ট্রাম্পে আপত্তি, বিতর্কে ব্রিটিশ স্পিকার

টেমসের তীরে প্রতিবাদের ঝড়। পিটিশনে সই কিংবা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ ছিলই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধিতায় এ বার সুর চড়ালেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন বারকাও। নজিরবিহীন ভাবেই। তাঁর বক্তব্য— ‘‘মানবাধিকার, ন্যায় আর সাম্য নিয়ে যেখানে বারাক ওবামা, নেলসন ম্যান্ডেলারা

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৪
Share:

টেমসের তীরে প্রতিবাদের ঝড়।

Advertisement

পিটিশনে সই কিংবা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ ছিলই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধিতায় এ বার সুর চড়ালেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন বারকাও। নজিরবিহীন ভাবেই। তাঁর বক্তব্য— ‘‘মানবাধিকার, ন্যায় আর সাম্য নিয়ে যেখানে বারাক ওবামা, নেলসন ম্যান্ডেলারা বক্তৃতা দিয়েছেন, পার্লামেন্টের সেই মঞ্চে আর যাই হোক ট্রাম্পকে বলতে দেওয়া যায় না।’’

ট্রাম্প যে ভাবে রাতারাতি সিরিয়া-ইরাক-ইরানের মতো সাত মুসলিম দেশের আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, স্পিকারের আপত্তি সেখানেই। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপ ‘মানবাধিকার বিরোধী ও জাতিবিদ্বেষমূলক’ বলে গতকাল হাউস অব কমন্সেই মন্তব্য করেন জন বারকাও। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তাই ‘প্রবেশ নিষেধ’ ট্রাম্পের।

Advertisement

তা হলে তাঁর ব্রিটেন সফরের কী হবে? এখনও দিন ঠিক হয়নি। তবে এ বছরই মাঝামাঝি কিংবা শেষের দিকে লন্ডনে পা রাখার কথা ট্রাম্পের। গত মাসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে নিজে গিয়ে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছেন ওয়াশিংটনে। আর তার পর থেকেই ট্রাম্প-বিরোধিতায় সুর চড়িয়েছে রানির দেশ। আর এ বার বেঁকে বসলেন হাউস অব কমন্সের স্পিকার। সোল্লাসে তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন এমপি-দের একটা বড় অংশও। বারকাও বলেন, ‘‘দু’দেশের সম্পর্ককে সম্মান করি। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমি পার্লামেন্টে ট্রাম্পের বক্তৃতা দেওয়ার বিরুদ্ধে।’’

কিন্তু সেটা কি তিনি বলতে পারেন? প্রশ্ন উঠছে পার্লামেন্টেরই অন্দরে। এক জন স্পিকার নিরপেক্ষ হবেন— এমনটাই দস্তুর। অথচ তাঁর মন্তব্যে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। আইনজীবীরা বলছেন— স্পিকারের কাজ, হাউসে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং গুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয়ে হাউসের অবস্থান প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা। তা-ও প্রকাশ্যে নয়, বরং ব্যক্তিগত ভাবেই। তাই ট্রাম্পের পার্লামেন্ট প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে চেয়ে বারকাও পার্লামেন্টেরই ঐতিহ্য ভেঙেছেন বলে মত একাংশের। ব্রেক্সিট-পন্থী প্রাক্তন ইউকিপ নেতা নাইজেল ফারাজের যেমন দাবি, ‘‘এক্তিয়ারের
বাইরে গিয়ে ট্রাম্পকে অপমান করেছেন স্পিকার।’’

তা ছাড়া, গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রনায়কদের পার্লামেন্টে বক্তৃতা দিতে দেওয়াটা ব্রিটেনে ঐতিহ্যেরই মতো। সম্মান প্রদর্শনও। কিন্তু ট্রাম্পের অভিবাসী-নির্দেশিকার জের টেনে স্পিকার বলেন, ‘‘এই সম্মান অর্জন করে নিতে হয়। এমনিতেই পাওয়া যায় না। ব্রিটেন সফরে এলে কোনও রাষ্ট্রনেতাকে যে পার্লামেন্টে বলতেই হবে, তারও কোনও মানে নেই।’’

প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০১১-য় পার্লামেন্টের ওয়েস্ট মিনস্টার হলে বক্তৃতা করেন বারাক ওবামা। ২০১৫-য় এসেছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তখনও হাউস অব কমন্সের স্পিকার ছিলেন বারকাও। সে বারও নিজের ‘গণ্ডি’ টপকেছিলেন তিনি। তবে প্রতিবাদে নয়, নরেন্দ্র মোদীর ঢালাও প্রশংসায়। ভারতেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন