সন্দেহভাজন যুবকের খোঁজ শুরু তাইল্যান্ডে

হলদে টি শার্ট আর কালো ফ্রেমের চশমা পরা এক যুবককে এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে তাইল্যান্ডের পুলিশ। ব্রহ্মা মন্দিরের সামনে জোরালো বিস্ফোরণের পরে কেটে গিয়েছে একটা আস্ত দিন। কিন্তু কে বা কারা এই বিস্ফোরণের পিছনে রয়েছে, তা এখনও পর্যন্ত জানতে পারেনি পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১০
Share:

মোমের আলোয় নিহতদের স্মরণ। ব্যাঙ্ককে মঙ্গলবার। ছবি: এ পি

হলদে টি শার্ট আর কালো ফ্রেমের চশমা পরা এক যুবককে এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে তাইল্যান্ডের পুলিশ। ব্রহ্মা মন্দিরের সামনে জোরালো বিস্ফোরণের পরে কেটে গিয়েছে একটা আস্ত দিন। কিন্তু কে বা কারা এই বিস্ফোরণের পিছনে রয়েছে, তা এখনও পর্যন্ত জানতে পারেনি পুলিশ। তাদের হাতে সূত্র বলতে সিসিটিভি ফুটেজের কিছু অংশ।

Advertisement

কাল সন্ধেয় রাচাপ্রাসঙের ব্যস্ত রাস্তায় বিস্ফোরণের ঠিক আগে এক বার দেখা গিয়েছিল ওই যুবককে। পরনে টি শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। পিঠে একটা কালো ব্যাগ। ব্রহ্মা মন্দিরের সামনে একটি বেঞ্চের তলায় ব্যাগটা রেখে দ্রুত ওই জায়গা থেকে সরে যেতে দেখা গিয়েছে তাকে। পুলিশ নিশ্চিত ওই ব্যাগে বিস্ফোরকই ছিল, সেটাই মন্দিরের সামনে রাখতে এসেছিল সে। আর তার সেই গতিবিধির ছবিই ক্যামেরাবন্দি হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ও-চা আজ একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ওই যুবকই মূল সন্দেহভাজন। তাকে ধরতে পারলেই বিস্ফোরণ রহস্যের সমাধান হবে বলেও দাবি করেছেন প্রায়ুত। ওই যুবককে ধরতে তাই এখন দেশ জুড়ে জোরকদমে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। শুধু তা-ই নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে ওই যুবকের ছবি।

দক্ষিণের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা গোটা ঘটনার পিছনে রয়েছে বলে প্রথম দিকে জানিয়েছিল তাই সরকার। কিন্তু আজ সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। উল্টে তিনি জানিয়েছেন, ব্যাঙ্ককের উপর হামলা হতে পারে বলে ফেসবুকে যে পোস্ট করা হয়েছিল, তার পিছনে রয়েছে উত্তর-পূর্বের শাসক বিরোধী গোষ্ঠী। ফলে এই হামলার পিছনেও তারা থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে সরকার। কিছু দিন আগে শতাধিক উইঘুরকে কার্যত জোর করে চিনে ফেরত পাঠিয়েছে তাই সরকার। প্রতিশোধ নিতে তারাও বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে বলেও সন্দেহ করছে পুলিশ। তারা আরও জানিয়েছে, কালকের বিস্ফোরণে ২৭ নয়, মারা গিয়েছেন ২০ জন। আহতের সংখ্যা ১২৩।

Advertisement

কালকের পরে সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ দিকে, আজই আবার একটা ছোটখাটো বিস্ফোরণ হয়েছে ব্যাঙ্ককে। পুলিশ জানিয়েছে, আজ বিকেলের দিকে থাকসিন সেতু থেকে বিস্ফোরক ছুড়ে দেয় কে বা কারা। চাও ফ্রায়া নদীতে ওই বিস্ফোরক পড়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে বিস্ফোরণের জেরে আজ উড়ে গিয়েছে সাথর্ন জেটির খানিকটা অংশ।

তবে ব্যাঙ্ককের বিস্ফোরণের প্রভাব পড়েনি কলকাতার পর্যটকদের উপর। কাল সন্ধেয় বিস্ফোরণের খবর পাওয়ার পরেও রাত পৌনে ন’টায় কলকাতা থেকে ব্যাঙ্কক উড়ে গিয়েছে ইন্ডিগোর বিমান। রাত বারোটায় স্পাইস এবং রাত দু’টোয় তাই এয়ারওয়েজের বিমানও উড়ে গিয়েছে ব্যাঙ্কক। শুধু তাই সংস্থার উড়ান ধরতে দশ জন যাত্রী আসেননি। বাকি উড়ানগুলির কোনও যাত্রীই তাঁদের টিকিট বাতিল করেননি বলে বিমান সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে।

কলকাতায় তাই বিমান সংস্থার কর্তা ভিচায়া সিংতোরেজ মঙ্গলবার জানান, তাঁদের উড়ানে প্রায় প্রতিদিনই কয়েক জন যাত্রী শেষ মূহূর্তে যাত্রা বাতিল করেন। তাঁর দাবি, ব্যাঙ্কক বিস্ফোরণের সঙ্গে সোমবার রাতের ওই দশ যাত্রীর টিকিট বাতিলের কোনও সম্পর্ক নেই।

ট্রাভেল এজেন্ট ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া-র পূর্বাঞ্চলের কর্তা অনিল পাঞ্জাবির কথায়, ‘‘এখন বিমানে গড়ে ৭৫ শতাংশ যাত্রী হচ্ছে। পুজোয় তিল ধারণের জায়গা নেই। সোমবারের ঘটনার পরেও কিন্তু কেউ পুজোর টিকিট বাতিল করছেন না। অনেক আগে থেকেই বেড়ানোর পরিকল্পনা করে রেখেছেন তাঁরা। এখন টিকিট বাতিল করলে অনেক লোকসানও হবে।’’ দিল্লি থেকে স্পাইসজেটের কর্তা অজয় জসরা জানালেন, টিকিট বাতিলের আশঙ্কা তাঁদেরও হয়েছিল। কিন্তু দিল্লি ও কলকাতা থেকে তাঁদের যে দু’টি উড়ান ব্যাঙ্কক যায় তার একটি টিকিটও বাতিল হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘একটা বিস্ফোরণে ভারতবর্ষের মানুষ এখন আর ঘাবড়ান না। আমরা তো অনেক বিস্ফোরণ দেখে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন