বার্তা: মুসলিম প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলছেন নিউজ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন। শনিবার ক্রাইস্টচার্চের এক শরণার্থী শিবিরে। ছবি: রয়টার্স।
পরনে কালো পোশাক। মাথা ঢাকা কালো হিজাবে। ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে শ্বেত-সন্ত্রাসে নিহতদের পরিজনের সঙ্গে শনিবার এ ভাবেই দেখা করলেন নিউজ়িল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন। পাশে দাঁড়ালেন তাঁদের। আশ্বস্ত করলেন, এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না-ঘটে, তার জন্য অবিলম্বে বদল আনা হবে দেশের আগ্নেয়াস্ত্র আইনে।
কারণ, চোরাপথে নয়, রীতিমতো আইন মেনে অস্ত্রগুলি কিনেছিলেন গণহত্যায় অভিযুক্ত ব্রেন্টন ট্যারান্ট। ২০১৭ সালের নভেম্বরে তাকে আগ্নেয়াস্ত্র কেনার লাইসেন্স দিয়েছিল নিউজ়িল্যান্ড সরকার।
নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আজ জড়ো হয়েছিলেন ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলে কলেজে। যাঁরা ঘটনাস্থল থেকে কোনও মতে প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফিরেছেন, তাঁদেরও অনেকে ছিলেন। হাজির ছিলেন স্বজনহারাদের অনেকে। কালো ওড়নায় মাথা ঢেকে তাঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান আর্ডের্ন। কথা বলেন প্রত্যেকের সঙ্গে। গত কালের ঘটনায় এখনও অনেকের খোঁজ নেই। তাঁদের বাড়ির লোকেদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী। মুসলিম ধর্মগুরুদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, ‘‘এই মুহূর্তে প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হল মৃতদেহগুলি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া, যাতে তাঁরা যথাযথ ধর্মীয় আচার পালন করে শেষকৃত্য করতে পারেন।’’ আর এর পরের ধাপই হল অস্ত্র আইনে বদল।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে আর্ডের্ন নিজেই জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে ‘ক্যাটেগরি এ’ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল ট্যারান্টকে। তার পর থেকে এক এক করে অস্ত্র কেনা শুরু করে সে। শুক্রবার মসজিদে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র ছিল তার কাছে। দু’টি সেমি অটোমেটিক এবং দু’টি শটগান ছাড়াও আরও একটি আগ্নেয়াস্ত্র। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘সত্যিটা হল এমন— এই লোকটিকে অস্ত্র কেনার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। এবং তার পরই এ রকম মারণাস্ত্র কিনেছিল সে। অতএব ধরেই নিতে পারি, মানুষ এই আইনের বদল চায়। আর আমি সেটাই করব। ঘটনাক্রম পরপর সাজালেই দেখা যাচ্ছে, এর জন্যই ওর লাইসেন্স পাওয়া এবং অস্ত্র কেনা। একটা কথা তাই নিশ্চিত করে বলতে পারি— অস্ত্র আইন বদল হবে।’’ ১৬ বয়স হয়ে গেলেই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা যায় নিউজ়িল্যান্ডে। যিনি আবেদন করেছেন, তাঁর কোনও অপরাধের ইতিহাস আছে কি না, তা এক বার দেখে নেওয়া হলেই ওই লাইসেন্স পরের ১০ বছর বৈধ। এর পর অস্ত্র কিনলে, তা সরকারের খাতায় নথিভূক্তও করতে হয় না নিউজ়িল্যান্ডে। ফলে এই মুহূর্তে সে দেশের পুলিশ জানেই না, কার আছে কত আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। তবে অনুমান, সংখ্যাটা কমপক্ষে ১২ লক্ষ! প্রতি চার জনের মধ্যে এক জনই আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক।
১৯৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ায় পোর্ট আর্থারে একটি কাফেতে এমনই এক গণহত্যায় ৩৫ জন নিহত হয়েছিলেন। তার পরে সে দেশে অস্ত্র-আইন কঠোর করা হয়। নিউজ়িল্যান্ডও সে পথে হাঁটতে চলেছে কি না, জানতে চাওয়া হলে, আর্ডের্ন জানান, এত তাড়াতাড়ি বিশদে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে জানিয়েছেন, নিউজ়িল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়া, কোথাওই ট্যারান্ট এবং তার সহযোগী সন্দেহে ধৃত অন্য দু’জন অপরাধী তালিকায় ছিল না। মুসলিম বিদ্বেষের কথা ইস্তাহারে জানালেও পুলিশের নজরে পড়েনি ট্যারান্ট। তবে এই সব তথ্যের থেকেও আইন বদলে জোর দিচ্ছেন আর্ডের্ন। মনে করিয়ে দিয়েছেন, অতীতেও তিনি অস্ত্র আইন বদলের চেষ্টা করেছিলেন। শেষ বার, ২০১৭ সালেও এ নিয়ে উদ্যোগী হন। কিন্তু শেষমেশ বিষয়টি কার্যকর হয়নি। আজ তাঁর কথায়, ‘‘অনেক সময় গিয়েছে। আর নয়...।’’