UNSC

চিনের প্রাচীর ভেঙে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী’ তালিকায় মাসুদ, কোন পথে এল ভারতের সাফল্য

কখনও তারা বলেছে, আলোচনার মাধ্যমে সব দেশের ঐকমত্য ছাড়া এই প্রস্তাবে সায় দেওয়া সম্ভব নয়। কার্যত ঠান্ডা অথচ ইস্পাত কঠিন মানসিকতায় প্রতিবারই নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকেছে চিন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন কলকাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৯ ২১:৩৭
Share:

চিনের বাধা কাটিয়ে মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ঘোষণায় সাফল্য ভারতের। —ফাইল চিত্র

১৯৯৯ থেকে ২০১৯। দেরিতে হলেও অবশেষে সাফল্য ভারতের। রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হল জইশ-ই-মহম্মদের চাঁই মাসুদ আজহার। প্রায় দু’দশকের এই যাত্রাপথ অবশ্য কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। এক দিকে ছিল চিনের বাধা। তার সঙ্গে সারা বিশ্বকে ভারতের পক্ষে একজোট করা। এত দিন এই দুই পথে চেষ্টা চলছিলই। তার সঙ্গে পুলওয়ামায় জঙ্গি হানা ভারতের হাতে তুলে দেয় শেষ অস্ত্র। তার সূত্র ধরেই রাষ্ট্রপুঞ্জকে দিয়ে আজহারের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দিল নয়াদিল্লি। বিশ্ব জোড়া চাপের কাছে ড্রাগনরা নতিস্বীকার করল বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

প্রথম তৎপরতা শুরু হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। ওই সময়ই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী’ চিহ্নিতকরণ কমিটি তৈরি করে। ওই কমিটির মাধ্যমেই এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় তালিবান জঙ্গি গোষ্ঠী। আর তার সঙ্গেই আলোচনায় উঠে আসে জইশ-ই-মহম্মদ গোষ্ঠীর নাম। আর তার প্রধান হিসেবে মাসুদ আজহারকে কালো তালিকাভুক্ত করার ব্যাপারে আলোচনা হয়।

কিন্তু অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় সেই বেজিং। শুধু তখনই নয়, গত দু’দশকে বেশ কয়েক বার এই প্রস্তাব উঠেছে। কিন্তু প্রতি বারই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে ভেটো দিয়ে এসেছে চিন। কখনও যুক্তি দিয়েছে, মাসুদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ নেই। কখনও তারা বলেছে, আলোচনার মাধ্যমে সব দেশের ঐকমত্য ছাড়া এই প্রস্তাবে সায় দেওয়া সম্ভব নয়। কার্যত ঠান্ডা অথচ ইস্পাত কঠিন মানসিকতায় প্রতিবারই নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকেছে চিন।

Advertisement

তাহলে এ বার কি এমন যাদুমন্ত্রে সেই ড্রাগনরাই বশে এল? এর উত্তরে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা প্রধান কারণ হিসেবে তুলে এনেছেন পুলওয়ামা। যার সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হানার মধ্যে দিয়ে। ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যুর নেপথ্যে জড়িয়ে যায় মাসুদের নেতৃত্বে জইশের নাম। হাতে কার্যত ব্রহ্মাস্ত্র পেয়ে যায় নয়াদিল্লি। তার পর থেকেই কূটনৈতিক স্তরে ঠান্ডা যুদ্ধ আরম্ভ করে দিয়েছিল ভারত। চিন-পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক মহলকে নিজেদের পক্ষে তথা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একজোট করার চেষ্টা।

আরও পড়ুন: ভারতের বিপুল কূটনৈতিক জয়, অবশেষে রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী তালিকায় মাসুদ

পুলওয়ামা হামলার পরই একাধিক কূটনৈতিক চ্যানেলে দৌত্য শুরু করে সাউথ ব্লক। প্রথমত, পশ্চিমী দুনিয়ায় ক্ষমতাধর দেশগুলির অন্যতম আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্সকে পুলওয়ামা হামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ নথিপত্র (ডোসিয়ের) প্রতিনিয়ত তুলে দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। বহু দেশে সফর করেছন বিদেশ মন্ত্রক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে কূটনীতিকরা। রাষ্ট্রপুঞ্জকে এবং তার সব সদস্য দেশকেও সেই সব নথিপত্র দেওয়া হয়েছে। সেখানে বড় ভূমিকা নিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ আকবরউদ্দিন। নয়াদিল্লির প্রচেষ্টা ছিল, এমন পরিস্থিতি তৈরি করা যাতে, ভারত নিজে কম বলবে, কিন্তু তাদের পক্ষে সওয়াল করবে রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্য দেশগুলি। শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে।

আরও পডু়ন: উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ফণী, কালকের মধ্যে পুরী ছাড়ার নির্দেশ পর্যটকদের

সেই প্রচেষ্টায় ভারত যে সফল হয়েছে, তার প্রমাণ আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের এক যোগে রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রস্তাব আনা। মার্চের গোড়ায় সেই প্রস্তাবে যদিও চিনা ড্রাগনরা পুরনো দাঁত-নখই বের করে ফেলেছিল। তার পরই শুরু হয় চাপের খেলা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কার্যত বয়কটের রাস্তায় যাওয়ার হুমকি দেয় ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং আমেরিকা। তাতে বরফ কিছুটা গলে। সমান্তরাল ভাবে চলতে থাকে পাকিস্তানের সঙ্গত্যাগ করার প্রচেষ্টাও। চিন পাকিস্তানের সব পরিবেশের বন্ধু হলেও এটা বোঝানো শুরু হয় যে, সেই বন্ধুর জন্যই বিশ্ববাসীর থেকে একঘরে হতে হবে। এই সাঁড়াশি চাপ বেজিংয়ের উপর এতটাই চেপে বসে যে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হয় শি জিনপিং সরকারও।

এবং শেষ পর্যন্ত ভাঙল চিনের প্রাচীর। আর সুফল ঘরে তুলল ভারত। ফের কোণঠাসা হয়ে পড়ল পাকিস্তান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন