বিশেষ প্রশিক্ষণ ছাড়া নামাই বারণ

পাহাড় ঘেরা কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামতে গেলে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। ভারতের লেহ বিমানবন্দরের পরে কাঠমান্ডুকেই এই গোলার্ধের অন্যতম ভয়ঙ্কর বিমানবন্দর বলে মনে করা হয়।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ০২:৪৭
Share:

বিমান দুর্ঘটনার পর। কাঠমান্ডুতে। ছবি: এএফপি।

আর দশ জন পাইলট, যাঁরা নিয়মিত কলকাতা-দিল্লি, দিল্লি-মুম্বইয়ের মতো রুটে যাত্রী নিয়ে উড়ে বেড়ান, চাইলেই তাঁরা কেউ কাঠমান্ডুতে নামতে পারবেন না।

Advertisement

পাহাড় ঘেরা কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামতে গেলে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। ভারতের লেহ বিমানবন্দরের পরে কাঠমান্ডুকেই এই গোলার্ধের অন্যতম ভয়ঙ্কর বিমানবন্দর বলে মনে করা হয়। ভয়ঙ্কর— কারণ, রানওয়ের চার দিকেই পাহাড়। বিমানকে নেমে আসতে সাহায্য করার আধুনিক ইন্সট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম সেখানে নেই। তা বসানোর উপায়ও নেই।

কাঠমান্ডুতে রানওয়ের উত্তর দিকে (০২) নামতে গেলে ২৪০০ মিটার উপর থেকে রানওয়ে পরিষ্কার দেখতে পাওয়া দরকার। দক্ষিণ দিকে (২০) নামতে গেলে রানওয়ে দৃশ্যমান হতে হবে ৫০০০ মিটার উপর থেকে। সোমবার এই ‘রানওয়ে ২০’-তেই নামতে গিয়ে ভেঙে পড়েছে ইউএস বাংলার বিমান।

Advertisement

উত্তর দিকে তা-ও রানওয়ে দেখতে পেলে সরাসরি নামা যায়। সে দিকে দু’টি ছোট ছোট যন্ত্র রয়েছে। যা বিমানের সঙ্গে রানওয়ের দূরত্ব এবং ঠিক কোন কোণে বিমান নামবে, তা জানিয়ে দেয়। কিন্তু দক্ষিণ দিকে রানওয়ের গায়েই পাহাড়। কোনও সাহায্যকারী যন্ত্র নেই। সে দিক দিয়ে রানওয়ে পরিষ্কার দেখতে পেলেও কিছুটা নেমে আসার পরে গোল করে চক্কর কেটে উচ্চতা কমাতে হয় বিমানকে। সোমবারের দুর্ঘটনার পরে ইউএস বাংলার পাইলট ও এটিসি-র কথোপকথন থেকে মনে করা হচ্ছে, দক্ষিণ দিকে চক্কর কেটে নামার সময়ে পাইলটের চোখের সামনে থেকে হারিয়ে গিয়েছিল রানওয়ে। পরে যখন তিনি রানওয়ে দেখতে পান, তখন বোধ হয় দেরি হয়ে গিয়েছিল।

আগে সমস্ত বিমানকে যে কোনও দিক দিয়েই কাঠমান্ডুতে নামার অনুমতি দেওয়া হতো। কিন্তু বড় বিমান নিয়ে দক্ষিণ দিকে নামাটা এত ঝুঁকির হয়ে যাচ্ছিল যে, তিন বছর আগে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন কলকাতা থেকে যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার এয়ারবাস-৩২০ বিমান কোনও কারণে উত্তর দিকের আকাশ থেকে রানওয়ে পরিষ্কার দেখতে না পেলে তাকে ফিরেই আসতে হয়। দক্ষিণ দিক থেকে শুধু এটিআর, বম্বার্ডিয়ারের মতো ছোট বিমানকে নামার অনুমতি দেওয়া হয়। সোমবার যে বিমানটি ভেঙে পড়ে, সেটিও বম্বার্ডিয়ার ছিল।

নিয়মিত কাঠমান্ডুতে উড়ে যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার প্রশিক্ষক-পাইলট জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কাঠমান্ডুতে যেতে গেলে পাইলট এবং কো-পাইলট, দু’জনকেই ‘সিমুলেটর’-এ প্রশিক্ষণ নিতে হয়। হায়দরাবাদে এই সিমুলেটর রয়েছে।’’ সিমুলেটর একেবারে আসল বিমানের মতোই। তার ককপিটে বসে বিমান চালানোর অনুশীলন করা যায়। সিমুলেটরের ককপিটে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে অবতরণ ‘সেট’ করে প্রশিক্ষণ নিতে হয় পাইলটদের। এর পরে যাত্রীবোঝাই উড়ানে প্রশিক্ষক পাইলটের পাশে বসে হাতে-কলমে কাঠমান্ডুতে নামার প্রশিক্ষণ নিতে হয় পাইলটকে। একে পরিভাষায় বলে ‘রুট চেক’। তিন বার সেই রুট চেক-এ পাশ করলে তবেই কাঠমান্ডুতে উড়ান নিয়ে যাওয়ার অনুমতি মেলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন