৭১৬ কোটিরও বেশি টাকায় বিক্রি কালো ‘খুলি’

অঙ্কটা শুনেই ঘর জুড়ে একটা চাপা চিৎকার। নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কেউ-ই।কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন শিল্পী জঁ-মিশেল বাসকিয়া-র একটি নামহীন ছবি (যেটিকে এখন উল্লেখ করা হচ্ছে ‘স্কাল’ বা ‘খুলি’ নামে) বৃহস্পতিবার ১১ কোটি ডলারে বিক্রি করল নিলাম সংস্থা সোথবি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নিউ ইয়র্ক শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৭ ০৩:০৪
Share:

ভয়ঙ্কর-সুন্দর: জঁ-মিশেল বাসকিয়ার ছবিটি নিয়ে বলছেন নিলাম সংস্থার এক কর্মী। নিউ ইয়র্কে। ছবি: এএফপি।

অঙ্কটা শুনেই ঘর জুড়ে একটা চাপা চিৎকার। নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কেউ-ই।

Advertisement

কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন শিল্পী জঁ-মিশেল বাসকিয়া-র একটি নামহীন ছবি (যেটিকে এখন উল্লেখ করা হচ্ছে ‘স্কাল’ বা ‘খুলি’ নামে) বৃহস্পতিবার ১১ কোটি ডলারে বিক্রি করল নিলাম সংস্থা সোথবি। ভারতীয় টাকায় যার মূল্য ৭১৬ কোটিরও বেশি! এর আগে কখনও কোনও মার্কিন শিল্পীর ছবি ১০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যে বিক্রি হয়নি। সারা পৃথিবীতেই মাত্র খান তিরিশেক ছবি এই ‘১০ কোটি ডলারের ক্লাব’-এ রয়েছে। সেগুলোর বেশির ভাগই আবার পাবলো পিকাসো, ভিনসেন্ট ভ্যান গখ বা গুস্তাভ ক্লিম্‌টের আঁকা। অবশ্য লিওনার্দো দা ভিঞ্চি বা রেম্ব্রান্টের মতো ধ্রুপদী শিল্পীদের ছবি সাধারণত নিলামে ওঠে না।

প্রশ্ন উঠছে, ১৯৮২ সালে আঁকা ৬ ফুট বাই সাড়ে পাঁচ ফুটের ছবিটা কি সত্যিই এত ‘দামি’?

Advertisement

শিল্প সমালোচকেরা এক বাক্যে বলছেন— হ্যাঁ। কারণ, আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের রক্তক্ষরণের দলিল এই ছবি। একটা কালো খুলি, তা থেকে ঝরে পড়ছে রক্ত। রক্ত চোখের কোটরে, দাঁতের ফাঁকে। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে কপাল ও কান থেকে। ছবিটি যেন একটা নীল দেওয়ালের উপর আঁকা, যে দেওয়ালে কেউ অঙ্ক কষছিল। কীসের অঙ্ক? আফ্রিকা থেকে জাহাজে গাদাগাদি করে আমেরিকায় নিয়ে আসার সময়ে কত জন ক্রীতদাস মারা গিয়েছিলেন, সেই অঙ্ক? নাকি গত কয়েক বছরে পুলিশের গুলিতে কত জন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ নিহত হয়েছেন, সেই হিসেব? শিল্প সমালোচকেরা বলছেন, এই সব অস্বস্তিকর প্রশ্ন খুঁচিয়ে তুলেছে বলেই বাসকিয়ার এই ছবিটি এত দামি। শিল্পের নিরিখে। ইতিহাসের মাপকাঠিতেও।

আরও পড়ুন: জো খেলে ওহি খিলে, সচিনকে বললেন মোদী

মার্কিন নিও-এক্সপ্রেশনিজম-এর বাইরে বাসকিয়া খুবই স্বল্প পরিচিত একটি নাম। জন্ম ১৯৬০ সালে, নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে। দশম শ্রেণির পরে স্কুল ছেড়ে দেন। রেগে গিয়ে বাড়ি থেকে ছেলেকে বার করে দিয়েছিলেন জঁ-মিশেল-এর বাবা। ব্রুকলিনের অলিগলিতে বন্ধুদের সঙ্গে দিনরাত কাটত। পেট চলত হাতে আঁকা টি-শার্ট আর পোস্টকার্ড বিক্রি করে। ছোটবেলা থেকেই ম্যানহাটনের দেওয়ালে দেওয়ালে গ্রাফিটি করে বেড়াতেন। সাতের দশকের শেষ থেকে শিল্পী হিসেবে তাঁর খ্যাতি চড়চড় করে বাড়তে থাকে। প্রদর্শনী হয় দেশে, বিদেশেও। ১৯৮৮ সালে, ২৮ বছর বয়সে, অতিরিক্ত মাদক খেয়ে মারা যান শিল্পী। যে ছবিটি কাল নিলামে উঠেছিল, সেটি শিল্পীর ২১ বছর বয়সে আঁকা।

নিউ ইয়র্কের সোদবিতে দশ মিনিটের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ছবিটা কিনে নেন ৪১ বছর বয়সি জাপানি কোটিপতি, শিল্পপতি ও শিল্পানুরাগী ইউসাকু মেজাওয়া। জাপানের চিবা শহরে একটি শিল্প সংগ্রহশালা খুলতে চান তিনি। এর আগেও বাসকিয়ার আঁকা বেশ কয়েকটি ছবি কিনেছেন ইউসাকু। সাম্প্রতিকতম সংগ্রহ সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রায় তিরিশ বছর লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল এই ছবিটা। তাই নিজের সংগ্রহশালায় রাখার আগে আমি সেটি বিভিন্ন মিউজিয়ামে পাঠাতে চাই। আমি যে ভাবে ছবিটি দেখে মুগ্ধ হয়েছি, আশাকরি, সবাই তাই হবেন।’’

এক সাক্ষাৎকারে বাসকিয়া বলেছিলেন, ‘‘বিশ্বাস করুন, বা না করুন... আমি কিন্তু একটু-আধটু আঁকতে পারি।’’ তাঁর মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পরে সেই প্রত্যয়কেই ফের স্বীকৃতি দিল ‘খুলি’-র নিলাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন