ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।
সংঘর্ষবিরতি সংক্রান্ত ট্রাম্পের দাবি উড়িয়ে দিলেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “আমেরিকার সঙ্গে এখনও পর্যন্ত আমাদের সংঘর্ষবিরতির বিষয়ে কোনও চুক্তি হয়নি। তবে ইজ়রায়েল নতুন করে হামলা না করলে, আমরাও আর সংঘাতে জড়াব না।”
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংঘর্ষবিরতি ঘোষণার কিছু ক্ষণের মধ্যেই আমেরিকার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজ়েনটেটিভসের স্পিকার মাইক জনসন তাঁর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “ট্রাম্প একটি অসাধারণ পদক্ষেপ করলেন। এটা সম্পূর্ণ ট্রাম্পের কৃতিত্ত্ব। আমরা দীর্ঘ দিন এটা দেখিনি। ক্যাপিটল হিলে এটা সত্যিই বড় স্বস্তি।”
ইজ়রায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির কথা ঘোষণা করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সোমবার গভীর রাতে (ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৩টে নাগাদ) ট্রাম্প তাঁর সমাজমাধ্যম ‘ট্রুথ’-এ সংঘর্ষবিরতি ঘোষণার কথা জানান।
সমাজমাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পোস্ট।
তিনি লেখেন, “এই সংঘর্ষবিরতির সিদ্ধান্তে ইরান ও ইজ়রায়েল দু’দেশই সহমত হয়েছে। আগামী ৬ ঘণ্টার মধ্যেই সম্পূর্ণ সংঘর্ষবিরতি শুরু হবে। প্রথমে ইরান সংঘর্ষবিরতি শুরু করবে এবং তার ১২ ঘণ্টা পরে ইজ়রায়েল তা অনুসরণ করবে। ২৪ ঘণ্টা পর দু’ দেশের মধ্যে ১২ দিনের টানা যুদ্ধ শেষ বলে ঘোষণা করা হবে। এক পক্ষের সংঘর্ষবিরতি চলাকালীন অপর পক্ষকেও শান্তি বজায় রাখতে হবে।”
ট্রাম্প তাঁর সমাজমাধ্যমে দু’দেশকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি লেখেন, “১২ দিনের যুদ্ধ শেষ করার মতো ক্ষমতা, সাহস ও বুদ্ধিমত্তা আছে এই দুই দেশেরই। তাই তাদেরকে জানাই অভিনন্দন। এই সংঘর্ষ বছরের পর বছর ধরে চলতে পারত। গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দিতে পারত এই সংঘর্ষ। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই যে এটা হয়নি। আর হবেও না। ঈশ্বর সকলকে রক্ষা করুক।”
তবে, এখনও পর্যন্ত ইরান বা ইজ়রায়েলের তরফ থেকে সরকারি ভাবে এ বিষয়ে কোনও বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
কাতারের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাজেদ বিন মহম্মদ আল আনসারি বলেন, “কাতারে মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ইরানের এই হামলা আমাদের কাছে একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা।”
কাতারের সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, কুয়েত এবং বাহরাইন তাদের আকাশসীমা আবার খুলে দিয়েছে।
সোমবার কাতারের একটি বিমানঘাঁটিতে ইরানের হামলার কারণে সাময়িক ভাবে কুয়েত এবং বাহরাইন তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছিল। পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় আবার তারা তাদের আকাশসীমা খুলে দিয়েছে।
ফের হুঁশিয়ারি দিলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। তিনি বলেন, “আমরা কারও কাছে আত্মসমর্পণ করব না। আমরা কোনও আইন লঙ্ঘন করিনি। কোনও দেশ আইন লঙ্ঘন করলে আমরা সেটা সহ্য করব না।”
সৌদি আরব ইরানের এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। তারা জানিয়েছে ইরান আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।
এই ঘটনার পর কূটনৈতিক সমাধানের পথ বেছে নেওয়ার আহ্বান জানালেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ।
ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ বলেছে, “আমাদের সঙ্গে কাতারের একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। সে দেশের মানুষজনের ক্ষতি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তাঁদের কোনও বিপদ হোক, সেটা আমরা চাই না।”
হামলার কথা স্বীকার করেছে আমেরিকা। যদিও সে দেশের এক প্রতিরক্ষা আধিকারিক জানিয়েছেন, এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
কাতারের বিদেশ মন্ত্রক এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এই ঘটনায় কাতারের সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
কাতারের মার্কিন সেনাঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এক এক করে বেশ কয়েকটি বিমান সংস্থা ইতিমধ্যেই তাদের উড়ান পরিষেবা বাতিল করে দিচ্ছে। ইজিপ্ট এয়ারের পর এ বার এয়ার ইন্ডিয়া একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে তাদের বিমান বাতিলের কথা।
ইন্ডিগো বিমান সংস্থা একতি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বর্তমান এই পরিস্থিতিতে একাধিক বিমানের সময় বদল হতে পারে বা জায়গা পরিবর্তন হতে পারে।
স্পাইস জেট বিমান সংস্থাও বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, কাতারের আকাশসীমা সাময়িক বন্ধ হওয়ার কারণে একাধিক বিমানের সময় বদলানো হয়েছে। এর ফলে অনেক বিমানের সময়েও বদল হয়েছে।
নিরাপত্তার কারণে বিমান সংস্থা ইজিপ্ট এয়ার কায়রো থেকে উপসাগরীয় দেশগুলিতে সমস্ত বিমান বাতিল করেছে।
কাতারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল। আল-উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর উদ্বেগের কোনও কারণ নেই বলেও জানিয়েছে তারা।
কাতারের বর্তমান পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে দোহার ভারতীয় দূতাবাস। কাতারে বসবাসকারী ভারতীয়দের সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে, সকলকে শান্ত থাকার এবং কাতার প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলার পরামর্শও দিয়েছে ভারতীয় দূতাবাস।
কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে এ বার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল ইরান। সে দেশের সশস্ত্র বাহিনী এই হামলার কথা স্বীকার করেছে। সোমবার রাতে (ভারতীয় সময়) কাতারের রাজধানী দোহায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি করা হয়, দোহার আকাশে আলোর রেখা দেখা যায়।