লশকর নেতা আমির হামজ়া। ছবি: সংগৃহীত।
গুরুতর আহত জঙ্গি সংগঠন লশকর-এ-ত্যায়বার সহ-প্রতিষ্ঠাতা আমির হামজ়া। কী ভাবে তিনি আহত হলেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বাড়িতেই জখম হন আমির। তার পরেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, লশকরের ম্যাগাজিনের সম্পাদক ৬৬ বছর বয়সি আমির নিজের বাড়িতেই জখম হয়েছেন। তড়িঘড়ি তাঁকে লাহৌরের একটি সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আইএসআই-এর নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে রেখেই চিকিৎসা চলছে তাঁর। আশঙ্কা, কেউ বা কারা আমিরের উপর হামলা চালিয়ে থাকতে পারে! উল্লেখ্য, দিন তিনেক আগেই লশকরের অন্যতম নেতা আবু সইফুল্লা খুন হন অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীদের হাতে। তার পর থেকেই লশকরের বিভিন্ন নেতার নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত সংগঠন। সেই আবহে আমিরের জখম হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রহস্য দানা বাঁধছে।
মঙ্গলবার লশকরপন্থী ‘টেলিগ্রাম’ চ্যানেলগুলিতে আমিরের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। অনেকেই ‘সঙ্কটের সময়’ দৃঢ় এবং সঙ্ঘবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের গুজরানওয়ালা শহরের বাসিন্দা আমির। ২০১২ সালের অগস্টে আমেরিকা তাঁকে বিশ্বব্যাপী ‘সন্ত্রাসী’ বলে ঘোষণা করে। লশকর প্রধান হাফিজ় সঈদ এবং আব্দুল রহমানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আমির বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের নেপথ্যে ছিলেন বলে দাবি গোয়েন্দাদের। হাফিজ়ের হাত ধরেই লশকরের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসেন তিনি।
লশকরের প্রচার পরিচালনা করার মূল দায়িত্বই আমিরের কাঁধে। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে ভারতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সইফুল্লার সঙ্গে মিলে ২০০৫ সালে বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সে’ হামলার নীল নকশা (ব্লু প্রিন্ট) তৈরি করেছিলেন আমির। ২০১৮ সালে লশকর এবং জামাত-উদ-দাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির পরই হাফিজ়ের কথায় ‘জইশ-ই-মানকাফা’ নামে নতুন এক সংগঠন তৈরি করেন আমির। সেই সময় অনেকেরই ধারণা ছিল, লশকরের মধ্যে ফাটলের কারণেই নতুন সংগঠনের আবির্ভাব, এই পদক্ষেপ ভিতর থেকে লশকরকে দুর্বল করে দেবে বলে মনে করেছিলেন অনেকে। তবে আদৌ তা হয়নি। গোয়েন্দাদের মতে, নতুন সংগঠন ছিল ‘চোখে ধুলো’ দেওয়ার এক কৌশলমাত্র।
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকেই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে কেন্দ্রে করে ভারত এবং পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে নতুন করে। ভারতের দাবি, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে মদত দিচ্ছে এবং জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছে। যদিও ইসলামাবাদের দাবি, তারা এমন কোনও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নয়। তারাও সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষেই। সেই আবহেই ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘সিঁদুর’ অভিযানে ‘পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটি উড়িয়ে দেয়। তার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে যুদ্ধবিরতির কারণে সেই অস্থিরতা প্রশমিত হলেও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারত যে তাদের অবস্থানে অনড় থাকবে, তা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে।