় ধারে জমানো বড় বড় পাথরগুলি তখন এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গড়াচ্ছে। ভেঙে পড়ছে দু’ধারের বাড়িঘর। খসে পড়া চাঙড়ে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে দাঁড়ানো গাড়িগুলো। ভূমিকম্পের আঁচ পেয়েই রাস্তায় নামেন বাসিন্দারা। চোখের সামনেই গুঁড়িয়ে যায় শহরের প্রাচীন পুরাকীর্তি, সান বেনেদেত্তো ব্যাসিলিকা। মধ্য ইতালির কাস্তেলসান্তাজেলো, প্রেচি বা ভিসসো শহরেও ভূমিকম্প ভাল মতো টের পাওয়া গিয়েছে। নর্চিয়ার প্রশাসন সূত্রের খবর, সান বেনেদেত্তো ব্যাসিলিকা-সহ ধ্বংস হয়েছে বেশ কিছু প্রাচীন স্থাপত্যকীর্তি। এখনও পর্যন্ত আহত ২০। তবে ধ্বংসস্তূপের তলায় কেউ চাপা পড়ে রয়েছেন কি না দেখছে উদ্ধারকারী দল।

রবিবারের এই ভূমিকম্পে নতুন করে আতঙ্কে মানুষজন। রোমের বাসিন্দা সংযুক্তা দাশগুপ্ত প্রেয়ার বললেন, ‘‘তখনও ঘুম ভাঙেনি। হঠাৎ দেখলাম খাটটা খুব দুলছে। ১০-১৫ সেকেন্ড ধরে তো হবেই।’’ জানলা দিয়ে পড়শিদের পালাতে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ঝাড়বাতিটা ভয়ানক দুলছিল। বেঁকে যাচ্ছিল দেওয়ালে ঝোলানো ছবি। খুব ভয় পেয়েছিলাম।’’

Advertisement

গত অগস্টে পেরুজায় এক ভূমিকম্পে প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল আমাত্রিস শহর। মৃত্যু হয়েছিল অন্তত তিনশো জনের। সে বার রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৬.২। যা এ দিনের থেকে অনেকটাই কম। এ বার ক্ষয়ক্ষতি কম কেন? বিজ্ঞানীদের মতে, ভূপৃষ্ঠ থেকে উৎসস্থলের দূরত্বই এর কারণ। অগস্টে কম্পনের উৎসস্থলের ভূপৃষ্ঠের খুবই কাছাকাছি ছিল। ফলে কম্পনের তীব্রতা ছিল অনেকটাই বেশি। এর আগে ১৯৮০ সালে ইতালিতে এক ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়ায়। সে বার কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৯।

প্রশাসনের তরফে উঠে আসছে অন্য একটি যুক্তিও। অগস্টের পর থেকেই মধ্য ও দক্ষিণ ইতালিতে বহু ছোট বড় কম্পন লেগেই রয়েছে। গত বুধবার ৫.৪ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে নড়ে ওঠে নর্চিয়া শহর। তার পরে ভূমিকম্পের আতঙ্কে অনেকেই বাড়ি খালি করে চলে গিয়েছিলেন। যাঁরা যেতে পারেননি তাঁরা অনেকেই আশ্রয় নেন আকাশের তলায় বা গাড়ির ভেতরে। স্কুল-কলেজের ছাত্রাবাস খালি করে পড়ুয়ারা শহর ছেড়েছেন। ফলে জনবিরল শহরগুলিতে প্রাণহানির আশঙ্কা অনেকটাই কমে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন