বিজয় মাল্যের (ডান দিকে) জন্মদিনের পার্টিতে ললিত মোদী (বাঁ দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
দিন কয়েক আগেই বন্ধু বিজয় মাল্যের জন্মদিনের পার্টিতে বেফাঁস মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল আইপিএল-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান ললিত মোদীকে। প্রকাশ্যে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘আমরাই ভারতের সবচেয়ে বড় পলাতক!’ সেই ভিডিয়ো নিয়ে বিতর্কের মুখে এ বার সমাজমাধ্যমে ক্ষমা চাইলেন ললিত।
সোমবার সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে ভারত সরকারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ললিত। ঠিক কী কারণে ক্ষমা চাইছেন, পোস্টে তা স্পষ্ট না করলেও আগের ভিডিয়োর দিকেই ইঙ্গিত করেছেন তিনি। সোমবার সকালে সমাজমাধ্যম এক্স-এ ললিত লেখেন, ‘‘আমি যদি কারও অনুভূতিতে আঘাত করে থাকি, তা হলে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। বিশেষত, ভারত সরকারের প্রতি আমার সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা এবং সম্মান রয়েছে। আমার বিবৃতির ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমি কখনওই ও ভাবে কথাটি বলতে চাইনি। আবারও আমি গভীর ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।’’
গত সপ্তাহে লন্ডনে বিজয়ের জন্মদিনে জাঁকজমকপূর্ণ একটি পার্টিতে ললিতকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমরা দু’জন পলাতক, ভারতের সবচেয়ে বড় পলাতক!’’ নিজের সমাজমাধ্যমের পাতায় সেই ভিডিয়ো পোস্ট করেন ললিত। ক্যাপশনে লেখেন, ‘‘আবার আমি ইন্টারনেটে ঝড় তুলতে চলেছি! এটা আপনাদের জন্যই, ঈর্ষায় আপনাদের হৃদয় ভরে যাক।’’ এই পোস্টের পরেই বিতর্কের ঝড় ওঠে সমাজমাধ্যমে। নেট ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ এও বলেন, এটি ‘ভারত সরকারের প্রতি কটাক্ষের শামিল’। প্রতিক্রিয়া জানায় ভারতের বিদেশ মন্ত্রকও। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘‘যারা আইনের চোখে পলাতক, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আমরা সম্পূর্ণ রূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু এই প্রত্যর্পণের নানা জটিল আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যেই কিছু দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি, যাতে পলাতকদের ভারতে ফিরিয়ে এনে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা যায়।’’ বিতর্কের মুখে পরে সেই ভিডিয়ো মুছে দেন ললিত।
এমনিতে পলাতক ললিত ও বিজয়কে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রাক্তন সহ-সভাপতি ললিতের বিরুদ্ধে বিপুল অঙ্কের আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। তাঁর হাত ধরেই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএল-এর সূচনা হয়েছিল। অভিযোগ, আইপিএলের শীর্ষপদে থাকাকালীন প্রচুর টাকার আর্থিক দুর্নীতি করেছিলেন ললিত। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রচুর টাকাও তিনি নয়ছয় করেছিলেন বলে অভিযোগ। শাস্তি এড়াতে ২০১০ সালে ভারত ছাড়েন ললিত। লন্ডনে গিয়ে থাকতে শুরু করেন। সম্প্রতি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র ভানাটুর নাগরিকত্বও পেয়েছিলেন তিনি। যদিও নাগরিকত্ব পাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর পাসপোর্ট বাতিল করে দেয় ভানাটু। অন্য দিকে, বিজয় মাল্য ছিলেন ‘কিংফিশার’ উড়ান সংস্থার (বর্তমানে অস্তিত্বহীন) মালিক। ১৭টি ভারতীয় ব্যাঙ্ক থেকে কিংফিশার এয়ারলাইন্সের জন্য প্রায় ন’হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই টাকা মেটাতে পারেননি। ২০১৬-র মার্চ মাসে লুকিয়ে দেশ ছেড়ে পালান মাল্য। ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল লন্ডনে গ্রেফতার হন তিনি। কিন্তু গ্রেফতারির তিন ঘণ্টার মধ্যেই জামিনে মুক্তি পেয়ে যান মাল্য। ললিত ও মাল্য, দু’জনকেই দেশে ফেরানোর জন্য দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত।