রাধিকা ভরদ্বাজ এবং বোন কৃষ্ণপ্রিয়া। অস্ট্রেলিয়াবাসী ১৪ এবং ১০ বছরের এই দুই খুদে তাদের কাজের সুবাদে তারকা হয়ে উঠেছে। এই বয়সেই নিজেরা রান্না করে বিপদে পড়া হাজার হাজার মানুষকে খাওয়াচ্ছে তারা!
করোনায় ধুঁকতে থাকা ভারতের জন্যও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল এই দুই বোন। সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় বসে ভারতে অক্সিজেন পাঠাচ্ছে তারা।
অস্ট্রেলিয়ার টুউম্বাতে মা-বাবার সঙ্গে থাকে তারা। সেখানেই তাদের জন্ম, পড়াশোনা।
রাধিকা ছোট থেকেই খাওয়াতে ভালবাসে। তাই নানারকম সুস্বাদু রান্নার প্রতিও তার খুব আগ্রহ।
মাত্র ১১ বছর বয়সে ‘রাধিকা’স কুকবুক’ নামে একটি রান্নার বইও লিখে ফেলেছে সে।
বেকিং, ফ্রাইং, প্যান কুকিং, রোস্টিং- সমস্ত ধরণের প্রক্রিয়াতে খাবার বানাতেই কুশলী রাধিকা।
টুউম্বাতে তার কমিউনিটির কোনও জমায়েতেও মা-বাবা তাকে সব সময় কিছু না কিছু রান্না করতে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। এত কম বয়সেই সে নিমেষে দু’তিনশো জনের রান্না করে ফেলতে পারে।
তার উপর দুই বোন ছোট থেকেই জনদরদী। বিপদে থাকা মানুষজনের পাশে সব সময় তাদের পাওয়া যায়। এই গুণ অবশ্য তাদের রক্তে মিশে রয়েছে। তাদের মা-বাবাও এ ভাবেই মানুষের পাশে থাকতে ভালবাসেন।
উদার মানসিকতার জন্য রাধিকা বরাবরই অস্ট্রেলিয়ার টুউম্বার মানুষের কাছে তারকা। ২০১৯ সালের ঘটনা তাকে সারা বিশ্বের নজরে এনে ফেলে।
ওই বছর ভয়ঙ্কর দাবানলের মুখে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়ার একাংশ। দিনরাত এক করে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে রক্ষা করতে থাকা দমকলকর্মীদের জন্য সে এবং তার পরিবার রোজ খাবার বানিয়ে আনতে শুরু করে।
সেই দিন থেকেই ভরদ্বাজ পরিবারের নাম ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। বিশেষ করে ভরদ্বাজ পরিবারের খুঁদে দুই সদস্য রাধিকা এবং তার বোন কৃষ্ণপ্রিয়া বিপুল প্রশংসিত হয়।
রোজ রাতে মা-বাবার সঙ্গে দমকলকর্মী, চিকিৎসকদের জন্য খাবার বানাত রাধিকা। বোন কৃষ্ণপ্রিয়াও দিদিকে সাহায্য করত। রান্নার পর সেগুলিকে ঠান্ডা ঘরে রেখে দিত এবং পর দিন সকাল হলেই প্যাক করে গাড়িতে তুলে পৌঁছে যেত তাঁদের কাছে।
আম লস্যি, ডাল-চাল দিয়ে খিচুড়ি যে এত সুস্বাদু হতে পারে না তা খেলে বোধ হয় জানতেই পারতেন না অস্ট্রেলিয়ার মানুষজন।
সে সময় সব মিলিয়ে মোট ১৩ হাজার দমকলকর্মী এবং আহত বা নিহতদের পরিবারের সদস্যদের খাইয়েছে তারা। অতিমারির আবহেও এই জনসেবা চালু রেখেছে দুই বোন।
ক্যুইন্সল্যান্ড হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদেরও এখন রোজ খাবার পৌঁছে দেয় তারা। এ বার সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে ভারতের দিকে। দিল্লিতে তাদের পরিবারের সদস্যেরা এখনও থাকেন। তাঁদের মুখ থেকেই দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা শুনেছে দু’জনে। তার পরই মা-বাবার কাছে সাহায্যের ইচ্ছা জানায়।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতকে সাহায্য করতে ১ লাখ ডলার জোগারের চেষ্টা শুরু করেছে তারা। ইতিমধ্যে ২৪ হাজার ডলার সংগ্রহ করেও ফেলেছে দু’জনে। এই টাকায় ভারতের জন্য অক্সিজেন কনসেনট্রেটর অর্ডার দিয়েছে।
দুই বোন স্বপ্ন দেখে রাষ্ট্রপুঞ্জের দূত হওয়ার। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবেশের উপর তার প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করবে মানুষজনকে।