কারাগার থেকে মসনদের দিকে যাত্রা ইব্রাহিমের

পরনে কালো স্যুট, সাদা শার্ট আর টাই। এই মাত্র জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। 

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

কুয়ালা লামপুর শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৮ ০১:৪৮
Share:

আনোয়ার ইব্রাহিম। —ফাইল চিত্র।

কুয়ালা লামপুরের রাস্তায় অধীর অপেক্ষায় মানুষ। মুঠো ছুড়ে চলছে স্লোগান। কিছু ক্ষণ আগে কালো এসইউভি গাড়িটা রওনা হয়েছে হাসপাতাল থেকে। এ বার সে’টি দেখা গেল। মানুষ উল্লাসে নেমে এল রাস্তায়। গাড়িটা দাঁড়িয়ে গেল। নেমে এল কালো কাচ। ভেতর থেকে হাত নাড়লেন আনোয়ার ইব্রাহিম (৭০), পাকাতান হারাপান (অ্যালায়েন্স অব হোপ)-এর প্রতিষ্ঠাতা, যে জোট সদ্য ক্ষমতায় এসেছে মালয়েশিয়ায়। পরনে কালো স্যুট, সাদা শার্ট আর টাই। এই মাত্র জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি।

Advertisement

সস্ত্রীক আনোয়ার চললেন রাজা পঞ্চম সুলতান মহম্মদের প্রাসাদে। গাড়ি থেকে নামতে এগিয়ে এসে স্বাগত জানালেন নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মহাথির মহম্মদ। আনোয়ারের হাত ধরলেন তিনি। পূর্ণ হল ইতিহাসের একটি বৃত্ত।

বছর কুড়ি আগে এই মহাথিরের উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর পদ ছেড়ে রাস্তায় নেমেছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম। মহাথিরের ইস্তফার দাবিতে গড়েছিলেন বিরোধী দলের জোট পাকাতান হারাপান। ১৯৯৯ সালে মহাথিরই জেলে পাঠিয়েছিলেন আনোয়ারকে। পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল সমকামের, আনোয়ার যা বারে বারে অস্বীকার করে এসেছেন। আদালত আনোয়ারের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে। ২০০৩-এ প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান এশিয়ার সব চেয়ে বেশি দিন, ২২ বছর নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী থাকা মহাথির। নাজিব রাজ়াককে প্রধানমন্ত্রী করে একচেটিয়া ক্ষমতা ধরে রাখে ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও)।

Advertisement

২০০৪-এ জেলের বাইরে এসে আইনি লড়াই শুরু করেন আনোয়ার। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হতে ২০০৮-এ ফের ভোটে দাঁড়িয়ে এমপি হন। কিন্তু পুরনো অভিযোগে সরকার ২০১৫-য় ফের বন্দি করে তাঁকে।

ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নাজিবের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে রাজকোষ থেকে কোটি কোটি ডলার সরিয়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর ইস্তফার দাবি যত তীব্র হয়েছে, নেমে এসেছে রা‌ষ্ট্রীয় নির্যাতন। ৬১ বছর টানা ক্ষমতায় থাকা ইউএনএমও-কে কোনও দিন গদিচ্যুত করা যাবে, ভাবাটাই যেন ছিল অবাস্তব।

এই পরিস্থিতিতে নিজের দলের সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামলেন ৯২ বছরের মহাথির মহম্মদ। এক দিন যে আনোয়ারকে জেলে ভরেছিলেন, তাঁর হয়েই নেতৃত্ব তুলে নিলেন পাকাতান হারাপান-এর। একটাই দাবি, ক্ষমতাচ্যুত করো নাজিব রাজ়াক সরকারকে। ভোটে জিতল পাকাতান হারামান। জোট ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে হল নবতিপর মহাথিরকেই। প্রতিশ্রুতি দিলেন— শীঘ্র মুক্ত করা হবে আনোয়ারকে। বছর দু’য়েকের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর আসনও ছেড়ে দেবেন তাঁকে।

মঙ্গলবার আনোয়ারকে নিঃশর্ত ভাবে ক্ষমা করার ঘোষণা করলেন রাজা। নিঃশর্ত, অর্থাৎ রাজনীতিতে ফিরতে বাধা নেই তাঁর। বাধা নেই পাকাতান হারাপান-এর নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হতেও। কারামুক্ত ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রীকে রাজার কাছে নিয়ে গেলেন নতুন প্রধানমন্ত্রীই, যিনি নিজের দায়িত্বকে অস্থায়ী বলে ঘোষণা করেছেন। রাজাকে জানিয়ে দিলেন আনোয়ার—দায়িত্ব নিতে তিনি তৈরি।

বুধবার নতুন ইতিহাসের অভ্যুদয় দেখল মালয়েশিয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন