মায়ানমারে ধর্মীয় উৎসবে বিস্ফোরণ। ছবি: সংগৃহীত।
মায়ানমারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উৎসবে বিস্ফোরণের পর ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও চাউং উ শহরের চারদিকে ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দেহাংশ। কোথাও দগ্ধ দেহ, কোথাও আবার ধড় থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া হাত, পা পড়ে রয়েছে এখানে ওখানে। সরকারি হিসাবে এখনও পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৪০, গুরুতর জখম আরও ৪৭ জন। যদিও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তরফে দাবি করা হয়েছে, নিহতের সংখ্যা আরও বেশি।
মায়ানমারের নির্বাসিত সরকারের এক মুখপাত্র সংবাদমাধ্যম বিবিসি-কে জানিয়েছেন, সোমবার রাতে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সাগিয়াং প্রদেশের মধ্যাঞ্চলের চাউং উতে কয়েকশো মানুষ থাদিংগ্যুত পূর্ণিমা উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। আচমকা সেখানে একটি মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডার থেকে ভিড়ের উপর পর পর দু’টি বোমা ফেলা হয়। প্রবল বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে চারদিক। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বহু মানুষের।
এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘সবটা মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে ঘটে যায়। আমি নিজে কোনও মতে বেঁচে গেলেও আমার আশপাশে যাঁরা ছিলেন, প্রায় সকলেই মারা যান।’’ বিস্ফোরণে পায়ে চোট লেগেছে ওই মহিলার। এখনও চিকিৎসা চলছে তাঁর। স্থানীয়েরা বিবিসি-কে জানিয়েছেন, ঘটনার পর মৃতদেহগুলি শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগেরই দেহ সম্পূর্ণ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। মঙ্গলবার গণশেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এখনও এলাকায় ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে চাপ চাপ রক্ত, দেহাংশ। সেগুলি সংগ্রহের কাজ চলছে।
এর আগেও মায়ানমারের রাখাইন ও কাচিন প্রদেশে এবং সশস্ত্র বিদ্রোহী বাহিনী কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ)-র ডেরায় প্যারাগ্লাইডার হামলা চালিয়েছিল মায়ানমার সেনা। তাতেও বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২১ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে সে দেশে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কয়েক লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে মায়ানমারের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিলে নতুন জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ গড়ে সামরিক জুন্টার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। সম্প্রতি ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ) শান্তিচুক্তি করলেও পরবর্তী সময়ে জুন্টা-বিরোধী যুদ্ধে শামিল হওয়া ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), ‘কাচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স’ (কেএলডিএফ) এবং সু চির সমর্থক স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’-এর সশস্ত্র বাহিনী ‘পিপল্স ডিফেন্স ফোর্স’ (পিডিএফ) এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে সামরিক জুন্টা সরকার সম্প্রতি পার্লামেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করে গণতন্ত্র পুনর্বহালের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ডিসেম্বরে মায়ানমারে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথাও রয়েছে। তার আগে সোমবার রাতে যে এলাকায় হামলা হয়, তা পিডিএফ-এর নিয়ন্ত্রণাধীন। ফলে ওই হামলার পর স্বাভাবিক ভাবেই মায়ানমারের জুন্টা সরকারের সেনার বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়েছে।