স্বর্গ বা নরকের অস্তিত্ব আদৌ রয়েছে কি না- তা জানা নেই কারও। তবে স্বর্গ বা নরক দেখতে কেমন হতে পারে, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চালিয়ে যায় মানুষ।
নরক মানেই ভয়ঙ্কর একটা জায়গা, যেখানে নাকি সমস্ত পাপের বিচার হয়, মৃত্যুর পর খুব কষ্ট করে থাকতে হয়। সেখানে স্বর্গ মানেই সুখের বাড়ি। চারদিক সৌন্দর্যে ভরপুর।
নরক দর্শনের ইচ্ছা প্রায় কারও নেই। কিন্তু স্বর্গ ঘুরে দেখার প্রস্তাবে সকলেই রাজি। কিন্তু স্বর্গের ঠিকানা জানা আছে কি? না জানা থাকলে এখানেই জেনে নিন। আপনাদের জন্যই ঠিকানা দেওয়া হল ‘স্বর্গ’র।
এই স্বর্গে পৌঁছতে গেলে প্রথমে পৌঁছতে হবে চিনের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে। এই দক্ষিণ-পশ্চিম অংশেই রয়েছে সিচুয়াং প্রদেশ। আর সিচুয়াং প্রদেশই হল স্বর্গের প্রবেশদ্বার।
এই স্বর্গ রয়েছে এই পৃথিবীতেই। সিচুয়াং প্রদেশের উত্তর দিকে। তার নাম জিওজাইগো ভ্যালি। অসামান্য প্রাকতিক সৌন্দর্যের জন্য একে পথিবীর স্বর্গও বলা হয়।
মন ভোলানো সৌন্দর্যের জন্যই এই ভ্যালিকে পৃথিবীর স্বর্গ বলা হয়। মিন পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত এই উপত্যকা ৭২ হাজার হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। জলপ্রপাত, রংবেরঙের হ্রদ, তুষারাবৃত পর্বত চূড়া... সম্পূর্ণ অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে এই উপত্যকাকে।
জিওজাইগো শব্দের অর্থ হল নয় উপত্যকা। এই অঞ্চলে নটা তিব্বতি গ্রাম ছিল। সেই থেকেই এমন নামকরণ হয়েছে উপত্যকার। চিনের অধীনে থাকা সত্ত্বেও এই অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে করোনার প্রকোপমুক্ত।
১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এই উপত্যকার কথা প্রায় কেউই জানতেন না। ১৯৮২ সালে এই অঞ্চলকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে চিন সরকার।
পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় ১৯৮৪ সালে। ১৯৯২ সালে ইউনেসকো এটাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করে এবং ১৯৯৭ সালে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ঘোষিত হয়।
এই উপত্যকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতটাই বেশি যে, পর্যটকদের জন্য তা খোলার পর থেকেই যেন ঢল নামতে শুরু করে।
প্রতি বছরই পর্যটকদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। যেমন ১৯৮৪ সালে পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচ হাজার। ১৯৯১ সালে সেটা দাঁড়ায় ওক লক্ষ ৭০ হাজারে। ১৯৯৭ সালে আরও বেড়ে গিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়ায় দুই লক্ষে।
যে নয়টা গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছিল এই উপত্যকা, তার মধ্যে ৭টা গ্রামে এখনও বসতি রয়েছে। সব মিলিয়ে মোটামুটি এক হাজার মানুষের বাস এই উপত্যকায়।
আগে চাষবাসই ছিল এই সমস্ত মানুষের জীবিকা। তবে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষিত হওয়ায় পর থেকে এই এলাকায় চাষবাস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। পর্যটন শিল্পের উপরই তাঁদের জীবন নির্ভর করে এখন।