মিশর, মমি, রহস্য সব কিছু মিলেমিশে চলে। এ বার ইঁদুরের মমি ঘিরে রহস্য ঘনীভূত মিশরে।
মিশরের প্রাচীন টলেমি সাম্রাজ্যের আমলের প্রায় ৫০টি পশুর মমির খোঁজ মিলল সম্প্রতি। সযত্নে রক্ষা করা এই সমাধিক্ষেত্র থেকে মিলেছে দু’হাজার বছরের প্রাচীন এই মমি।
৩০ খ্রিস্টপূর্বে রোমানরা আসার আগে পর্যন্ত ৩০০ বছর স্থায়িত্ব ছিল এই টলেমি সাম্রাজ্যের।
টলেমির সময়কার এই সমাধি টুটু নামে এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রীর বলে জানিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। ২০১৮ সালের অক্টোবরে এই সমাধিক্ষেত্র আবিষ্কার হয়েছিল মিশরের সোহাগে।
এর পর থেকেই শুরু হয় চোরাচালানকারীদের হামলা। সমাধিক্ষেত্রে চুরির চেষ্টা হয় একাধিকবার। (প্রতীকী ছবি)
চমৎকার চিত্রকলাও রয়েছে মমির আচ্ছাদনে। প্রাচীন মিশরীয় লিপি হায়ারোগ্লিফিক্সে লেখা রয়েছে সে সব।
অসাধারণ রঙিন এই সমাধি, এমনটাই বলছেন সুপ্রিম কাউন্সিল অব অ্যান্টিকুইটিসের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা ওয়াজিরি। কিন্তু ইঁদুর কোথা থেকে এল?
সোহাগ শহর ছিল প্রাচীন মিশরের অন্যতম সমৃদ্ধশালী জায়গা। কায়রো থেকে ৩৮৬ কিলোমিটার দূরে নীল নদের কাছের এই শহরে রয়েছে একটি সংগ্রহশালাও। সেটিতে সম্প্রতি প্রদর্শনীও হয়েছে।
সমাধিক্ষেত্র থেকে ইঁদুর বাজ পাখি-সহ প্রায় ৫০টি প্রাণীর মমি পাওয়া গিয়েছে। এতেই ঘনীভূত রহস্য।
সমাধিক্ষেত্রের দেওয়ালে অন্ত্যেষ্টির ছবি আঁকা। রয়েছে টুটুর খেতে কাজ করার ছবিও। ছবিতে আঁকা রয়েছে তাঁর পারিবারিক ইতিহাসও।
সমাধিক্ষেত্রে দু’টি পাথরের সমাধি রয়েছে। টুটু ও তাঁ স্ত্রী টা-শিরিত-ইজিজের মমিতে রয়েছে অসংখ্য উপহার। এমনকি মৃত্যুর পরবর্তী জীবন সংক্রান্ত বইও রয়েছে।
প্রাচীন মিশরে বিড়ালের প্রতি ভালবাসা ছিল। কিন্তু সেখানে এক ব্যক্তির সমাধিতে বিড়ালকে বাদ দিয়ে ইঁদুর ও বাজ পাখি কেন? এ নিয়েই গবেষণা করছেন ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা।
তাঁরা বলছেন, প্রাচীন মিশরে ইঁদুরকে প্রাথমিক ভাবে কুসংস্কারের প্রতীক বলে ধরা হত। কেউ বলতেন, এরা ‘শয়তানের চর।’ কৃষিকাজ শুরু হওয়ায় ইঁদুর, পোকামাকড় ফসলের ক্ষতি করত। তাই এদের দানব বলেও উল্লেখ করা হয়েছে মিশরের পবিত্র ধর্মগ্রন্থে, বলছেন ইতিহাসবিদদের একাংশ।
আরেক দল বলছেন, ইঁদুর আসলে পবিত্র। প্রাচীন মিশরে কেউ কেউ দেবতা হিসাবেও পুজো করত ইঁদুরদের। কোনটা ঠিক আর কোনটা নয়, তা নিয়ে চলছে গবেষণা। তবে এতগুলো ইঁদুরের মমি এক সঙ্গে আবিষ্কার হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ঘনাচ্ছে রহস্য।