উত্তর কোরিয়া

পরমাণু পরীক্ষার তোড়জোড়, সন্দেহ বাড়াচ্ছে উপগ্রহের ছবি

আশঙ্কাটা ছিলই। এ বার প্রমাণও মিলল জুতসই। প্রায় বছর চল্লিশ পর দেশে পার্টি কংগ্রেসের আয়োজন করেছেন কিম জং-উন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

পিয়ংইয়ং শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০২:৫২
Share:

আশঙ্কাটা ছিলই। এ বার প্রমাণও মিলল জুতসই।

Advertisement

প্রায় বছর চল্লিশ পর দেশে পার্টি কংগ্রেসের আয়োজন করেছেন কিম জং-উন। এই ঐতিহাসিক সম্মেলনের মাঝে নিজের শক্তি পরখ করতে তিনি যে ফের পরমাণু বিস্ফোরণের ছক কষছেন, এত দিন তা অনুমান করছিলেন বিরোধীরা। শনিবার আমেরিকার এক বাণিজ্যিক উপগ্রহের পাঠানো ছবিতে এ বার সত্যিই ধরা পড়ল পিয়ংইয়ংয়ের তৎপরতা।

মার্কিন ওয়েবসাইট ‘৩৮ নর্থ’-এর দাবি, বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ার কম্যান্ড সেন্টারে বেশ কয়েকটি গাড়ি ঢুকতে দেখা গিয়েছে। দেশের যে অংশে সাধারণত পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণগুলি হয়, সেই পুঙ্গাই-রি থেকে এই সেন্টারের দূরত্ব প্রায় ৪ মাইল। এমনিতে মানুষের আনাগোনা খুব একটা চোখে পড়ে না এখানে। কিন্তু বিস্ফোরণের দিন ঘনিয়ে
এলেই হঠাৎ যেন জেগে ওঠে এই কম্যান্ড সেন্টার। শেষ কয়েকটি পরীক্ষার সময় ঠিক এমনটাই ঘটেছিল। এ বারও তাদের এই সক্রিয়তা তাই নজর কেড়েছে সকলের। এই সব দেখে জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের আমেরিকা-কোরিয়া ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞরাও জানাচ্ছেন, ক’দিনের মধ্যেই কিমের নতুন চমক দেখার জন্য তৈরি থাকুন!

Advertisement

কী ধরনের পরীক্ষা চালানো হবে, তারও মোটামুটি একটা ধারণা দিয়েছেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এ বারের বিস্ফোরণ হবে মাটির তলায়।

শাসকের সুর যে চড়া তারে বাঁধা থাকবে, তার একটা ইঙ্গিত মিলেছিল গত কালই। রাজধানী পিয়ংইয়ং-এ দলীয় সম্মেলনের শুরুর দিনেই বক্তৃতা দিয়েছেন তরুণ শাসক কিম জং-উন। আর্থিক অবক্ষয় রুখতে তিনি কোনও নতুন দিশা দেখাতে পারেন কি না, দেশ-বিদেশের নজর ছিল সে দিকে। কিন্তু শুক্রবার ওই পথই মাড়াননি কিম। উল্টে মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছেন, তাঁর হাইড্রোজেন বোমা ও দূর-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঠেলায় একেবারে গুঁড়িয়ে গিয়েছে বিরোধী শক্তি। নিজেদের শক্তি পরীক্ষার কথা যখন সগর্বে জানাচ্ছেন তিনি, উঠে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সভায় উপস্থিত ৩৪০০ শ্রোতার প্রত্যেকে।

আন্তর্জাতিক মহলে এর জন্য তিনি যতই কোণঠাসা হোন না কেন, পার্টি কংগ্রেসে বিশেষ তকমাও যে এর জোরেই হাসিল করেছেন তিনি। প্রায় ছ’বছর ধরে দেশ শাসন করলেও এত দিন দলে তাঁর পদ ছিল ফার্স্ট সেক্রেটারির। নিজের জীবনের প্রথম পার্টি কংগ্রেসেই পদোন্নতি হল কিমের। এ বার তিনিও হলেন দলের সাধারণ সম্পাদক। বিশেষজ্ঞদের দাবি, শনিবার পার্টি কংগ্রেসে এই নতুন তকমা
মেলার ফলে এক ঢিলে দু’টো কাজ সেরে ফেলেছেন কিম। উত্তর কোরিয়ার এত দিন শেষ কথা তিনিই ছিলেন। কিন্তু সম্মেলনের আয়োজন করে এ বার তাতে রীতিমতো সিলমোহর লাগিয়ে নিলেন তিনি। পাশাপাশি, বার্তা দিলেন— আন্তর্জাতিক দুনিয়া তাঁকে যতই ব্রাত্য করে রাখুক, নিষেধাজ্ঞার চোখরাঙানিতে ডরাচ্ছেন না কিম জং। উল্টে এতে আরও জোরালো হবে তাঁর হুঙ্কার।

পরমাণু অস্ত্রে শান দিতে ব্যস্ত শাসক বাইরের দুনিয়ার আর্থিক নিষেধাজ্ঞাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু এতে অশনি সঙ্কেত দেখছেন অনেকে। নরওয়ে, ব্রিটেন ও ইজরায়েলের তিন নোবেলজয়ী গিয়েছিলেন প্রায় বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপরাষ্ট্রে। অন্য সময় তো সুযোগ মেলে না। পার্টি কংগ্রেসের জন্যই উত্তর কোরিয়ার দরজা খুলেছিল তাঁদের সামনে। দেশের হাসপাতাল ও গবেষণাগার ঘুরে রীতিমতো শিউরে উঠেছেন তাঁরা। বাইরে থেকে খাবার-ওষুধ আমদানি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিমের দেশে ঘুরে এসে অবিলম্বে এই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পক্ষে আজ সওয়াল করেছেন তাঁরা। একই সঙ্গে মানুষকে না খাইয়ে রেখে অস্ত্র পরীক্ষায় মাতলে লাভ যে বিশেষ হবে না, সেই হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ওই তিন নোবেলজয়ী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন