brazil

প্রতি বছর মানুষ-দোসরের কাছে ফেরার জন্য ৮ হাজার কিমি সমুদ্রপথ পাড়ি দেয় পেঙ্গুইন

কিন্তু ডিনডিম সবাইকে ভুল প্রমাণ করল। চার বছর পর সে ফিরে এল জোয়াওয়ের কাছে। তার পর থেকে ফি বছর চলছে এই প্রত্যাবর্তন।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২০ ১২:০০
Share:
০১ ১৭

লকডাউনের নির্বান্ধব সময়ে তাক লাগিয়ে দেয় এক বৃদ্ধ ও তার বন্ধু পেঙ্গুইনের গল্প। অবশ্য একে গল্প না বলে ডাকাই যায় গল্প হলেও সত্যি নামে।

০২ ১৭

এই ঘটনা ফুটবলের দেশ ব্রাজিলের অন্যতম শহর রিও ডি জেনেইরো-র। তার উপকূলীয় অংশের এক দ্বীপে থাকেন জোয়াও পেরেইরা ডি’সুজা। রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন তিনি, এখন মাছ ধরেন। কিছুটা নেশায়, কিছুটা বাড়তি রোজগারের চেষ্টায়।

Advertisement
০৩ ১৭

সে ভাবেই অতলান্তিক মহাসাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন ২০১১ সালের এক দিন। সৈকত থেকে উদ্ধার করেন একটি ছোট্ট পেঙ্গুইনকে। তার সারা দেহে ছিল তেলের ঘন প্রলেপ। খিদেয় ক্লান্ত প্রাণীটি হারিয়েছিল চলার শক্তি।

০৪ ১৭

তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন জোয়াও। ধরেই নিয়েছিলেন বাঁচাতে পারবেন না। তবু ভাবলেন, এক বার চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কোথায়! তিনি প্রথমে পেঙ্গুইনের সারা দেহ পরিষ্কার করলেন। তার পর শুরু করলেন পরিচর্যা।

০৫ ১৭

জোয়াওয়ের চেষ্টায় ফল মিলল। দিন কয়েকের মধ্যে সুস্থ হতে শুরু করল তাঁর নতুন বন্ধু। তত দিনে সে পেয়েছে নিজের নাম। জোয়াও তাঁকে আদর করে ডাকেন, ‘ডিনডিম’। কোথাও কোথাও আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় সে ‘ডিমডিম’।

০৬ ১৭

তেলের প্রলেপে ডিনডিমের দেহ থেকে সব পালক খসে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে আবার নতুন পালক গজাতে শুরু করল। এগারো মাস তাকে নিজের কাছে রেখে যত্নআত্তি করলেন জোয়াও।

০৭ ১৭

তার মধ্যে অনেক বার চেষ্টা করলেন ডিনডিমকে আবার অতলান্তিক মহাসাগরে ফিরিয়ে দেওয়ার। যত বার তাকে জলের কাছে নিয়ে যান, সে আবার গুটিগুটি পায়ে ফিরে আসে।

০৮ ১৭

এ ভাবেই বেশ কাটছিল দিন। জোয়াও যেতেন মাছ ধরতে। কিছু মাছ বিক্রি করতেন। কিছু রাখতেন তাঁর আর ডিনডিমের জন্য। কিন্তু এক দিন সুর কাটল তাঁর সংসারে। হঠাৎই আবিষ্কার করলেন ডিমডিম তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।

০৯ ১৭

বুঝলেন, সে ফিরে গিয়েছে নিজের ঠিকানায়, আপনজনদের কাছে। হয়তো অপেক্ষা করছিল সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার জন্য। আত্মীয় পরিজন থেকে বন্ধু বান্ধব, সবাই বললেন, আর সে ফিরবে না।

১০ ১৭

কিন্তু ডিনডিম সবাইকে ভুল প্রমাণ করল। চার বছর পর সে ফিরে এল জোয়াওয়ের কাছে। তার পর থেকে ফি বছর চলছে এই প্রত্যাবর্তন।

১১ ১৭

প্রতি বছর জুন মাসে সে জোয়াওয়ের কাছে আসে। থাকে ফেব্রুয়ারি অবধি। তার পর আবার চলে যায় নিজের ঠিকানায়। প্রতি বছরের অর্ধেক তার কাটে জোয়াওয়ের ঘরে। তাকে নতুন জীবন দিয়েছিলেন যিনি, তাঁকে সে ভোলেনি।

১২ ১৭

ডিনডিম এলে জোয়াওয়ের কাজ অনেক বেড়ে যায়। ডিনডিম অন্য কাউকে পছন্দ করে না। জোয়াও তাকে সার্ডিন মাছ খাওয়ায়। কোলে তুলে নেয়। স্নান করিয়ে দেয়। জোয়াওকে দেখলে সে লেজ নাড়তে থাকে। শব্দ করতে থাকে মুখ দিয়ে।

১৩ ১৭

প্রাণীবিজ্ঞানীদের মতে, জোয়াওকে নিজের পরিবারের সদস্য বলে মনে করে ডিমডিম। তাই তার কাছে নিজেকে সবথেকে নিরাপদ বলে ভাবে। সাধারণত পেঙ্গুইনরা ২৫ বছর বয়স অবধি বাঁচে। দেখা গিয়েছে, তারা সারা জীবন নিজের সঙ্গীর প্রতি খুব বিশ্বস্ত থাকে।

১৪ ১৭

ডিনডিম কিন্তু দক্ষিণ মেরুর পেঙ্গুইন নয়। সে হল ম্যাগেলানিক পেঙ্গুইন। এই প্রজাতির বাস আর্জেন্তিনা, চিলে এবং ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের উপকূলীয় অংশে।

১৫ ১৭

১৫২০ খ্রিস্টাব্দে এই প্রজাতির পেঙ্গুইনকে প্রথম দেখেছিলেন পর্তুগিজ ভূপর্যটক ম্যাগেলান। তাঁর নামেই এদের নামকরণ করা হয়। দক্ষিণ আমেরিকার এই প্রায়-বিলুপ্ত ম্যাগেলানিক পেঙ্গুইনদের মধ্যে কিছু প্রাণী প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ে খাবারের খোঁজে আট হাজার কিমি দূরত্ব পাড়ি দিয়ে পৌঁছয় ব্রাজিলের উপকূলে।

১৬ ১৭

ডিনডিমও এ রকমই একটি পরিযায়ী পেঙ্গুইন। নিজের পরিযাণের পথে সে ঢাকা পড়েছিল তেলের প্রলেপে। হয়তো কোনও জাহাজ থেকে অসাবধানতায় সেই তেল বেরিয়ে মিশে গিয়েছিল সমুদ্রের জলে।

১৭ ১৭

বন্ধু মৎস্যজীবীর কাছে আসার জন্য প্রতি বছর পথ চিনে সে রিওর সৈকতের ওই বিশেষ জায়গায় ফিরে আসে। (ছবি: শাটারস্টক, আইস্টক এবং সোশ্যাল মিডিয়া)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement