মধ্যবর্তী নির্বাচন

এক অভিবাসী মায়ের জন্য এ বড় কঠিন সময়

২০১৬-র নির্বাচনের সময়ে রিপাবলিকান পার্টি তাদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর বাক্যবাণ ও কীর্তিকলাপ এবং দলীয় ভাবমূর্তির উপর সে সবের প্রভাব নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু গত দু’বছরে ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির প্রায় সমস্ত রাজনীতিককেই তাঁর আশ্রয়প্রার্থী করে তুলতে পেরেছেন।

Advertisement

মৃত্তিকা সেন

নিউ জার্সি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১১
Share:

মঙ্গলবারের নির্বাচন শুধু এই প্রজন্মের জন্যই নয়, আগামী কয়েকটি প্রজন্মের জন্যও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কেন, তা ইতিমধ্যে বহুচর্চিত। তবু এক কথায় বলতে গেলে উত্তরটা হচ্ছে— ট্রাম্প! আমেরিকার ইতিহাসে এর আগে কখনও এক জন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এ ভাবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন বলে মনে পড়ছে না।

Advertisement

২০১৬-র নির্বাচনের সময়ে রিপাবলিকান পার্টি তাদের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর বাক্যবাণ ও কীর্তিকলাপ এবং দলীয় ভাবমূর্তির উপর সে সবের প্রভাব নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু গত দু’বছরে ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টির প্রায় সমস্ত রাজনীতিককেই তাঁর আশ্রয়প্রার্থী করে তুলতে পেরেছেন। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হয়তো টেক্সাসের সেনেটর টেড ক্রুজ়। যিনি এ বছর পুনর্নির্বাচনের জন্য লড়ছেন। ২০১৬-তে ক্রুজ় প্রেসিডেন্ট পদের জন্য ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তখন ক্রুজ়ের স্ত্রীকে বিশ্রী ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন ট্রাম্প। এমনকি এ-ও বলেছিলেন যে, ক্রুজ়ের বাবা নাকি প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকারী! এ হেন ক্রুজ়কেও প্রচারের জন্য ট্রাম্পের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। তাঁর বিপক্ষে এ বার এক তরুণ তুর্কি ডেমোক্র্যাট বেটো ও’রোর্ক। বুথফেরত সমীক্ষায় ক্রুজ় সামান্য এগিয়ে রয়েছেন। একই ভাবে আমেরিকার অনেক রাজ্যের রিপাবলিকানরাই এ বার ভোট টানতে প্রচারে ট্রাম্পের শরণাপন্ন।

সব মিলিয়ে, আমেরিকায় প্রথম এত মহিলা প্রার্থী কোনও নির্বাচনে লড়ছেন। একই কথা প্রযোজ্য মুসলিম

Advertisement

প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও। যে দেশে হিলারি ক্লিন্টনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত না হওয়ার অন্যতম কারণ তিনি মহিলা এবং যেখানে আজও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মুসলিম পিতাকে নিয়ে কটাক্ষ করা হয়, সেখানে এটি

নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন।

আশা দেখাচ্ছেন নিউ ইয়র্ক থেকে

ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস প্রার্থী আলেকজ়ান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-কোর্তেজ়

যাঁর সমাজতান্ত্রিক মনোভাব মনে করিয়ে দিচ্ছে বার্নি স্যান্ডার্সের কথা। ওকাসিয়ো-কোর্তেজ় নিউ ইয়র্কের বর্তমান ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যানকে প্রাইমারিতে হারিয়ে দিয়েছেন। তিনি এবং ডেট্রয়েটের মুসলিম প্রার্থী রশিদা তলিব ডেমোক্র্যাটদের পালে নতুন হাওয়া আনবেন বলেই মনে হয়।

ডেমোক্র্যাটদের সামনে চ্যালেঞ্জটা ঠিক কী? ‘আইডেন্টিটি পলিটিক্স’-এর দৌলতে তারা নিজেদের এত ভাবে ভাগ করে ফেলেছে যে একই ছাতার তলায় সব সমর্থককে নিয়ে আসা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তাই আদর্শগত মিল থাকা সত্ত্বেও তাদের বার্তা অধিকাংশ সময়ে বিক্ষিপ্ত এবং ক্ষেত্রবিশেষে অসংলগ্ন হয়ে পড়েছে। ডেমোক্র্যাটদের বহু সমর্থক শিক্ষিত ও শহুরে। তাই তাঁরা হয়তো আরও বিশেষ ভাবে খুঁটিয়ে দেখছেন ডেমোক্র্যাটদের অবস্থান ও বার্তাকে। অন্য দিকে, ট্রাম্পের একমাত্রিক জাতীয়তাবাদী ও বিদ্বেষমূলক বার্তা আর্কষণ করছে তুলনায় ‘কম শিক্ষিত’ ও সহজে প্রভাবিত হয়ে যাওয়া সমর্থকদের।

ট্রাম্প নামক ঝড় শুধু আমেরিকা কেন, গোটা বিশ্বকে এক অদ্ভুত টালমাটাল অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। সাম্প্রতিক কালে সারা বিশ্বে আমরা এক চরম দক্ষিণপন্থী রাজনীতির উত্থান দেখছি, যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হল ব্রাজিল। ট্রাম্প নিজে এই কট্টরপন্থা, এই অসহিষ্ণুতা, এই অমর্যাদার জন্ম দেননি, তাকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছেন শুধু। তিনি দেখিয়েছেন বিভাজন বাঞ্ছনীয়, দেশে-দেশে, স্তরে-স্তরে, চামড়ায়-চামড়ায় এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক অবস্থানে!

এক জন অভিবাসী হিসেবে, এক জন নারী হিসেবে, এক জন মা হিসেবে এবং এক জন মানুষ হিসেবে যা আমায় আমূল নাড়িয়ে দিয়েছে তা হল, মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে ব্রেট ক্যাভানার নির্বাচন এ দেশের আইন ব্যবস্থাকে নির্লজ্জ ভাবে কট্টরপন্থী করে তুলেছে। এর পর বাকি শুধু কংগ্রেসের সেনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা। যেখানে এক মুহূর্তে নির্ধারিত হতে পারে আমার কর্মক্ষমতা, আমার ঠিকানা, আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ। নির্ধারিত হতে পারে অসংখ্য অসুস্থ মানুষের জীবন। প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁদের জন্য তৈরি করেছিলেন ‘অ্যাফর্ডেব্‌ল কেয়ার অ্যাক্ট’, রিপাবলিকানরা যেটিকে সমাজতান্ত্রিক বলে কটাক্ষ করেছিলেন এবং ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরেই তাকে কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছেন।

এ বড় কঠিন সময়ে বাস করছি আমরা। এই সময়ের বিষবৃক্ষ হয়তো গোপনে বাড়ছিল। কিন্তু রাজনীতি থেকে নীতিবাদ গিয়ে যখন তা হয়ে ওঠে শুধু রাজার ক্ষমতাপ্রদর্শনের মঞ্চ, তখন তার ফল ভোগে আগামী সময়।

এই নির্বাচন তাই শুধু ডেমোক্র্যাট নয়, যে কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের অস্তিত্বের লড়াই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন